ফুরিয়ে গেল ইসলামীসহ চার ব্যাংকের টাকা ধারের সুকুক বন্ডও

স্টাফ রিপোর্টার

হাতে থাকা সব সুকুক বন্ড জমা দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা ধার করেছে চার ইসলামি ধারার ব্যাংক। ফলে ব্যাংক চারটির কাছে নতুন করে টাকা ধার নেওয়ার মতো আর কোনো ইসলামি বন্ড নেই।

ব্যাংক চারটি হলো ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিলাম কমিটি গতকাল মঙ্গলবার এই চারটিসহ মোট পাঁচটি ইসলামি ধারার ব্যাংককে ৪ হাজার ৬৫ কোটি টাকা ধার দেয়। অন্য ব্যাংকটি হলো সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক। এই ব্যাংকটির কাছে টাকা ধার করার মতো এখনো কিছু ইসলামি বন্ড হাতে রয়েছে।

জানা গেছে, ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলোর তারল্যসংকট নিরসনে গত ৪ ডিসেম্বর বিশেষ ব্যবস্থা চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন এ ব্যবস্থার নাম ইসলামিক ব্যাংকস লিকুইডিটি ফ্যাসিলিটি। এ সুবিধার আওতায় শুধু সুকুক বন্ড জমা দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ১৪ দিন মেয়াদে তারল্য সহায়তা নেওয়া যায়।

তিন মাস মেয়াদি আমানতে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের যে মুনাফার হার, এ ক্ষেত্রেও একই মুনাফা দিতে হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অকশন কমিটি তারল্য-সুবিধা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। মেয়াদ শেষ হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের হিসাব থেকে ধারের টাকা মুনাফাসহ ফেরত নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। নির্ধারিত সময়ে টাকা ফেরত দিতে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের লিয়েনে রাখা বন্ড থেকে তা সমন্বয় করা হয়।

সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর ট্রেজার বিভাগ সূত্র জানায়, গতকাল ইসলামী ব্যাংক দুই হাজার কোটি টাকার তারল্য–সুবিধা চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করে। এতে মুনাফার হার ধরা হয় ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এ ছাড়া ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংক ১ হাজার ৫০ কোটি টাকা ধার চেয়ে আবেদন করে। এতে মুনাফার হার ধরা হয় ৭ শতাংশ।

একইভাবে ইউনিয়ন ব্যাংক ১২২ কোটি টাকা, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ১২৫ কোটি টাকা ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ৭৬৮ কোটি টাকা ধার নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে। গতকালের পর সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ছাড়া অন্য চারটি ব্যাংকের হাতে নতুন করে আর টাকা ধার করার মতো কোনো সুকুক বন্ড নেই।

টাকা ধার নেওয়া একাধিক ইসলামি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ইসলামী ব্যাংকের সংকটের কারণে অন্য ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলোও তারল্যসংকটে পড়ে গেছে। সময় গড়ালেও এ সংকট কাটছে না। এ জন্য আগে যে টাকা ধার নেওয়া হয়েছে, তার মেয়াদ শেষ হওয়ায় নতুন করে আবার ধার নেওয়া হচ্ছে। শুধু বাড়তি মুনাফার অর্থ কেন্দ্রীয় ব্যাংককে পরিশোধ করতে হচ্ছে।

এদিকে গত নভেম্বর ও ডিসেম্বরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চাহিদামতো বাধ্যতামূলক নগদ জমার (সিআরআর) অর্থ সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়েছে উল্লেখিত পাঁচটি ইসলামি ধারা ব্যাংক। এ জন্য কোনো সুকুক বন্ড ছাড়াই বছরের শেষ দিনে বিরল ব্যবস্থায় এই পাঁচ ব্যাংককে এক দিনের জন্য টাকা ধার দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যার মুনাফার হার ছিল ৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ।

নতুন করে আবার টাকা ধারের বিষয়ে জানতে ব্যাংক পাঁচটির শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কেউ ফোন ধরেননি।

২০১৭ সালে মালিকানা পরিবর্তনের পর ইসলামী ব্যাংক ও এসআইবিএল থেকে নামে-বেনামে অনেক টাকা বের করে নেয় একটি পক্ষ। অন্য তিনটি ব্যাংকের আর্থিক পরিস্থিতিও খারাপ। মালিকানা পরিবর্তনের আগে ইসলামী ব্যাংকের ঋণ ও বিনিয়োগ বিবেচনায় সবচেয়ে বড় শাখা ছিল মতিঝিলের স্থানীয় শাখা। এখন সবচেয়ে বড় শাখা চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ।

ঋণ অনিয়মের কারণে তারল্যসংকটে পড়া এসব ব্যাংক এখন উচ্চ সুদে আমানত সংগ্রহের প্রতি ঝুঁকছে। ৯ শতাংশ সুদেও টাকা ধার করছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত ডিসেম্বরের মাঝামাঝিতে এই ৫ ব্যাংকের ১০ কোটি টাকার বেশি ঋণ বিতরণ ও আদায়ের তথ্য সংগ্রহ করা শুরু করেছে। পাশাপাশি ইসলামী ব্যাংক ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে পর্যবেক্ষক বসিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *