চীনা ইভির আধিপত্যে থাইল্যান্ডের বাজার হারাচ্ছে জাপান

স্টাফ রিপোর্টার

চীনা বিদ্যুচ্চালিত কোম্পানিগুলোর দৌরাত্ম্যে থাইল্যান্ডের বাজারে জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে জাপান। থাই সরকারের ইভিবিষয়ক পরিকল্পনা ও চীনা কোম্পানিগুলোর সম্প্রসারণ নীতি এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ফলে দেশটির স্থানীয় কোম্পানিগুলো টয়োটা ও নিশানের চেয়ে বিওয়াইডি ও গ্রেটওয়ালের সঙ্গে অংশীদারত্বে যেতে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। খবর রয়টার্স।

থাইল্যান্ডের শ্যাম মোটর্স জাপানি প্রতিষ্ঠান নিশান মোটর্সের সঙ্গে ১৯৬২ সালে চুক্তি স্বাক্ষর করে। কয়েক দশক ব্যবসার পর প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে চীনা ইভি প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলোর দিকে ঝুঁকে পড়ছে সম্ভাব্য অংশীদারের খোঁজে। সম্প্রতি দেয়া সাক্ষাৎকারে শ্যাম মোটর্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট সেবাস্টিয়ান ডুপু দাবি করেছেন, ‘‌ইভি এখানকার অর্থনীতিতে ভালো সংযোগ হতে পারে। এখানে ইভির বাজার এখন বর্ধমান। আমরা বর্ধিত বাজারকে হাতছাড়া করতে চাই না। শ্যাম মোটর্সের অবস্থানই স্পষ্ট করে তোলে থাইল্যান্ডের বর্তমান প্রবণতা। ২০২০ সালের পর থেকে দেশটিতে চীনা বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৪৪ কোটি ডলারে। বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিওয়াইডি ও গ্রেট ওয়াল মোটরের নামও রয়েছে। ফলে আগে যে জায়গাটা পুরোপুরি জাপানি নিয়ন্ত্রণে ছিল, তা দখল করে নিচ্ছে চীনা কোম্পানি।

জাপান এরই মধ্যে চীনের বাজারে ব্যবসার সংকোচন দেখেছে। একসময় খোদ চীনেই ছিল জাপানি কোম্পানিগুলোর রমরমা ব্যবসা। এখন অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর জন্য চীন দেশীয় কোম্পানিগুলোয় জোগান দিচ্ছে। নতুন করে যোগ হতে যাচ্ছে থাইল্যান্ডের নাম। চীনা কোম্পানির জোয়ার এরই মধ্যে থাইল্যান্ডের গাড়ি নির্মাণ শিল্পকে পুনর্গঠন করতে শুরু করেছে। চীনের ইভি প্রস্তুতকারকরা স্থানীয় থাই ফার্মগুলোয় শুরু করে দিয়েছেন কাজ। যারা আগে জাপানিজ কোম্পানিগুলোর সঙ্গে অংশীদারত্বের চুক্তিতে আবদ্ধ ছিলো, তাদেরও দলে ভেড়াচ্ছে কোম্পানিটি। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম গাড়ি সরবরাহ ও রফতানিকারক দেশ থাইল্যান্ড। ইন্দোনেশিয়ার পর দ্বিতীয় বৃহৎ বাজারও থাইল্যান্ড। কয়েক দশক ধরে দেশটিতে জাপানি কোম্পানিগুলো আধিপত্য বজায় রেখে চলেছে।

কিন্তু গত বছরেই চীন থাইল্যান্ডের প্রধান বিদেশী বিনিয়োগকারী হিসেবে আবির্ভূত হয়। বিশেষ করে বিওয়াইডি ২০২৪ সাল নাগাদ সেখানে নতুন প্লান্ট স্থাপনের কাজ শুরু করতে যাচ্ছে। থাই কর্মকর্তাদের মধ্যেও চীনের প্রতি ক্রমবর্ধমান আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। থাইল্যান্ডের এ পরিবর্তন সেখানকার অর্থনৈতিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রেও বিশেষ সংকেত দেয়। ইউরোপীয় দেশগুলোয় যেমন ইভি সম্প্রসারণে নতুন নীতিমালা নেয়া হচ্ছে, ঠিক সেভাবেই চীনা গাড়ি নির্মাতারা তাদের রাস্তা তৈরি করছে ইউরোপের বাজারে। যারা একসময় টয়োটা ব্যবহার করতেন, তাদের অনেকেই এখন গ্রেট ওয়াল ব্যবহার করছেন।

২০২২ সালে থাইল্যান্ডে ৮ লাখ ৫০ হাজার নতুন গাড়ি নিবন্ধিত হয়েছে। এর মধ্যে ১ শতাংশ ছিল বিদ্যুচ্চালিত। কিন্তু চলতি বছরের জানুয়ারি-এপ্রিল পর্যন্ত মোট বিক্রি হওয়া গাড়ির ৬ শতাংশই বিদ্যুচ্চালিত। বিওয়াইডি বর্তমানে থাইল্যান্ডের ইভির বাজারে নেতৃত্ব দিচ্ছে। তার পেছনে রয়েছে চীনা প্রতিষ্ঠান সাইক ও হজন এবং মার্কিন কোম্পানি টেসলা। নিবন্ধন থেকে বোঝা যাচ্ছে জানুয়ারি-এপ্রিল পর্যন্ত ১৮ হাজার ৪৮১টি ইভি বিক্রি হয়েছে থাইল্যান্ডে, যেখানে ৭ হাজার ৩০০-এর বেশিই বিওয়াইডি। টয়োটার বিক্রি হওয়া ইভির সংখ্যা মাত্র ১১। অথচ গত বছর গাড়ি বিক্রির তালিকায় প্রতিষ্ঠানটি আধিপত্য দেখিয়েছে। থাইল্যান্ডের গবেষক হাজিমে ইয়ামামত দাবি করেছেন, আগামী দশকে থাইল্যান্ডের বাজারে নেতৃত্ব দেবে চীনা কোম্পানিগুলো। জাপানিজ কোম্পানিগুলো কয়েকটি বিশেষ মডেলের কারণেই শুধু জায়গা ধরে রাখবে।

এক দশকে থাইল্যান্ডে প্রায় ৭০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে টয়োটা। থাই সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে অন্তত ৩০ শতাংশ গাড়িকে ইভিতে পরিবর্তন করার লক্ষ্য হাতে নিয়েছে। সরকারের প্রচেষ্টা ও প্রদেয় সুবিধা লুফে নিয়েছে চীনা কোম্পানিগুলো। চীনের কোম্পানিগুলো দ্রুততম সময়ে ইভির জন্য সরবরাহ চেইন তৈরি করে ফেলেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *