ওপেকের উত্তোলন হ্রাসে লাভবান হবে মার্কিন শেল খাত
অবশেষে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক উত্তোলন হ্রাসে ঐকমত্যে পৌঁছতে পেরেছে জ্বালানি পণ্যটির রফতানিকারকদের জোট অর্গানাইজেশন অব দ্য পেট্রোলিয়াম এক্সপোর্টিং কান্ট্রিজ (ওপেক)।
অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় অনুষ্ঠিত বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী জানুয়ারি থেকে জ্বালানি পণ্যটির দৈনিক উত্তোলন অক্টোবরের তুলনায় ১২ লাখ ব্যারেল কমানো হবে। এর মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের ক্রমাগত দরপতনের লাগাম টানা সম্ভব হবে বলে মনে করছে জোটভুক্ত দেশগুলো।
তবে বিশ্লেষকদের মতে, দাম বাড়ানোর পাশাপাশি ওপেকের এ সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রের শেল (পাথুরে ভূমি থেকে উত্তোলন হওয়া জ্বালানি তেল) খাতের বিকাশে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে। ফলে ওপেকভুক্ত না হয়েও জোটের এ সিদ্ধান্তে লাভবান হবে ওয়াশিংটন। খবর রয়টার্স ও ব্লুমবার্গ।
ভিয়েনা বৈঠকের পর ইরাকের তেলমন্ত্রী থামের ঘাধবান জানান, ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ওপেকভুক্ত ও বহির্ভূত দেশগুলো অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের সম্মিলিত উত্তোলন অক্টোবরের তুলনায় দৈনিক ১২ লাখ ব্যারেল কমানোর বিষয়ে একমত হয়েছে।
এর মধ্যে সৌদি আরব, ইরাকসহ জোটভুক্ত দেশগুলোয় জ্বালানি পণ্যটির সম্মিলিত উত্তোলন কমবে দৈনিক আট লাখ ব্যারেল। বাকি চার লাখ ব্যারেল উত্তোলন কমাবে রাশিয়াসহ ওপেকবহির্ভূত অন্য দেশগুলো। রুশ জ্বালানিমন্ত্রী আলেকজান্ডার নোভাক এ সিদ্ধান্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, এর মধ্য দিয়ে আগামী বছরের প্রধমার্ধে (জানুয়ারি-জুন) আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের সরবরাহ উদ্বৃত্ত কিছুটা হলেও কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। ফলে জ্বালানি পণ্যটির বড় ধরনের দরপতনের আশঙ্কা থাকছে না।
এর আগে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দৈনিক গড় উত্তোলন ১০ লাখ ব্যারেল কমানোর প্রস্তাব দিয়েছিল সৌদি আরব। তবে ওপেকভুক্ত ও বহির্ভূত দেশগুলোর দুদিনের বৈঠকে এ প্রস্তাবে আপত্তি জানায় সৌদি আরবের আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী ইরান।
দেশটির দাবি, নতুন করে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ায় অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলন কমানোর এ বাধ্যবাধকতা ইরানের অর্থনীতিতে বাড়তি চাপ সৃষ্টি করবে। দুর্বল অর্থনীতির যুক্তি দেখিয়ে নিজেদের আপত্তির কথা জানায় লিবিয়া ও ভেনিজুয়েলা।
দুদিনের আলোচনা শেষে জ্বালানি তেলের সম্মিলিত উত্তোলন কমানোর ক্ষেত্রে এ তিন দেশকে বিশেষ ছাড় দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওপেক-সংশ্লিষ্টরা।
স্ট্রাটাস অ্যাডভাইজরের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট জন পেইসি বলেন, জ্বালানি তেলের দরপতনে লাগাম টানতে ওপেকের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইরানের আপত্তি সত্ত্বেও এ চাপের কাছে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো কার্যত নতি স্বীকার করেছে। যদিও সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর বাজেট ঘাটতি দূর করার চাপও সিদ্ধান্ত প্রণয়নে প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে।
ওপেকের এমন সিদ্ধান্তে সবচেয়ে বেশি লাভবান হতে পারে যুক্তরাষ্ট্র— এমনটাই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। যুক্তরাষ্ট্র তুলনামূলক কম খরচে শেল তেল উত্তোলন করছে। বাড়ানো হয়েছে রফতানিও। গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের ৭৫ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি জ্বালানি তেল রফতানি হয়েছে।
সব মিলিয়ে দেশটির জ্বালানি তেল উত্তোলন ও রফতানি খাতে চাঙ্গাভাব বজায় রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ওপেকের আওতায় জ্বালানি পণ্যটির উত্তোলন কমে গেলে মার্কিন তেলের চাহিদা বেড়ে যাবে। প্রকারান্তরে যা যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি খাতকে শক্তিশালী করবে। বিশেষত মার্কিন শেল খাতের বিকাশে ওপেকের এ সিদ্ধান্ত কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
টেক্সাসভিত্তিক এইচএইচ হওয়েল ইনকরপোরেশনের প্রেসিডেন্ট হার্ভে হওয়েল বলেন, বর্তমানে প্রতি ব্যারেল ডব্লিউটিআইয়ের দাম ৫০ ডলারের কাছাকাছি অবস্থান করছে। এ দাম মার্কিন খাতসংশ্লিষ্টদের আর্থিক লাভের জন্য যথেষ্ট। কেননা যুক্তরাষ্ট্রের শেল কূপগুলোয় জ্বালানি পণ্যটির উত্তোলন ব্যয় বেশ কম। এখন অন্যান্য দেশে উত্তোলন আরো কমানো হলে আমদানিকারকরা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ঝুঁকবেন। ফলে মার্কিন শেল উত্তোলন ও রফতানি দুটোই আরো চাঙ্গা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এলএলসি রিসোর্সেসের প্রধান নির্বাহী স্টিভেন প্রুয়েট বলেন, ওপেক উত্তোলন না কমালে জ্বালানি তেলের ব্যারেল ৪০ ডলারে নেমে আসত। এতে মার্কিন শেল খাতের আর্থিক লাভ কম হতো। এ সিদ্ধান্ত সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের জন্যই লাভজনক হয়েছে।