ভারতে ইস্পাত উৎপাদনে প্রবৃদ্ধি
চলতি বছর ভারতের ইস্পাত উৎপাদন খাত দ্রুত বিকাশ লাভ করেছে। এ ধারাবাহিকতায় নভেম্বরে এসে ভারতের ইস্পাত শিল্পের বিকাশ আরো জোরদার হয়েছে। এ সময় দেশটির কারখানাগুলোয় অপরিশোধিত ইস্পাত উৎপাদন আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়ে ৮৯ লাখ টন ছাড়িয়ে গেছে।
ভারতের কেন্দ্রীয় ইস্পাত মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন জয়েন্ট প্লান্ট কমিশনের (জেপিসি) সর্বশেষ মাসভিত্তিক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে ইস্পাতের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণে নিজস্ব কারখানাগুলোয় সম্মিলিত উৎপাদন সক্ষমতা অর্জনের পথে দেশটি একধাপ এগিয়ে গেল বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। খবর ইকোনমিক টাইমস, বিজনেস লাইন ও বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড।
জেপিসি ভারতের ইস্পাত শিল্প-সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণকারী একমাত্র সরকারী প্রতিষ্ঠান। জেপিসির প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালের নভেম্বরে ভারতের কারখানাগুলোয় সব মিলিয়ে ৮৯ লাখ ২০ হাজার টন অপরিশোধিত ইস্পাত উৎপাদন হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি।
২০১৭ সালের নভেম্বরে ভারতের কারখানাগুলোয় সব মিলিয়ে ৮৬ লাখ টন ইস্পাত উৎপাদন হয়েছিল। সেই হিসাবে, এক বছরের ব্যবধানে ভারতে পণ্যটির উৎপাদন বেড়েছে ৩ লাখ ২০ হাজার টন। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বৃদ্ধির পাশাপাশি ২০১৭ সালের অক্টোবরের তুলনায় নভেম্বরে ভারতে ইস্পাতের সম্মিলিত উৎপাদন ১ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়েছে বলেও প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
রাষ্ট্রীয় ইস্পাত নিগম, স্টিল অথরিটি অব ইন্ডিয়া লিমিটেড (এসএআইএল), টাটা স্টিল, এসার স্টিল, জিন্দাল স্টিল অ্যান্ড পাওয়ার লিমিটেড ও জেএসডব্লিউ স্টিল— এ ছয়টি ভারতের সবচেয়ে বড় ইস্পাত উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। চলতি বছরের নভেম্বরে এ ছয় প্রতিষ্ঠানে সম্মিলিতভাবে ৫৪ লাখ ২০ হাজার টন অপরিশোধিত ইস্পাত উৎপাদন হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৮ শতাংশ বেশি।
২০১৭ সালের একই সময়ে এ ছয় প্রতিষ্ঠানে সব মিলিয়ে ৫০ লাখ ১০ হাজার টন ইস্পাত উৎপাদন হয়েছিল। সেই হিসাবে, এক বছরের ব্যবধানে ভারতের সবচেয়ে বড় ছয়টি ইস্পাত কারখানায় পণ্যটির সম্মিলিত উৎপাদন বেড়েছে ৪ লাখ ১০ হাজার টন।
গত নভেম্বরে বড় ছয়টি বাদে অন্য কারখানাগুলো মোট ৩৫ লাখ টন অপরিশোধিত ইস্পাত উৎপাদন করেছে। একই সময়ে দেশটিতে পরিশোধিত ইস্পাত ও ইস্পাতজাত পণ্য উৎপাদন আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়েছে বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছে জেপিসি।
ভারত বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ ইস্পাত উৎপাদনকারী দেশ। ইস্পাত শিল্প বিকাশে চলতি বছর দেশটির সরকার ন্যাশনাল স্টিল পলিসি (এনএসপি) অনুমোদন দিয়েছে। এনএসপির আওতায় ভারতের ইস্পাত শিল্প বিকাশে অতিরিক্ত ১০ লাখ কোটি রুপি বিনিয়োগ করা হচ্ছে।
এ নীতি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতের ইস্পাত উৎপাদন সক্ষমতা বছরে ৩০ কোটি টনে উন্নীত করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ভারত থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যটির রফতানিও আগের তুলনায় কয়েক গুণ বাড়াবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এনএসপির বাস্তবায়ন ছাড়াও নরেন্দ্র মোদির সরকার ভারতের ইস্পাত শিল্প বিকাশে বিভিন্ন প্রণোদনামূলক উদ্যোগ নিয়েছে। এসব উদ্যোগের ফল হিসেবে দেশটিতে ইস্পাত উৎপাদন বাড়তে শুরু করেছে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।
দেশটির ইস্পাত উৎপাদন খাতে ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধির পেছনে দুটি কারণ চিহ্নিত করেন বিশ্লেষকরা। প্রথমত. দেশজুড়ে বড় বড় অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প চলমান থাকায় ইস্পাতের অভ্যন্তরীণ ব্যবহার দ্রুত বাড়ছে। ২০১৯ সাল নাগাদ ভারতে ইস্পাতের বার্ষিক ব্যবহার চলতি বছরের তুলনায় বেড়ে ১০ কোটি ২৩ লাখ টনে পৌঁছে যেতে পারে।
এর মধ্য দিয়ে পণ্যটির ব্যবহারে শীর্ষ ইস্পাত ব্যবহারকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে যেতে পারে ভারত, যার সিংহভাগই নিজস্ব উৎস থেকে পূরণ করতে আগ্রহী দেশটি। দ্বিতীয়ত. ইস্পাত উৎপাদনকারীদের বৈশ্বিক তালিকায় দ্বিতীয় শীর্ষ অবস্থান দখলে নিতে জাপানের সঙ্গে তীব্র প্রতিযোগিতায় লিপ্ত রয়েছে দেশটি। ২০১৯ সালেই দেশটি দ্বিতীয় শীর্ষের স্বীকৃতি পেতে পারে। এ দুই কারণে নিজস্ব কারখানাগুলোয় ইস্পাত উৎপাদন বাড়িয়ে দিয়েছে ভারত।