অ্যান্ট গ্রুপের নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছেন জ্যাক মা

স্টাফ রিপোর্টার

আর্থিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অ্যান্ট গ্রুপের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছেন সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতা চীনা ধনকুবের জ্যাক মা। বিবৃতির মাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে খোদ অ্যান্ট গ্রুপ। সেখানে বলা হয়, একক অথবা অন্যের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কোনো শেয়ারহোল্ডার অ্যান্ট গ্রুপের নিয়ন্ত্রক হিসেবে থাকবেন না। আমাদের করপোরেট কাঠামো ও দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নকে আমরা আরো টেকসই করতে চাই। সেজন্যই বিষয়টি সমন্বয় করা হচ্ছে।

এর আগে অ্যান্ট গ্রুপের কাঠামো বেশ জটিল ছিল। সে অনুযায়ী গ্রুপটির ৫৩ দশমিক ৪৬ শতাংশের মালিকানা জ্যাক মার কাছে থাকায় পরোক্ষভাবে হলেও তিনি ছিলেন এর নিয়ন্ত্রক। সে পরিস্থিতি থেকে উত্তরণেই নতুন সমন্বয়ের ঘোষণা এল। এখন পরিস্থিতি এমন সৃষ্টি হয়েছে, কোনো পরিচালক বা শেয়ারহোল্ডার চাইলেই অ্যান্ট গ্রুপের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন না।

কয়েক বছর ধরেই বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ন্ত্রণে নানা ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছিল বেইজিং। ২০২০ সালে টেনে ধরা হয় অ্যান্ট গ্রুপের লাগাম। সে সময় গ্রুপটির ৩ হাজার ৭০০ কোটি ডলার সমমূল্যের আইপিও শেষ মুহূর্তে এসে বাতিল ঘোষণা করে চীনা নিয়ন্ত্রণ সংস্থা। ওই সময় প্রতিষ্ঠানটিকে পুনর্গঠনে বাধ্য করা হয়। ফলাফল হিসেবে এর নিয়ন্ত্রণ হারাতে হয় জ্যাক মাকে। এছাড়া তার সহপ্রতিষ্ঠিত আরেক প্রতিষ্ঠান আলিবাবার বিরুদ্ধেও নানা ধরনের অভিযোগ আনা হয়।

২০২১ সালেই রয়র্টাসের প্রতিবেদনে বিশেষ সূত্রের বরাত দিয়ে জানানো হয় যে জ্যাক মা অ্যান্ট গ্রুপের নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দিতে পারেন। সে সময় জানা গিয়েছিল, নিজের কাছে থাকা কিছু ভোটিং ক্ষমতা প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এরিক জিংয়ের কাছে হস্তান্তর করেছেন তিনি।

ওরিয়েন্ট ক্যাপিটাল রিসার্চের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অ্যান্ড্রিউ কলিয়ার বলেন, নিজের প্রতিষ্ঠিত অ্যান্ট ফাইন্যান্সিয়াল কোম্পানি থেকে জ্যাক মার বিদায়ের অর্থ অর্থ হলো, চীনা নিয়ন্ত্রক সংস্থা চাইছে বড় বেসরকারি বিনিয়োগগুলো থেকে এর নেতৃত্বের ক্ষমতা কমিয়ে ফেলতে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে দেশটির অর্থনীতির সবচেয়ে উৎপাদনশীল খাতটি বিপাকে পড়বে।

উল্লেখ্য, একটা সময় পর্যন্ত জ্যাক মা ছিলেন চীনের শীর্ষ ধনী ব্যক্তি। তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কড়াকড়িতে পুঁজিবাজারে আলিবাবার শেয়ারদরে ধস নামে। তার সম্পদ ৫ হাজার কোটি ডলার থেকে অর্ধেকের নিচে নামে। কিছু বিশ্লেষক মনে করেন, আলিবাবার মতো একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এতই ক্ষমতাশালী হয়ে উঠছিল যে তাকে ঠেকাতে নানা পদক্ষেপ নেয় বেইজিং। পাশাপাশি জ্যাক মার স্পষ্টভাষিতাও ক্ষমতাসীনদের চিন্তার কারণ হয়ে উঠছিল। প্রযুক্তিবিষয়ক এক সম্মেলনে জ্যাক মা চীনের ব্যাংকগুলোর সমালোচনা করেছিলেন। পাশাপাশি তিনি ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের প্রশংসা করেন। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে চীনের আর্থিক খাতেরও নানা সমালোচনা করেন তিনি।

এমন পরিস্থিতিতে পুরো আর্থিক প্রযুক্তি খাতের শিল্পগুলোর ওপর কঠোর নীতি আরোপ করে চীন। দেশটির সবচেয়ে বড় ডিজিটাল পেমেন্ট গেটওয়ে আলিপের কার্যক্রম সঠিক নয় বলেও দাবি করা হয়। একপর্যায়ে আলিবাবার বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতা আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ আনে চীন। বলা হয়, বছরের পর বছর ধরে বাজারে নিজের অবস্থানের অপব্যবহার করেছে আলিবাবা। সব মিলিয়ে প্রতিষ্ঠানটিকে ২৮০ কোটি ডলার জরিমানা করা হয়। তবে ধারণা করা হয়, চীনা আর্থিক খাত নিয়ে জ্যাক মার সমালোচনাই এসবের পেছনের কারণ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *