কিবোর্ড ছাড়া টাইপিং করবেন যেভাবে

স্টাফ রিপোর্টার

টাইপিংয়ের জন্য কিবোর্ডের ব্যবহার সর্বত্র। ব্যক্তিগত পরিসর, অফিস বা ব্যবসা ক্ষেত্রে কম্পিউটার ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিবোর্ড অন্যতম অনুষঙ্গ। কিবোর্ড ছাড়া টাইপ করার বিষয়টি চলচ্চিত্রের পর্দায় দেখা গেলেও এখন তা আর অবাস্তব নয়। দক্ষিণ কোরিয়ার একদল গবেষক বিশ্বের প্রথম মেটা লার্নিং বৈদ্যুতিক স্কিন প্রযুক্তি উন্নয়ন করেছেন, যার মাধ্যমে কিবোর্ড ছাড়াই টাইপ করা যাবে। খবর দ্য কোরিয়া হেরাল্ড।

২১ ডিসেম্বর দেশটির বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। কোরিয়া অ্যাডভান্সড ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির কম্পিউটিং অধ্যাপক জো সুং-হো, সিউল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং অধ্যাপক কো সেউং-হওয়ান ও স্ট্যানফোর্ডের রাসায়নিক প্রকৌশলের অধ্যাপক ঝেনান বাওয়ের গবেষণা দল এ উদ্ভাবনের জন্য স্প্রে অন স্মার্ট স্কিন উপায় নিয়ে হাজির হয়েছেন।

গবেষকরা হাতের ওপর বৈদ্যুতিকভাবে সংবেদনশীল তরল স্প্রে করেন। স্প্রে করার পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে হাতে ন্যানোমিটার মোটা মেশ প্রিন্ট হয়, যা হাতের পেছন পর্যন্ত প্রসারিত হয়। হাত নাড়ানোর ফলে মেশ সংকুচিত বা প্রসারিত হয় এবং এটি বৈদ্যুতিক সিগন্যাল তৈরি করে। একটি ব্লুটুথ মডিউলের মাধ্যমে এ সিগন্যাল রিসিভ করা হয়। এটি ফোরআর্মের শেষ দিকে মেশের সঙ্গে যুক্ত থাকে। সেখানে যে তথ্য সংরক্ষিত হয় তা এরপর কম্পিউটারে তরঙ্গের মাধ্যমে পাঠানো হয়।

গবেষকরা এরপর কম্পিউটারের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে হাতের বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পর্কে জানার সুযোগ দেয়। গবেষকরা নিশ্চিত করেছেন, নির্দিষ্ট কার্যক্রম নিয়ে পরীক্ষার পর ভার্চুয়াল স্পেসে বিভিন্ন কাজ করা যাবে। উদাহরণস্বরূপ, গবেষকরা শুধু হাত নাড়ানোর মাধ্যমে কম্পিউটারে টাইপ করতে পেরেছেন। মূলত হাতে স্প্রে করার পর একজন মানুষ কীভাবে কিবোর্ডে টাইপ করে সে বিষয়ে জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে এ সফলতা অর্জন সম্ভব হয়েছে। এমনকি কোনো বস্তু হাতে ধরে রাখার মাধ্যমে আঁকাও সম্ভব হয়েছে।

গবেষকদের তথ্যানুযায়ী, নতুন পদ্ধতিতে একটি বস্তু হাতে ধরার মাধ্যমে সেটি আঁকাও সম্ভব হয়েছে। দেশটির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় জানায়, বর্তমানে বৈদ্যুতিক স্ক্রিন প্রযুক্তিসংবলিত যেসব ডিভাইস রয়েছে, সেগুলো আকারে অনেক বড় ও ব্যবহার কঠিন। পাশাপাশি মানবদেহের বিভিন্ন কার্যক্রম শনাক্তে এগুলো শতভাগ সফল নয়।

গবেষকরা জানান, বর্তমানে যেসব ওয়্যারেবল ডিভাইস রয়েছে সেগুলোর পরিধি বাড়ানো যাচ্ছে না। কেননা এগুলো মূলত বিভিন্ন কারণে ও উদ্দেশ্যে সংগৃহীত তথ্যের ওপর নির্ভরশীল। মন্ত্রণালয় জানায়, নতুন উদ্ভাবনের মাধ্যমে প্রতিটি কাজের জন্য তথ্য সংগ্রহের মাত্রা কমবে। পাশাপাশি শরীরের ওপর স্প্রে করার সুবিধা থাকায় ভবিষ্যতে ওয়্যারেবল ডিভাইসগুলোর ব্যবহারিক পরিধি বাড়বে।

এক বিবৃতিতে অধ্যাপক জো ও কো জানান, নতুন গবেষণাটির মাধ্যমে প্রথমবারে মতো বৈদ্যুতিক স্ক্রিন ও উন্নত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির সমন্বয় করা হয়েছে। এ প্রযুক্তির হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার ভবিষ্যতে মেটাভার্স, অগমেন্টেড ও ভার্চুয়াল রিয়েলিটি, রিমোট ট্রিটমেন্ট ও রোবট ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের উন্নয়নে সহায়তা করবে। নেচার ইলেকট্রনিকস নামের একটি মাসিক অনলাইন পিয়ার রিভিউ জার্নালে গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *