চীনা কোম্পানির সঙ্গে টিকবে টেসলা?

স্টাফ রিপোর্টার

চীনের বাজারে গাড়ির দাম কমিয়েছে টেসলা। এর মাধ্যমে বিক্রি হয়তো আগের চেয়ে বেড়েছে, কিন্তু পরিস্থিতিকে ভবিষ্যতের জন্য খুব স্বস্তির বলে মনে করছেন না বিশ্লেষকরা। এমনকি টেসলার ভক্ত গ্রাহকরাও মনে করেন, কোম্পানিটির উচিত দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করা। বিশেষ করে বিদ্যুচ্চালিত গাড়ি খাতে যখন বিশ্বজুড়ে প্রতিযোগীর সংখ্যা বাড়ছে, তখন পরিকল্পনাও তেমন টেকসই হওয়া উচিত। খবর রয়টার্স।

দাম কমানোর ফলে জানুয়ারিতে টেসলার চীনের কারখানায় নির্মিত গাড়ি বিক্রির পরিমাণ ডিসেম্বরের চেয়ে ১৮ শতাংশ বেড়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, টেসলার মুনাফার মার্জিন বেশি হওয়ায় তা কোম্পানিটিকে এখন অন্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে এক ধরনের প্রতিযোগিতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে, যা শুধু চীনেই নয়, চীনের বাইরেও। তবে চীনে নতুন মডেল বাজারজাত করার ক্ষেত্রে পিছিয়ে টেসলা। বিদ্যুচ্চালিত গাড়ির ক্ষেত্রে গ্রাহকদের পছন্দ মাথায় রেখে তাদের নতুন মডেল বাজারে আনা উচিত।

চায়না প্যাসেঞ্জার কার অ্যাসোসিয়েশনের (সিপিসিএ) সাধারণ সম্পাদক চুই ডংশু বলেন, ‘‌টেসলা সবচেয়ে বড় যে সমস্যার মুখে পড়েছে, সেটি হলো ক্রেতার সামনে তাদের বিভিন্ন ধরনের পণ্য নেই। চীনের গ্রাহকরা কোন ধরনের গাড়ি পছন্দ করছেন সেটি তারা ধরতে পারছে না। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য কেবল দাম কমিয়ে দিলেই হবে না।’

এমনকি টেসলার প্রধান নির্বাহী ইলোন মাস্কও বলেছেন, চীনের বাজারেই সবচেয়ে বেশি প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হবে তার কোম্পানিকে। তবে চীনের ব্যবসা সম্পর্কে স্পষ্ট কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি টেসলা।

টেসলার ভাইস প্রেসিডেন্ট ও চীনের এক্সটারনাল কমিউনিকেশনসের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গ্রেস টাও এর আগে বলেছিলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও ভোগ উৎসাহিত করার জন্য বেইজিংয়ের আহ্বানে সাড়া দিয়ে চীনের বাজারে তাদের কোম্পানির গাড়ির দাম কমানো হয়েছে।

চীনের অ্যাসোসিয়েশন অব অটোমোবাইল ম্যানুফ্যাকচারার্সের প্রত্যাশা ২০২৩ সালের মধ্যে বিদ্যুচ্চালিত গাড়ি ও প্লাগ ইন হাইব্রিডের বিক্রি ৩৫ শতাংশ বেড়ে ৯০ লাখে পৌঁছবে, যা চীনের নতুন বিক্রি হওয়া গাড়ির এক-তৃতীয়াংশ।

টেসলার দ্বিতীয় বৃহত্তম বাজার হলো চীন। সেখানে বেড়েছে গাড়ি বিক্রির পরিমাণ। তবে এ বাজারে কমেছে টেসলার অংশীদারত্ব। ২০২০ সালে চীনের বিদ্যুচ্চালিত গাড়ির বাজারে টেসলার অংশীদারত্ব ছিল ১৫ শতাংশ, যা ২০২২ সালে এসে দাঁড়িয়েছে ১০ শতাংশে। এ মুহূর্তে চীনের বাজারে টেসলার দুটি মডেল রয়েছে। এগুলো হলো মডেল থ্রি সেডান ও মডেল ওয়াই ক্রসওভার।

সবশেষ দাম কমানোর পর চীনের বাজারে মডেল থ্রি সেডানের দাম শুরু হচ্ছে ৩৪ হাজার ডলার থেকে। এছাড়া মডেল ওয়াইয়ের দাম শুরু হচ্ছে ৩৮ হাজার ডলার থেকে। দীর্ঘ সময় লকডাউনের কারণে বন্ধ থাকার পর চলতি বছর শোরুমগুলো খুলতে শুরু করেছে। ফলে ক্রেতাদের সামনে এখন পছন্দ করার মতো অনেক বিকল্প তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় আরো বেশি প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হবে টেসলাকে।

বৈশ্বিক বিক্রির দিক দিয়ে গত বছর টেসলাকে ছাড়িয়ে গেছে বিওয়াইডি অটোমোবাইলস। বাজারমূল্য তো বেড়েছেই, সেসঙ্গে কোম্পানিটি ৬০ ধরনের বিদ্যুচ্চালিত গাড়ি ও প্লাগ ইন হাইব্রিড কার নিয়ে বাজারে রয়েছে। একই সঙ্গে নিও ইনকরপোরেশনেও সামনের বছর নতুন আরো পাঁচটি মডেল বাজারে আনার কাজ শুরু করেছে।

সব মিলিয়ে প্রডাক্ট লাইন বা পণ্যের বহুমুখিতাই এ মুহূর্তে টেসলার সামনে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন সাংহাইভিত্তিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান অটোমোটিভ ফোরসাইটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইয়াল ঝ্যাং। তিনি বলেন, ‘‌কেবল দাম কমালেই বাজার ধরতে পারবে না টেসলা। এখন যদি বিওয়াইডি বা অন্য ছোট ইভি নির্মাতা কোম্পানিগুলোও দাম কমিয়ে দেয়, তাহলে টেসলার দাম কমানোর প্রভাব চোখের পলকে অদৃশ্য হয়ে যাবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *