সিমেন্ট উদ্যোক্তারা বাড়তি শুল্ক থেকে অব্যাহতি চান

স্টাফ রিপোর্টার

সিমেন্ট শিল্প বড় ধরনের সংকটে পড়েছে এবং এর অন্যতম কারণ, কাঁচামাল আমদানিতে অতিরিক্ত শুল্ক। অন্যদিকে বিভিন্ন কাঁচামালের যে আমদানি মূল্য ধরে শুল্কায়ন করা হচ্ছে, প্রকৃতপক্ষে আমদানি মূল্য তার চেয়ে কম। বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএমএ) গতকাল জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সঙ্গে বৈঠক করে এসব বিষয়ে সমাধান চেয়েছে। সংগঠনটি এনবিআরকে চিঠি দিয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়, সিমেন্ট উৎপাদনকারীরা দীর্ঘদিন ধরে এ শিল্পের প্রধান কাঁচামাল ক্লিংকারের ওপর কাস্টমস ডিউটি প্রতি টন ৫০০ টাকা থেকে কমিয়ে ২০০ টাকা নির্ধারণের জন্য যৌক্তিকভাবে অনুরোধ করে আসছে। কিন্তু বর্তমান বাজেটে না কমিয়ে উল্টো বাড়িয়ে ৭০০ টাকা হারে আদায় করা হচ্ছে। কোনো শিল্পের প্রধান কাঁচামালের ওপর কাস্টমস ডিউটি সাধারণত আমদানি মূল্যের প্রায় ৫ শতাংশ হয়। কিন্তু ক্লিংকারে এর পরিমাণ আমদানি মূল্যের ১৪ শতাংশের বেশি। প্রতি টন ২০০ টাকা হলে পরিমাণ দাঁড়ায় আমদানি মূল্যের ৪ শতাংশের বেশি, যা অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত। এ পরিস্থিতিতে সংগঠনটি ক্লিংকারের আমদানি শুল্ক টনপ্রতি ২০০ টাকা নির্ধারণের অনুরোধ জানিয়েছে।

বৈঠকে বিএসএমএ জানায়, সিমেন্ট শিল্পের কাঁচামাল প্রায় শতভাগই আমদানি করতে হয়। কিন্তু অনেক দিন ধরে আমদানি মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি মূল্য ধরে কাঁচামাল শুল্কায়ন করা হচ্ছে। যেমন– ক্লিংকারের আমদানি মূল্য এখন টনপ্রতি ৪৩ থেকে ৪৫ ডলার। কাস্টমস শুল্কায়ন করছে ৬০ ডলার ধরে। স্লাগ ও জিপসামেও একইভাবে বাড়তি মূল্য ধরে শুল্কায়ন করছে। তারা শুল্কায়ন মূল্য কমানোর দাবি করেন।

চিঠিতে বলা হয়, বর্তমানে আমদানি পর্যায়ে ক্লিংকারে ২ শতাংশ, স্লাগে ৩ শতাংশ, ফ্লাই অ্যাশে ৩ শতাংশ এবং জিপসামে ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর বা এআইটি ধার্য করা হচ্ছে। বিসিএমএ দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছে, আমদানি পর্যায়ে এআইটি প্রাথমিকভাবে সর্বোচ্চ শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ ধার্য করা যেতে পারে। কিন্তু কোনো ক্রমেই চূড়ান্ত দায় হিসেবে বিবেচনা করা সমীচীন হবে না।

এ ছাড়া বিক্রয় পর্যায়ে ২ শতাংশ এআইটি হারে ধার্য করা হচ্ছে এবং চূড়ান্ত দায় হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রেও শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ নির্ধারণের দাবি করেছেন উদ্যোক্তারা। এ ছাড়া তারা মনে করেন, আমদানি পর্যায়ে কাঁচামালের ওপর এআইটি দেওয়ার পর বিক্রয় পর্যায়ের আবার ধার্য করা দ্বৈত করের শামিল। এআইটিকে চূড়ান্ত দায় হিসেবে গণ্য করার কারণে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানকে লোকসান করার পরও আয়কর দিতে হচ্ছে।

এনবিআরকে দেওয়া চিঠিতে আরও বলা হয়, সিমেন্ট শিল্পে বর্তমানে চরম সংকটাবস্থা বিরাজ করছে। বৈদেশিক মুদ্রার সংকট; আমদানির নিমিত্তে ঋণপত্র খুলতে জটিলতা, জ্বালানি তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতে ব্যয় বৃদ্ধি এবং চাহিদা কমে যাওয়া এ শিল্পের বর্তমান সংকটের অন্যতম কারণ।

বিসিএমএ সভাপতি আলমগীর কবির জানান, বাড়তি দামে শুল্কায়ন হওয়ার কারণে ভ্যাট ও এআইটির পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। এতে স্বাভাবিকভাবেই তাদের ব্যাংক ঋণ বেড়ে যাচ্ছে। পণ্যমূল্য বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে বাজারে চাহিদা কমছে। বর্তমান সময়ে সরকারি অবকাঠামো তৈরির কাজ অর্ধেকে নেমে এসেছে। মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার কারণে বেসরকারি খাতে সিমেন্টের চাহিদা কমেছে। বর্তমান অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে বৈদেশিক মুদ্রা অতি প্রয়োজনীয় অথচ কাস্টমস কর্তৃপক্ষের ভুল নীতির কারণে অতিরিক্ত শুল্কায়নের সুযোগে ডলার পাচারের আশঙ্কা রয়েছে।

তিনি বলেন, লাইম স্টোনে শুল্কায়ন দেরি হওয়ার কারণে বৈদেশিক জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরের আউটার অ্যাংকরেজে অতিরিক্ত সময় অপেক্ষা করতে হয় বিধায় বৈদেশিক মুদ্রায় ক্ষতিপূরণ দিতে হয়, যা পণ্যমূল্যের ওপর প্রভাব পড়ে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *