চিনির দাম কমছে
আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত চিনির দাম কমছে। চিনির দাম প্রতি পাউন্ড (৪৫৪ গ্রাম) ১ দশমিক ৪ শতাংশ কমে ২০ দশমিক ৮৬ সেন্ট হয়েছে। এর আগে প্রতি পাউন্ড বিক্রি হয়েছিল ২১ দশমিক ৩৩ সেন্ট। সাম্প্রতিক চিনির মূল্যবৃদ্ধির পেছনে ভারত, থাইল্যান্ড ও চীনে উৎপাদন হ্রাসের সম্ভাবনা আংশিকভাবে দায়ী। এটি বিশ্ববাজারে চিনি সরবরাহ কঠিন করেছে। খবর রয়টার্স।
চলতি বছর ও আগামী বছরে ব্রাজিলে উৎপাদন বৃদ্ধির আভাস চিনির মূল্য কমাতে ভূমিকা রেখেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্রাজিলের দক্ষিণ অঞ্চলে চিনির উৎপাদন ১৩ শতাংশ বৃদ্ধির আশা করা হচ্ছে। এর আগে ব্রাজিলের চিনি ও ইথানল শিল্প গ্রুপ ইউনিকা ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয়ার্ধে মধ্য-দক্ষিণ অঞ্চলে একটি উৎপাদন প্রতিবেদন প্রকাশ করার কথা জানিয়েছিল।
প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, সাদা চিনির দাম ১ দশমিক ৪৫ শতাংশ কমে প্রতি টন ৫৮৪ ডলার হতে পারে।
অন্যদিকে আগে চিনির বৈশ্বিক উদ্বৃত্ত পূর্বাভাস কমিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল সুগার অর্গানাইজেশন (আইএসও)। ২০২২-২৩ মৌসুমে বিশ্বজুড়ে প্রত্যাশার চেয়ে কম চিনি উৎপাদন হবে বলে মনে করছে সংস্থাটি। এ কারণেই উদ্বৃত্তের পরিমাণ ক্ষীণ হয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
সংস্থাটি প্রান্তিকভিত্তিক এক প্রতিবেদনে জানায়, গত বছরের অক্টোবরে ২০২২-২৩ বিপণন মৌসুম শুরু হয়েছে। এ বছরের সেপ্টেম্বরে মৌসুম শেষ হবে। এ মৌসুমে পণ্যটির বৈশ্বিক উদ্বৃত্ত দাঁড়াবে ৪২ লাখ টনে। এর আগে গত বছরের নভেম্বরে দেয়া পূর্বাভাসে ৬২ লাখ টন উদ্বৃত্তের পূর্বাভাস দিয়েছিল সংস্থাটি।
আইএসওর নতুন প্রক্ষেপণ অনুযায়ী, এ মৌসুমে বিশ্বজুড়ে ১৮ কোটি ৪ লাখ টন চিনি উৎপাদন হবে। এর আগের পূর্বাভাসে ১৮ কোটি ২১ লাখ টন উৎপাদনের কথা জানিয়েছিল সংস্থাটি।
ক্রেডিট রেটিং প্রতিষ্ঠান ফিচ সলিউশন জানায়, বছরজুড়ে অপরিশোধিত চিনির বৈশ্বিক বাজারদর ২০২১ সালের তুলনায় ২ শতাংশ বাড়তে পারে। প্রতি পাউন্ড অপরিশোধিত চিনির দাম ১৮ দশমিক ৬ থেকে বেড়ে ১৯ সেন্টে উন্নীত হতে পারে, যা ইতিহাসের সর্বোচ্চ। পণ্যটির এমন মূল্যবৃদ্ধি বিশ্বজুড়ে ক্রমবর্ধমান খাদ্যমূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টাকে ব্যাহত করতে পারে।
বৈরী আবহাওয়ায় ভারতের প্রধান আবাদি অঞ্চলগুলোয় নির্ধারিত সময়ের আগেই পরিপক্ব হচ্ছে আখ। বিপরীতে কমছে ওজন। ফলে দেশটিতে প্রাক্কলনের চেয়ে কম চিনি উৎপাদন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে বিশ্ববাজারে পণ্যটির সরবরাহের টান পড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ চিনি রফতানিকারক। উৎপাদন কমে গেলে দেশটির সরকার অতিরিক্ত চিনি রফতানির অনুমোদন বাতিল করতে পারে। এর প্রভাবে বিশ্ববাজারে ভোগ্যপণ্যটির দাম বাড়ার আশঙ্কাও রয়েছে। তবে এ পরিস্থিতিতে ব্রাজিল ও থাইল্যান্ড রফতানি বাড়ানোর সুযোগ পাবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
ইন্ডিয়ান সুগার মিলস অ্যাসোসিয়েশন গত মাসে জানিয়েছিল, ২০২২-২৩ বিপণন মৌসুমে দেশটিতে ৩ কোটি ৪০ থেকে ৩ কোটি ৪৩ লাখ টন চিনি উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। গত মৌসুমে উৎপাদন হয়েছিল ৩ কোটি ৫৮ লাখ টন। সে হিসাবে উৎপাদন প্রায় ১৫ লাখ টন কমবে।
তবে নতুন পূর্বাভাসে উৎপাদন আরো কমার কথা বলা হয়েছে। মহারাষ্ট্র ও কর্ণাটকে আবাদকৃত আখ আগেই পরিপক্ব হওয়ায় উৎপাদন পূর্বাভাস কমাতে বাধ্য হচ্ছে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো।
আলভীন ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেডের ট্রেডিং ইন্টেলিজেন্সের প্রধান মাউরো ভার্জিনো বলেন, ‘এ মৌসুমে ৩ কোটি ৩৫ লাখ টন চিনি উৎপাদন হবে বলে আমরা ধারণা করছি। উৎপাদনে এমন নিম্নমুখী প্রবণতা বৈশ্বিক চিনি সরবরাহের জন্য উদ্বেগজনক।’
অন্য একটি গ্লোবাল ট্রেড হাউজও উৎপাদন পূর্বাভাস কমিয়ে ৩ কোটি ২৪ লাখ টন নির্ধারণ করেছে। প্রতিষ্ঠানটির আশঙ্কা, এ মৌসুমে মহারাষ্ট্রে চিনি উৎপাদন কমে ১ কোটি ১৩ লাখ টনে ঠেকবে।