ব্রিকস ব্যাংকে যোগ দেওয়ার চুক্তিতে মন্ত্রিসভার সায়
ব্রাজিল, রাশিয়া, ইন্ডিয়া, চীন এবং দক্ষিণ আফ্রিকা (ব্রিকস) এর উদ্যোগে গঠিত নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকে (এনডিবি) যোগ দিতে বাংলাদেশ আরও এক ধাপ এগিয়ে গেলো। ‘এগ্রিমেন্ট অন দ্য নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক’ শীর্ষক একটি চুক্তিতে অনুসমর্থন দিয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা।
সংশ্লিস্ট সূত্রে জানা গেছে, অন্যান্য আন্তর্জাতিক মাল্টিন্যাশনাল ব্যাংকগুলোর সমান্তরালে আরেকটি ব্যাংক করা হচ্ছে। উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সহযোগিতা করার জন্য ব্যাংকটি করা হচ্ছে। বিকল্প মুদ্রার মাধ্যমে যেন কাজ করতে পারে সেটি নিয়েও তারা কাজ করছে। বাংলাদেশ এই ব্যাংকের সদস্যপদ ও শেয়ার নিয়েছে।
জানা গেছে, ব্রিকসের পরবর্তী সম্মেলন আগামী আগস্টে হতে পারে। এ সময় বাংলাদেশ ব্রিকসের সদস্য হতে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সম্মেলনে অংশ নিতে পারেন। ব্রিকসে এখন ৫টি দেশ সদস্য। আগামীতে তারা আরও ৮টি দেশকে সদস্য করবে। তার মধ্যে বাংলাদেশ, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইন্দোনেশিয়াকে তারা আমন্ত্রণ জানিয়েছে।
সম্মেলনে মার্কিন ডলারের বিকল্প হিসেবে অন্য কোনো মুদ্রায় লেনদেন করা যায় কি না, এ সিদ্ধান্ত হতে পারে। বাংলাদেশ বিষয়টির সঙ্গে যুক্ত থাকলে বৈদেশিক মুদ্রার মজুতকে (রিজার্ভ) বৈচিত্র্যপূর্ণ করতে পারবে। ব্রিকসে যোগদানের ফলে বাংলাদেশের অর্থায়নের আরেকটি ক্ষেত্র হবে।
২০১৪ সালে ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক নামে নতুন ব্যাংক করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। এই ব্যাংক প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য ছিলো বাজার ব্যবস্থার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বাণিজ্য এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর অবকাঠামো টেকসই উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থায়ন করা। আটটি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশ এই ব্যাংকে অংশগ্রহণ করেছে।
সূত্র জানায়, সংস্থাটিতে যোগ দিতে চুক্তি অনুসমর্থন করার প্রয়োজন ছিল, মন্ত্রিসভা ওই চুক্তি অনুসমর্থনের প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়ায় সংস্থাটিতে যোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আরো একধাপ এগিয়ে থাকলো। ব্রিকস ব্যাংকে যোগ দেওয়ার চুক্তি অনুমোদন হওয়ায় ইতোমধ্যে কয়েকটি প্রকল্প আছে। ৬০০ কোটি টাকার বেশি প্রকল্প পাইলাইনে আছে। এই চুক্তি মন্ত্রিসভায় অনুসমর্থন হয়ে যাওয়ায় ওই প্রকল্পগুলো পাওয়া সহজ হয়ে যাবে।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশে ব্রিকসে যে চাঁদা দেয় তার থেকে কয়েকগুণ বেশি অর্থায়ন পাচ্ছে বাংলাদেশ। বিশ্ব ব্যাংক, এডিবির মতো দাতা সংস্থা জীবাশ্ম জ্বালানির প্রকল্পে অর্থায়ন করতে চায় না। এই ব্যাংকে সে বিষয়ে বিধি-নিষেধ নেই। তারা এই খাতে অর্থায়ন করছে। অর্থায়নের জন্য বাংলাদেশের প্রকল্প বাছাই করছে। জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের দুটি প্রকল্প পাইপ লাইনে আছে। ওই দুটি প্রকল্পে এই ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থায়ন করা হবে।
জানা যায়, বাংলাদেশই ব্রিকস জোটের বাইরের প্রথম দেশ, যারা এই ব্যাংকের সদস্যপদ পেয়েছে। মূল জোটে যোগ দেয়ার জন্যও সম্প্রতি আনুষ্ঠানিক আবেদন করেছে বাংলাদেশ। ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত ও চীনের অর্থনৈতিক জোট ব্রিকসের প্রথম আনুষ্ঠানিক সম্মেলন হয় ২০০৯ সালে। পরের বছর দক্ষিণ আফ্রিকার অন্তর্ভুক্তিতে জোটের নাম হয় ব্রিকস। এই জোটের উদ্যোগে ২০১৫ সালের ২১ জুলাই যাত্রা করে নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক-এনডিবি। পরে অল্প কয়েকটি দেশকে ব্যাংকটির সদস্য হওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। বাংলাদেশ সেই সুযোগ গ্রহণ করে। এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকেরও (এআইআইবি) সদস্য হয়েছে বাংলাদেশ। এআইআইবির প্রথম ঋণ পেয়েছিল বাংলাদেশ।
শুরুতে ব্রিকস শব্দটি ব্রাজিল, রাশিয়া, ইন্ডিয়া, চীন –এসব দেশের নামের প্রথম অক্ষর দিয়ে গঠন হয়েছে। ২০১৪ সালের ১৫ জুলাই ব্রাজিলের ফোর্তালেজা শহরে এই চার দেশের প্রধানমন্ত্রীরা এক সভায় মিলিত হন। সেখানে ব্রিকস ব্যাংক বা নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক গঠনের ঘোষণা আসে। সে সময় বলা হয়েছিল, এসব দেশে অবকাঠামো উন্নয়ন ও বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থায়নের ক্ষেত্রে বিশ্ব ব্যাংক ও আইএমএফের বিকল্প হয়ে উঠতে পারে নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক।
ব্রিকসের সদস্য রাষ্ট্র ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০২০ সালের ডিসেম্বরে এক ভার্চুয়াল শীর্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশকে নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকে যুক্ত হওয়ার আমন্ত্রণ জানালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাতে ইতিবাচক সাড়া দেন। এর পরে ব্যাংকটিতে যুক্ত হওয়ার পথে যাত্রা শুরু হয়। পরে ভারতের আমন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্রিকস ব্যাংকে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ২০২১ সালের ২০ আগস্ট এনডিবির বোর্ড অব গভর্নরসের সভায় নতুন সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের যোগদান অনুমোদিত হয়।