টানা তৃতীয় বছরের মতো শীর্ষ গাড়ি বিক্রেতা টয়োটা

স্টাফ রিপোর্টার

চলতি বছরের প্রথম ১১ মাসে বিশ্বজুড়ে ৯৫ লাখ ৬০ হাজার ইউনিট গাড়ি বিক্রি করেছে টয়োটা। ২০২১ সালেও প্রায় একই সংখ্যক গাড়ি বিক্রি করেছিল জাপানি প্রতিষ্ঠানটি। এ নিয়ে জার্মান প্রতিদ্বন্দ্বী ফক্সওয়াগনকে হটিয়ে তৃতীয় বছরের মতো বিশ্বের শীর্ষ গাড়ি নির্মাতা হতে যাচ্ছে টয়োটা। জার্মান গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটির তুলনায় টয়োটা ২১ লাখ ৪০ হাজার বেশি গাড়ি বিক্রি করেছে। এর মধ্যে টয়োটার সাবসিডিয়ারি দাইহাতসু মোটর ও হিনো মোটরসের গাড়ি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

নিক্কেই এশিয়ার একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি-নভেম্বর সময়ে ফক্সওয়াগনের বিক্রি ৯ শতাংশ কমে গেছে। পুরো বছরের হিসাবে টয়োটাকে ছাড়িয়ে যেতে ডিসেম্বরে সংস্থাটিকে মাসিক গড়ের চেয়ে তিন গুণ বেশি গাড়ি বিক্রি করতে হবে। তবে টয়োটা সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানের বিক্রীত গাড়ি বাদ দিয়েই ফক্সওয়াগনকে ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।

চীন ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় শক্তিশালী অবস্থান চলতি বছর টয়োটাকে অনেক এগিয়ে দিয়েছে। যদিও বিশ্বজুড়ে সেমিকন্ডাক্টরের ঘাটতির মতো প্রতিবন্ধকতাগুলোর কারণে স্বাভাবিক চাহিদা মেটাতে হিমশিম খেয়েছে গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। যন্ত্রাংশ ঘাটতির কারণে মহামারীর পুরো সময়ে সংস্থাগুলোকে বার বার গাড়ি উৎপাদন স্থগিতের মতো সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।

দাইহাতসু ও হিনো বাদ দিয়ে টয়োটার গাড়ি বিক্রি চীনে ২ শতাংশ বেড়েছে। চলতি বছরের মাঝামাঝিতে চীনা কারখানায় উৎপাদন সক্ষমতা বাড়িয়েছিল সংস্থাটি। এ উদ্যোগ সংস্থাটিকে কভিডজনিত মন্দা কাটিয়ে গাড়ি বিক্রি পুনরুদ্ধার করতে সহায়তা করেছে। সংস্থাটির বিশেষ করে করোলা ও ক্যামরি সেডান গাড়ি সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে।

এদিকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় স্পোর্ট ইউটিলিটি ভেহিকলগুলো (এসইউভি) জনপ্রিয় ছিল। ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডে সংস্থাটি গাড়ি বিক্রিতে দুই অংকের প্রবৃদ্ধি পেয়েছে। ফক্সওয়াগন এশিয়ায় তেমন সাড়া ফেলতে পারেনি। চীনে সংস্থাটির গাড়ি বিক্রি ৬ শতাংশ বেড়েছে। যদিও এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে বিক্রি ৬ শতাংশ বেড়েছে।

চীনে লকডাউনের মতো কভিডজনিত বিধিনিষেধ গাড়ি শিল্পের যন্ত্রাংশ সরবরাহ এবং শিপিং ব্যাহত করেছে। এ কারণে ফক্সওয়াগনের মূল ভিত্তি উলফসবার্গের কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। ফক্সওয়াগনের মোট গাড়ির প্রায় ৪০ শতাংশই বিক্রি হয়েছে চীনে। যেখানে টয়োটার ক্ষেত্রে এ হার ২০ শতাংশ। বিশ্বের বৃহত্তম এ গাড়ির বাজারে অনেক পরে প্রবেশ করেছে জাপানি প্রতিষ্ঠানটি। তবে সংস্থাটি লকডাউন ও চিপ ঘাটতির মতো প্রভাবগুলো সীমিত করতে পেরেছিল।

চায়না অ্যাসোসিয়েশন অব অটোমোবাইল ম্যানুফ্যাকচারার্স এ বছর নতুন গাড়ি বিক্রি বাড়ার পূর্বাভাস দিয়েছে। কিন্তু সরকারের জিরো কভিড নীতি কারখানা ও ডিলারশিপের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ করতে বাধ্য করেছিল। যদিও চলতি মাসের শুরুতে এ নীতি থেকে সরে আসে বেইজিং। কভিডজনিত বিধিনিষেধ তুলে দেয়ায় টয়োটা ও ফক্সওয়াগনের গাড়ি বিক্রি বেড়ে যেতে পারে। তবে কিছুদিন ধরে পুনরায় চীনজুড়ে বিপুলসংখ্যক সংক্রমণ নতুন সংকট তৈরি করেছে। এ পরিস্থিতি জানুয়ারি থেকে গাড়ির চাহিদাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

টয়োটা উত্তর আমেরিকা ও জাপানেও নানা প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়েছিল। এ কারণে বাজার দুটিতে সংস্থাটির গাড়ি বিক্রি প্রায় ১০ শতাংশ কমে যায়। আবার ফক্সওয়াগনের শক্তিশালী বাজার পশ্চিম ইউরোপে গাড়ি বিক্রি ৭ শতাংশ কমে গেছে।

তবে বিদ্যুচ্চালিত গাড়ি (ইভি) বিক্রি টয়োটার চেয়ে এগিয়ে রয়েছে ফক্সওয়াগন। বছরের প্রথম ১১ মাসে জার্মান সংস্থাটি ৩ লাখ ৬০ হাজার ইউনিট ইভি বিক্রি করেছে। এ সংখ্যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৫ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে এ সময়ে ২০ হাজার ইউনিটেরও কম ইভি বিক্রি করেছে টয়োটা।

রেটিং এজেন্সি এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল পূর্বাভাস দিয়েছে, আগামী বছর বিশ্বজুড়ে নতুন যাত্রীবাহী গাড়ির বিক্রি ৬ শতাংশ বেড়ে ৮ কোটি ৩৬ লাখ ইউনিটে পৌঁছবে। তবে অন্তত ২০২৪ সাল পর্যন্ত গাড়ি শিল্পে চিপ ঘাটতির প্রভাব থাকবে বলে মনে করছে প্রতিষ্ঠানটি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *