তীব্র দাবদাহে সাতক্ষীরায় মরে গেছে ২০০ কোটি টাকার চিংড়ি
তীব্র দাবদাহে হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে সাতক্ষীরায় চিংড়ি ঘেরে ব্যাপক হারে মড়ক লেগেছে। টানা দেড়-দুই মাস ধরে অস্বাভাবিক দাবদাহের কারণে জেলায় কমপক্ষে ৪০ শতাংশ চিংড়ি ঘেরে অন্তত ২০০ কোটি টাকার চিংড়ি মরে গেছে। এতে ভরা মৌসুমে চিংড়িচাষীরা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
এদিকে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জানান, শুধু হিট স্ট্রোকে নয় ঘেরে পানিস্বল্পতার পাশাপাশি অপরিকল্পিত উপায়ে মাছ চাষ করার জন্য চিংড়ি মারা যাচ্ছে।
সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার সরাপপুর গ্রামের চিংড়িচাষী রাজ্যেস্বর দাশ জানান, চলতি মৌসুমে প্রায় দুই হাজার বিঘা জলাশয়ে চিংড়ি চাষ করেছেন। কিন্তু বিক্রির কাছাকাছি সময়ে তীব্র দাবদাহে ঘেরে অন্তত ২৫-৩০ লাখ টাকার চিংড়ি মরে গেছে। একই অবস্থা তার এলাকার অধিকাংশ চিংড়ি ঘেরে। তাছাড়া এলাকার মরিচ্চাপ নদী খননের কারণে ঘেরে পানি না ওঠাতে পেরে অনেক চিংড়িচাষী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
একই উপজেলার গোনাকরকাঠি গ্রামের ঘের ব্যবসায়ী আব্দুল বারি জানান, চলতি মৌসুমে ১৪০ বিঘার ঘেরে বাগদা চিংড়ি চাষ করছেন। এরই মধ্যে কয়েক দফায় ঘেরে চিংড়ি ঘেরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ঘেরে প্রতিটি চিংড়ি যখন দুই-তিন ইঞ্চি সাইজ হয়েছিল তখন অস্বাভাবিক তাপমাত্রায় ৭০-৮০ শতাংশ চিংড়ি মরে গেছে। এতে কমপক্ষে ১৪-১৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।’ শুধু রাজ্যেস্বর দাশ আর আব্দুল বারি নন, জেলার অধিকাংশ চিংড়িচাষীর ঘেরে একই চিত্র। উৎপাদন মৌসুমে চিংড়ি মরে সয়লাব হয়ে যাচ্ছে।
সাতক্ষীরা জেলা চিংড়ি চাষী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ডাক্তার আবুল কালাম বাবলা জানান, চলতি মৌসুমে সাতক্ষীরার ছয়টি উপজেলায় অন্তত ৬০ হাজার ঘেরে চিংড়ি উৎপাদন হচ্ছে। কিন্তু তীব্র দাবদাহে কমপক্ষে ৪০ শতাংশ ঘেরের চিংড়ি মারা গেছে। যার ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২০০ কোটি টাকা। এর পাশাপাশি পানি উন্নয়ন বোর্ডের নদী খননে গাফিলাতির কারণে অনেক ঘেরে ঠিকমতো পানি ওঠাতে পারছেন না চিংড়িচাষীরা। ফলে পানিস্বল্পতার জন্য অনেক ঘেরে চিংড়ি মারা যাচ্ছে।
সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আনিছুর রহমান জানান, চলতি ২০২২-২৩ মৌসুমে সাতক্ষীরায় ৬৮ হাজার হেক্টর জমিতে প্রায় ৬০ হাজার ঘেরে চিংড়ি চাষ করা হচ্ছে। এর মধ্যে বাগদা চিংড়ি উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২৬ হাজার টন এবং গলদা চিংড়ি উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১০ হাজার টন। দাবদাহে চিংড়ি মরে যাওয়ার বিষয় তিনি বলেন, ‘শুধু হিট স্ট্রোকেই মারা যাচ্ছে তা নয়, বরং অধিকাংশ ঘেরে পানিস্বল্পতার পাশাপাশি অপরিকল্পিতভাবে ঘের করায় মাছ মরছে বেশি। এছাড়া মানসম্মত চিংড়ি রেণু না পাওয়ার কারণেও মাছে মড়ক লাগতে পারে।’ এ ব্যাপারে তিনি চিংড়িচাষীদের ঘেরে পানির পরিমাণ বাড়ানোর পাশাপাশি পরিকল্পিত উপায়ে স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে চিংড়ি চাষ করার পরামর্শ দিয়েছেন।