এজেন্ট প্রথা আনছে কর আদায়ে এনবিআর: খসড়া বিধিমালা প্রকাশ

স্টাফ রিপোর্টার

বিভিন্ন খাতে অর্থায়নে এবং বাজেট ঘাটতি কমিয়ে আনতে রাজস্ব আহরণ বাড়াতে চায় সরকার। এ জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) দেওয়া হচ্ছে বড় অঙ্কের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা। কিন্তু এনবিআরের রাজস্ব আদায় বাড়লেও লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছানো যাচ্ছে না। এমন প্রেক্ষাপটে জনগণের কাছ থেকে প্রত্যক্ষ আয়কর আদায় বাড়াতে এনবিআর ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে এলাকাভিত্তিক কর এজেন্ট হিসেবে নিয়োগের উদ্যোগ নিয়েছে। এর আইনগত ভিত্তি দিতে গত বৃহস্পতিবার বাজেট ঘোষণার দিনেই এ বিষয়ে একটি বিধিমালার খসড়া প্রকাশ করেছে।

প্রস্তাবিত বিধিমালায় বলা হয়েছে, ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের রিটার্ন প্রস্তুত ও জমায় সহায়তা করতে এজেন্ট হিসেবে অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের নিয়োগ করতে পারবে এনবিআর। প্রস্তাবিত বিধিমালায় এদের ‘আয়কর রিটার্ন প্রস্তুতকারী’ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। একই সঙ্গে আয়কর রিটার্ন প্রস্তুত ব্যক্তিদের কার্যক্রম তদারক ও প্রশিক্ষণের জন্য কর বিষয়ে অভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেওয়ারও প্রস্তাব আছে এ বিধিমালায়। এসব প্রতিষ্ঠানকে ‘সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠান’ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।

প্রস্তাবিত বিধিমালার ওপর সাধারণ জনগণসহ অভিজ্ঞদের ২৫ জুনের মধ্যে মতামত চেয়েছে এনবিআর। এসব মতামত পর্যালোচনা করে বিধিমালাটি চূড়ান্ত করে গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে।

প্রস্তাবিত বিধিমালায় বলা হয়েছে, আয়কর আহরণে আয়কর রিটার্ন প্রস্তুতকারী নির্দিষ্ট ব্যক্তির আয়কর রিটার্ন দাখিলের পাশাপাশি জমাকৃত করের ওপর পাঁচ বছর পর্যন্ত কমিশনের মতো করে নির্দিষ্ট হারে প্রণোদনা পাবেন। এ ছাড়া সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠান তার অধীনস্থ আয়কর রিটার্ন প্রস্তুতকারীদের প্রাপ্য প্রণোদনার ১০ শতাংশ হারে সার্ভিস চার্জ পাবে। অর্থাৎ এনবিআর নিজে কোনো অর্থ খরচ না করেই কর আদায় বাড়ানোর এ পথে হাঁটতে যাচ্ছে।

আয়কর রিটার্ন প্রস্তুতকারী ও সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠান উভয়কেই কর বিষয়ে অভিজ্ঞ হতে হবে এবং এনবিআর থেকে নিবন্ধন নিতে হবে। প্রস্তাবিত বিধিমালায় আয়কর রিটার্ন প্রস্তুতকারীর নিবন্ধন পেতে বেশ কিছু যোগ্যতা ও শর্তের কথা বলা হয়েছে। যেমন–  সরকারি চাকরিতে নিয়োজিত কেউ এ ধরনের কাজে সম্পৃক্ত হবেন না; আবেদনকারীকে বাংলাদেশি নাগরিক ও  টিআইএনধারী হতে হবে এবং তাঁর রিটার্ন দাখিলের প্রমাণ থাকতে হবে; সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে কমপক্ষে স্নাতক বা সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে; স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতার আয়কর রিটার্ন প্রস্তুত ও দাখিলের জ্ঞান থাকতে হবে; একই সঙ্গে কম্পিউটার চালনা ও প্রযুক্তিগত ব্যবহারিক জ্ঞান থাকতে হবে।

আয়কর রিটার্ন প্রস্তুতকারীর নিবন্ধন নিতে আগ্রহীদের এনবিআরের এ সংক্রান্ত বোর্ড পরীক্ষার আয়োজন করবে। ওই পরীক্ষায় পাস করে সার্টিফিকেট নিতে হবে। তবে এনবিআর পরীক্ষা ছাড়াই আবেদনকারী চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট, চার্টার্ড  সেক্রেটারিজ বা কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্ট, বার কাউন্সিলে নিবন্ধিত আইনজীবী বা কর আইনজীবীকে এমন সার্টিফিকেট দিতে পারবে। এনবিআর গঠিত এ সংক্রান্ত বোর্ড আয়কর রিটার্ন প্রস্তুতকারীদের কার্যক্রম তদারক করতে এলাকাভিত্তিক আয়করবিষয়ক পরামর্শ প্রদানে অভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠানকে সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিবন্ধন দিতে পারবে।

কোনো ব্যক্তিকে কর প্রদানে সহায়তা আদায়কৃত করের ওপর প্রথম থেকে তৃতীয় বছর পর্যন্ত নির্দিষ্ট হারে প্রণোদনা পাবেন আয়কর রিটার্ন প্রস্তুতকারী ব্যক্তি। এ ক্ষেত্রে প্রদত্ত কর ন্যূনতম হলে তার ওপর ১০ শতাংশ হারে প্রণোদনা মিলবে। পরবর্তী ১৫ হাজার টাকা কর আদায়ে সহায়তার ওপর ২ শতাংশ, পরবর্তী ৫০ হাজার পর্যন্ত কর আদায়ে সহায়তায় ১ শতাংশ এবং অবশিষ্ট করের ওপর শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ হারে প্রণোদনা পাবেন। তবে পরের দুই বছর এ হার প্রত্যেক ধাপে অর্ধেক হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *