বিদেশি ঋণ অনেক কম পাওয়া যাচ্ছে প্রত্যাশার চেয়ে

স্টাফ রিপোর্টার

সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ্রের প্রভাব পড়েছে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বাস্তবায়নের হার গত এক যুগের মধ্যে সবচেয়ে কম। অর্থ সংকট ছিল না, এমন প্রকল্পের অগ্রগতিও আশানুরূপ হয়নি। অগ্রাধিকার পাওয়া মেগা প্রকল্পের কাজও চলছে ঢিমেতালে। আর ব্যয় করতে না পারায় বিদেশি ঋণের অর্থছাড় কমে গেছে। আগামীতেও ঋণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি কমিয়ে দিয়েছে উন্নয়ন সহযোগীরা। এ বাস্তবতায় সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (আরএডিপি) বিদেশি ঋণের অংশ কমিয়ে ধরা হচ্ছে।

চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত গেল সাত মাসে বিদেশি ঋণের অর্থছাড় গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৯ শতাংশ কম। মোট ৪২৬ কোটি ডলার অর্থছাড় করেছে বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীরা। গত অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ৪৬৯ কোটি ডলার।

অর্থবছরের গত সাত মাসে উন্নয়ন সহযোগীদের সহায়তার প্রতিশ্রুতি আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে কমেছে ৬২ শতাংশেরও বেশি। মাত্র ১৭৭ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে এ সময়। গত অর্থবছরের একই সময়ে ঋণ এবং অনুদানের প্রতিশ্রুতি ছিল ৪৭০ কোটি ডলারের। চলতি অর্থবছর শুধু উন্নয়ন প্রকল্পের বিপরীতে ৯২ হাজার ২০ কোটি টাকা পাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল সরকারের। এর বাইরে বাজেট সহায়তার অর্থও রয়েছে।

বিদেশি ঋণের অর্থছাড় এবং প্রতিশ্রুতি কমলেও ঋণের সুদাসল পরিশোধের পরিমাণ বেড়েছে। অর্থবছরের গেল সাত মাসে ১২৮ কোটি ডলারেরও বেশি পরিশোধ করা হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ১২২ কোটি ডলার। এ পরিস্থিতিতে চলতি অর্থবছরের আরএডিপিতে বিদেশি ঋণের অংশে বড় ধরনের কাটছাঁট করা হচ্ছে। মূল এডিপির বরাদ্দ থেকে সাড়ে ১৮ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে খসড়া চূড়ান্ত করেছে পরিকল্পনা কমিশন।

সূত্রমতে, সংশোধনের পর এডিপির আকার দাঁড়াচ্ছে ২ লাখ ২৭ হাজার ৫৬৬ কোটি টাকা। মূল এডিপির আকার ছিল ২ লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ স্থানীয় উৎসের অর্থ ব্যয়েও দুর্বলতা সত্ত্বেও এ উৎসের সংশোধিত এডিপিতে এই উৎসের অর্থে কোনো কাটছাঁট হচ্ছে না। আগামী ১ মার্চ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) বৈঠকে সংশোধিত এডিপি চূড়ান্ত হতে পারে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রতিবেদন বলছে, এ অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে এডিপি বাস্তবায়নের হার ২৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে বাস্তবায়নের হার ছিল ২৪ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। এক যুগের মধ্যে আর কোনো অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে এত কম হারে বাস্তবায়ন হতে দেখা যায়নি।

সরকারের অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত আটটি ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্পের বাস্তবায়ন অগ্রগতিও ধীর। গত জানুয়ারি পর্যন্ত অর্থবছরের সাত মাসে মেট্রোরেল প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি ৬৩ শতাংশ। প্রকল্পটির নির্মাণকাজ আগামী জুনে শেষ হওয়ার কথা। ১১ বছর আগে প্রকল্পটির নির্মাণকাজ শুরু হয়।

পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের অগ্রগতি ৬৭ শতাংশ। এ প্রকল্পটির কাজও আগামী জুনে শেষ হওয়ার কথা। এক যুগ আগে শুরু হওয়া দোহাজারী হয়ে মিয়ানমারের কাছে ঘুমধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্পের অগ্রগতি মাত্র ৪১ শতাংশ। বারবার সংশোধনের পর আগামী জুনে প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়ার কথা।

জানতে চাইলে গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান সমকালকে বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়ন সক্ষমতার অভাবেই এমন পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থায় বাস্তবায়ন সক্ষমতা বাড়ানো এবং অগ্রাধিকারভিত্তিক পরিকল্পনা নেওয়া উচিত। পাইপলাইনে ৪৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ অব্যবহূত আছে। সেই অর্থ ব্যবহারের ব্যবস্থা করতে হবে। অথচ সংশোধিত এডিপির খসড়ায় করা হয়েছে একেবারেই তার উল্টো। স্থানীয় উৎসে না করে বিদেশি ঋণের ওপর কাটছাঁট করা হচ্ছে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *