যুদ্ধপূর্ব অবস্থায় ফিরেছে রাশিয়ার জ্বালানি তেল রফতানি
একের পর এক পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার পরও জ্বালানি তেল রফতানিতে প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে রাশিয়া। সমুদ্রপথে দেশটির অপরিশোধিত জ্বালানি তেল রফতানি বেড়ে যুদ্ধপূর্ব অবস্থায় ফিরেছে। এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল প্লাটস।
রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল আমদানিতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জি৭ ভুক্ত দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞা চলছে। এ পরিস্থিতিতে ভারত, চীন ও তুরস্কের মতো দেশগুলোয় বিক্রি বাড়াচ্ছে মস্কো। এসব দেশে বিদ্যমান বাজারদরের চেয়ে কম দামে পণ্যটি সরবরাহ করা হচ্ছে। অন্যদিকে দামের সুবিধার কারণে দেশগুলো রাশিয়া থেকে বিপুল পরিমাণ জ্বালানি তেল কিনছে।
এসঅ্যান্ডপি গ্লোবালের দেয়া তথ্য বলছে, রাশিয়া গত মাসে সমুদ্রপথে প্রতিদিন গড়ে ৩৮ লাখ ৭০ হাজার ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেল রফতানি করেছে। ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরুর পর এটিই সর্বোচ্চ রফতানি। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির পর প্রতি মাসেই সমুদ্রপথে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল লোডিং বেড়েছে। গড় রফতানির পরিমাণ যুদ্ধপূর্ব অবস্থার তুলনায় ২৫ শতাংশ বেড়েছে। যুদ্ধ শুরুর আগে দেশটি প্রতিদিন গড়ে ৩১ ব্যারেল করে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল রফতানি করত।
রাশিয়া মে মাস থেকে এ বছরের শেষ নাগাদ অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলন কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ওপেক প্লাসের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী, দেশটি প্রতিদিন পাঁচ লাখ ব্যারেল করে উত্তোলন কমাবে। এমন সিদ্ধান্তের পরও দেশটির জ্বালানি তেল রফতানিতে ঊর্ধ্বমুখী ধারা বজায় রয়েছে।
ভারত গত মাসে রাশিয়া থেকে দৈনিক ২০ লাখ ব্যারেল করে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করেছে। এপ্রিলের তুলনায় আমদানি বেড়েছে ১৪ শতাংশ। দেশটি থেকে আমদানিতে এটি ভারতের নতুন রেকর্ড।
এদিকে চীনে রাশিয়ার জ্বালানি তেল রফতানি কিছুটা কমেছে। তবে তুরস্কে রফতানি ব্যাপক বেড়ে সাত মাসের সর্বোচ্চে। রাশিয়ার তৃতীয় শীর্ষ রফতানি গন্তব্যে পরিণত হয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া।
রাশিয়া অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রফতানি করে উরাল ক্রুড। এটির রফতানি গত মাসে দৈনিক ২৩ লাখ ব্যারেল করে বেড়েছে, যা মার্চ ও এপ্রিলে ছিল ২২ লাখ ব্যারেল। এশিয়ার বাজারে এই গ্রেডের জ্বালানি তেলের শক্তিশালী চাহিদা রয়েছে, যা রফতানি বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেছে।
যুদ্ধের আগে রুশ জ্বালানি তেলের সবচেয়ে বড় রফতানি বাজার ছিল ইউরোপ। বর্তমানে বাজারটিতে রফতানি তলানিতে নেমেছে। রাশিয়ার ৯০ ভাগ জ্বালানি তেলই যাচ্ছে এশিয়ায়। তুরস্কও দেশটির পছন্দের ক্রেতা হয়ে উঠেছে। যুদ্ধের আগের তুলনায় এশিয়া ও তুরস্কে রফতানি ৩৪ শতাংশ বেড়েছে।
এদিকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল রফতানি বাড়লেও পরিশোধিত তেল রফতানি কমেছে। মৌসুমি রিফাইনারি রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রমের ফলে রফতানি ১৩ শতাংশ কমে দৈনিক ২২ লাখ ৭০ হাজার ব্যারেলে নেমেছে।
এসঅ্যান্ডপি গ্লোবালের দেয়া তথ্যমতে, রাশিয়ার দৈনিক পরিশোধন সক্ষমতার ১৬ লাখ ব্যারেল গত মাসে অফলাইনে ছিল। ফেব্রুয়ারি-এপ্রিল পর্যন্ত দেশটির অপরিশোধিত জ্বালানি তেল ও কনডেনসেট উত্তোলন দৈনিক ৪ লাখ ৭০ হাজার ব্যারেল করে কমেছে। রিফাইনারিগুলোয় ভারী রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রমের কারণেই উত্তোলনে ভাটা পড়েছে।
কম দামের কারণে সাম্প্রতিক মাসগুলোয় রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল আমদানি বাড়িয়েছিল সৌদি আরবও। এসব তেল পরিশোধন করে ফের ইউরোপের বাজারে রফতানি করে দেশটি। গত মাসে সৌদি আরবে রুশ জ্বালানি তেল রফতানি কমেছে লক্ষণীয় মাত্রায়।