পাম অয়েল রফতানিতে কঠোর নীতি ইন্দোনেশিয়ার
পাম অয়েল রফতানিতে আবারো কঠোর হলো ইন্দোনেশিয়া। পণ্যটির রফতানি কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির সরকার। সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোকে রফতানির তুলনায় স্থানীয় বাজারে সরবরাহ বাড়াতে বলা হয়েছে। আজ থেকেই এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হচ্ছে। রফতানি কমানোর প্রধান উদ্দেশ্য স্থানীয় বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করার মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখা।
নতুন এ নীতি পর্যালোচনা করে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, আগে ইন্দোনেশিয়ার কোম্পানিগুলো স্থানীয় বাজারে সরবরাহকৃত পাম অয়েলের তুলনায় আট গুণ বেশি রফতানি করতে পারত। নতুন নীতিমালায় এটি ছয় গুণে নামিয়ে আনা হয়েছে।
মেরিটাইম ও বিনিয়োগবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, স্থানীয় বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করতে, বিশেষ করে আগামী বছরের প্রথম প্রান্তিক মাথায় রেখে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বুদি সান্তোস বলেন, রমজান মাস ও ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বাজারে ভোজ্যতেলের চাহিদা আকাশচুম্বী হয়ে ওঠে। সে সময় সরবরাহ ও বাজারদর নিয়ন্ত্রিত রাখতেই এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
এদিকে সরকারের এ ঘোষণার পর রফতানি বাজারে মালয়েশিয়ান পাম অয়েলের ভবিষ্যৎ সরবরাহ মূল্য বেড়ে টনপ্রতি ৪ হাজার ১৯৩ রিঙ্গিত বা ৯৫০ ডলার ৭৯ সেন্টে উন্নীত হয়েছে।
বিদায়ী বছরের এপ্রিলে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য অপরিশোধিত পাম অয়েল ও পরিশোধিত পণ্যের রফতানি বন্ধ ঘোষণা করে বিশ্বের শীর্ষ উৎপাদক এ দেশ। উদ্দেশ্য ছিল স্থানীয় প্রক্রিয়াকরণ শিল্পকে আরো সমৃদ্ধ করা এবং বাজারে সরবরাহ বাড়ানোর মাধ্যমে দাম নিয়ন্ত্রণে আনা। কিন্তু এ সিদ্ধান্তের কারণে বিশ্বজুড়ে ভোজ্যতেলের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে।
এদিকে তিন সপ্তাহের মধ্যেই বাজার নিয়ন্ত্রণে এলে দেশটি নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেয়। কিন্তু এর পরও নেতিবাচক প্রভাব রয়ে যায় রফতানিতে। পুরো বছরের রফতানি কমে যাওয়ার পেছনে এ বিষয়টিকেই দায়ী করা হচ্ছে।
বিদায়ী বছর ইন্দোনেশিয়ার পাম অয়েল রফতানি ৩ কোটি ৪৬ লাখ ৭০ হাজার টনে পৌঁছতে পারে। ২০২১ সালে রফতানির পরিমাণ ছিল ৩ কোটি ৭৭ লাখ ৮০ হাজার টন। সে হিসেবে রফতানি ৩১ লাখ ১০ হাজার টন কমতে পারে। দেশটির পাম অয়েল ফান্ডের (বিপিবিপিকেএস) প্রধান নির্বাহী এডি আব্দুর রহমান এ তথ্য জানিয়েছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রফতানি নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নিলেও পাম অয়েল রফতানিতে গতি ফেরেনি। ডিএমও নীতিমালার প্রতিবন্ধকতার কারণে ব্যবসায়ীরা রফতানিতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। বর্তমানে দেশটিতে পাম অয়েল ও পাম ফলের মজুদ আকাশচুম্বী। মজুদাগারে নষ্ট হচ্ছে এসব পণ্য। তার ওপর নতুন করে রফতানিতে কঠোরতা পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলতে পারে।
ইন্দোনেশিয়ায় পাম অয়েল উৎপাদন কমার আশঙ্কাও রয়েছে। ফলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভোজ্যতেলের বাজার আবারো অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। সম্প্রতি মার্কিন কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) ফরেন এগ্রিকালচারাল সার্ভিস (এফএএস) একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে ইন্দোনেশিয়ায় পাম অয়েল উৎপাদন কমার পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইন্দোনেশিয়া পাম অয়েল রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় চাষীরা উৎপাদন কমিয়ে দেন, যা পুরো বছরের উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। অন্যদিকে উন্নত সার ব্যবহারের অভাবও উৎপাদনে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। ২০২২-২৩ বিপণন মৌসুমে ইন্দোনেশিয়ায় ৪ কোটি ৪৭ লাখ টন পাম অয়েল উৎপাদন হতে পারে।