এলএনজি রফতানিতে কাতারকে ছাড়াল অস্ট্রেলিয়া

তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) রফতানিতে কাতার ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে প্রতিযোগিতা বেশ পুরনো। কাতারকে ছাড়িয়ে বিশ্বের শীর্ষ এলএনজি রফতানিকারক দেশের স্বীকৃতি পেতে বিগত কয়েক বছরে উত্তোলন সক্ষমতা বাড়ানোসহ বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া।

এর সুফলও মিলেছে। গত নভেম্বরে কাতারের তুলনায় বেশি এলএনজি রফতানি করেছে দেশটি। অস্ট্রেলিয়ান ব্যুরো অব স্ট্যাটিস্টিকসের (এবিএস) সর্বশেষ মাসভিত্তিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে এ তথ্য জানা গেছে। জ্বালানি পণ্যটির বৈশ্বিক রফতানিতে এবারই প্রথম কোনো দেশ কাতারকে ছাড়িয়ে গেল। খবর সিনহুয়া ও রয়টার্স।

অস্ট্রেলিয়া বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ এলএনজি রফতানিকারক দেশ। এবিএসের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালের নভেম্বরে দেশটি থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে সব মিলিয়ে ৬৫ লাখ ৫০ হাজার টন এলএনজি রফতানি হয়েছে। একই সময়ে বিশ্বের শীর্ষ এলএনজি রফতানিকারক দেশ কাতার থেকে জ্বালানি পণ্যটির রফতানি দাঁড়িয়েছে ৬২ লাখ ৭০ হাজার টনে।

অর্থাৎ, চলতি বছরের নভেম্বরে অতিরিক্ত ২ লাখ ৮০ হাজার টন এলএনজি রফতানির মধ্য দিয়ে জ্বালানি পণ্যটির শীর্ষ রফতানিকারকদের তালিকায় কাতারকে টপকে শীর্ষ অবস্থানে পৌঁছে গেছে অস্ট্রেলিয়া। তবে মাসভিত্তিক হিসাবে কাতারকে ছাড়িয়ে গেলেও বার্ষিক এলএনজি রফতানিতে শীর্ষ অবস্থানে পৌঁছতে অস্ট্রেলিয়াকে আরো অপেক্ষা করতে হতে পারে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।

এলএনজি অস্ট্রেলিয়ার তৃতীয় শীর্ষ রফতানি পণ্য। তালিকার শুরুতে রয়েছে যথাক্রমে কয়লা ও আকরিক লোহা। চলতি বছরের ৩১ অক্টোবরের পূর্ববর্তী এক বছরে এ তিনটি পণ্য রফতানি করে অস্ট্রেলিয়া সব মিলিয়ে ১৬ হাজার ৫০০ কোটি অস্ট্রেলিয়ান ডলার (স্থানীয় মুদ্রা) বা ১১ হাজার ৯২০ কোটি মার্কিন ডলার আয় করেছে বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছে এবিএস।

এর মধ্যে কয়লা রফতানি করে দেশটির আয় দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৪৬০ কোটি অস্ট্রেলিয়ান ডলার বা ৪ হাজার ৬৭০ কোটি মার্কিন ডলার। অন্যদিকে আকরিক লোহা রফতানি বাবদ অস্ট্রেলিয়ান রফতানিকারকদের আয় হয়েছে ৬ হাজার ১৬০ কোটি অস্ট্রেলিয়ান ডলার বা ৪ হাজার ৪৫০ কোটি মার্কিন ডলার। একই সময়ে এলএনজি রফতানি করে অস্ট্রেলিয়া মোট ৩ হাজার ৮৮০ কোটি অস্ট্রেলিয়ান ডলার বা ২ হাজার ৮০০ কোটি মার্কিন ডলার আয় করেছে।

এবিএসের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে অস্ট্রেলিয়ার রফতানি আয় আগের অর্থবছরের তুলনায় ১১ শতাংশ বেড়ে ২৫ হাজার ২০০ কোটি অস্ট্রেলিয়ান ডলার বা ১৮ হাজার ২৩০ কোটি মার্কিন ডলারে পৌঁছতে পারে। এ সময় এলএনজি রফতানি করে দেশটির আয় দাঁড়াতে পারে ৪ হাজার ৮০০ কোটি অস্ট্রেলিয়ান ডলার বা ৩ হাজার ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারে।

অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ার ডিপার্টমেন্ট অব ইন্ডাস্ট্রি, ইনোভেশন অ্যান্ড সায়েন্সের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে অস্ট্রেলিয়া থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে সব মিলিয়ে ৩ হাজার ৮০ কোটি অস্ট্রেলিয়ান ডলার বা ২ হাজার ২২০ কোটি মার্কিন ডলারের এলএনজি রফতানি হতে পারে।

প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় ২০১৯-২০ অর্থবছরে জ্বালানি পণ্যটির রফতানি বাবদ দেশটির আয় বেড়ে দাঁড়াতে পারে ৪ হাজার ২৪০ কোটি অস্ট্রেলিয়ান ডলার বা ৩ হাজার ৬০ কোটি মার্কিন ডলারে। মূলত আন্তর্জাতিক বাজারে ক্রমবর্ধমান চাহিদা ও তুলনামূলক বাড়তি দাম আগামী দিনগুলোয় অস্ট্রেলিয়ার এলএনজি রফতানি খাতে অতিরিক্ত ডলার যুক্ত করতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

অস্ট্রেলিয়ায় ম্যালকম টার্নবুল সরকারে সম্পদবিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ম্যাট কানাভ্যান। দেশটির সাবেক এ মন্ত্রী বলেন, এলএনজির বৈশ্বিক রফতানি খাতে কাতারকে টপকে শীর্ষ অবস্থানে যেতে উচ্চাভিলাষী প্রকল্প হাতে নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া।

এর অংশ হিসেবেই গত নভেম্বরে কাতারের তুলনায় বেশি এলএনজি রফতানি করা হয়েছে। এটা অস্ট্রেলিয়ার রফতানি খাতে বড় একটি অর্জন। এ ধারাবাহিকতায় অচিরেই বিশ্বের সবচেয়ে বেশি এলএনজি রফতানিকারক দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পাবে অস্ট্রেলিয়া।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *