রাশিয়ায় এখনো ব্যবসা করছে জি৭-ইউরোপের ৯০% কোম্পানি

স্টাফ রিপোর্টার

ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন শুরুর পর রাশিয়ার ওপর নানা ধরনের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে থাকে পশ্চিমা বিশ্ব। অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠান রাশিয়া থেকে নিজেদের ব্যবসা গুটিয়ে নেয়। এর মধ্যে ছিল অ্যামাজন থেকে স্যামসাংয়ের মতো কোম্পানিও। সে সময় প্রায় সব বহুজাতিক ও পশ্চিমা কোম্পানিই রাশিয়ার বাজার ছাড়ার কথা জানিয়েছিল। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রায় এক বছর পর এসে দেখা যাচ্ছে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও জি৭ জোটের বেশির ভাগ কোম্পানিই এখনো রাশিয়া ছেড়ে যায়নি। দেশটিতে তাদের ব্যবসা এখনো অব্যাহত। খবর আনাদোলু এজেন্সি।

সম্প্রতি সুইজারল্যান্ডভিত্তিক সেন্ট গ্যালেন বিশ্ববিদ্যালয় এ-সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কেবল ৮ দশমিক ৫ শতাংশ ইইউ ও জি৭ জোটের দেশ রাশিয়া থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছে। অন্যরা যথারীতি আগের মতোই দেশটিতে ব্যবসা পরিচালনা করছে।

২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরু করে রাশিয়া। সে সময় এর নাম দেয়া হয় বিশেষ সামরিক অভিযান। এ হামলাকে অন্যায় ও অন্যায্য উল্লেখ করে বিভিন্ন খাত ও দেশ রাশিয়াকে অর্থনৈতিকভাবে চাপে ফেলতে দেশটির বিরুদ্ধে নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এর মধ্যে কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান রাশিয়ায় কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়, কেউ কেউ সরবরাহ বন্ধ রাখে। অনেক প্রতিষ্ঠানই রাশিয়া থেকে বিনিয়োগ তুলে নেয় বা অংশীদারত্ব বাতিল করে।

প্রতিবেদন বলছে, ২০২২ সালের এপ্রিল পর্যন্ত রাশিয়ায় ইইউ ও জি৭ জোটভুক্ত দেশগুলোর মালিকায় ছিল ২ হাজার ৪০৫টি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে ৯ শতাংশেরও কম প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়েছে বা বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়, বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে সদর দপ্তর এমন প্রতিষ্ঠান সবচেয়ে বেশি রাশিয়া ছেড়েছে। সে তুলনায় ইইউ-ভিত্তিক বা জাপানে সদর দপ্তর এমন প্রতিষ্ঠানের রাশিয়া ছাড়ার হার কম। এর মধ্যে ইইউ ও জি৭ জোটের যে দেশগুলো রাশিয়ায় ব্যবসা পরিচালনা করছে তার মধ্যে ১৯ দশমিক ৫ শতাংশ জার্মানির, ১২ দশমিক ৪ শতাংশ মার্কিন মালিকানাধীন ও ৭ শতাংশ জাপানি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান।

গত সপ্তাহে প্রকাশিত আরেক পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ডের তালিকায় থাকা বেশির ভাগ কোম্পানিই রাশিয়ায় তাদের কার্যক্রম স্থগিত করেছে। যার অধিকাংশই গত বছরের মার্চে। বিশ্বের শীর্ষ প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশির ভাগই এখন রাশিয়ায় ব্যবসা পরিচালনা করছে না। অবশ্য কিছু চীনা কোম্পানি এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। শীর্ষ ২৫টি ব্র্যান্ডের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ব্র্যান্ডের সংখ্যা ১২টি, চীনের সাতটি, জার্মানির তিনটি, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান ও যুক্তরাজ্যের একটি করে।

গত বছরের ৯ মার্চ রাশিয়া থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নেয় শীর্ষ ব্র্যান্ড অ্যামাজন। সেই থেকে রাশিয়া ও বেলারুশের নতুন কোনো গ্রাহকের সঙ্গেই ব্যবসা করছে না প্রতিষ্ঠানটি। ওই মাসেই আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক চুকিয়ে ফেলে অ্যাপল। এমনকি নির্দিষ্ট কিছু পণ্য ছাড়া রাশিয়ার গ্রাহকদের জন্য সেবাও বন্ধ করে দেয়া হয়। তৃতীয় বিখ্যাত ব্র্যান্ড গুগলও একই মাসে রাশিয়ায় কিছু পরিষেবা স্থগিত করে। সেই সঙ্গে রাশিয়া কর্তৃপক্ষও যুদ্ধ সম্পর্কে ভুল তথ্য উপস্থাপনের অভিযোগে দেশে গুগলকে ব্লক করে দেয়। সে সময় মাইক্রোসফটও রাশিয়ায় নতুন পণ্য বিক্রি বন্ধের ঘোষণা দেয়। যদিও ইয়েল ইউনিভার্সিটির গবেষণা বলছে, এখনো রাশিয়ায় ব্যবসা অব্যাহত রেখেছে মাইক্রোসফট। এছাড়া স্টারবাকস, মার্সিডিজ, ডিজনি, শেলের মতো কোম্পানিগুলোও কার্যক্রম স্থগিতের ঘোষণা দেয়।

এক্ষেত্রে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থান ছিল কিছুটা ভিন্ন। ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের তথ্য অনুযায়ী, টিকটক কার্যক্রম স্থগিত করলেও বহাল রয়েছে ইউচ্যাটের ব্যবসা। চীনের কনস্ট্রাকশন ব্যাংক ও এগ্রিকালচার ব্যাংক রুশ কোম্পানিগুলোর অ্যাকাউন্ট খোলার ক্ষেত্রে কোনো বাধা সৃষ্টি করেনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *