রাশিয়া ও ইরানের নতুন বাণিজ্যপথ

স্টাফ রিপোর্টার

পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞা মোকাবেলায় আন্তঃমহাদেশীয় বাণিজ্যের নতুন পথ গড়ে তুলেছে রাশিয়া ও ইরান। নতুন পথে কাস্পিয়ান সাগর হয়ে উভয় দেশের কার্গো চলাচল ও পণ্যের সরবরাহ উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বেড়েছে। জাহাজ চলাচলের তথ্য নিরীক্ষার পর এমনটাই উঠে এসেছে। খবর আরটি।

নতুন বাণিজ্যপথটি শুরু হয়েছে আজভ সাগর ও রাশিয়ার ডন নদীর অভিমুখ থেকে। ইরানসংলগ্ন কাস্পিয়ান সাগর হয়ে ভারত মহাসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত পথটির দৈর্ঘ্য তিন হাজার কিলোমিটার, যা কোনো ধরনের বিদেশী নিষেধাজ্ঞার নাগালের বাইরে। ফলে সাম্প্রতিক মাসগুলোয় পথটি তুলনামূলক ব্যস্ত হয়ে উঠেছে।

জাহাজ চলাচলের তথ্য পর্যালোচনা করে জানানো হয়েছে, ইরান ও রাশিয়ার পণ্যবাহী কয়েকশ জাহাজ কাস্পিয়ান সাগরমুখী নদীগুলোয় চলাচল করেছে। তাছাড়া ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে ইরান রাশিয়ার জন্য নিরাপদ। শুধু ইরানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নয়নের স্বার্থে নয়, নতুন করিডোর ইরানীয় অঞ্চল হয়ে এশিয়া ও ভারতে পণ্য সরবরাহ করতেও গুরুত্বপূর্ণ অনুঘটক হিসেবে কাজ করবে। বিপরীতে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার ঝুঁকিও থাকবে না।

এ বিষয়ে কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপসাগর বিশেষজ্ঞ নিকোলাই কোজানভ জানান, তিনি ২০০৬ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত ক্রেমলিনের কূটনীতিক হিসেবে তেহরানে নিযুক্ত ছিলেন। তিনি বলেন, ‘ইউরোপীয় পরিবহন ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইরান ও রাশিয়া বিকল্প বাণিজ্য পথের দিকে মনোযোগী হয়েছে। নতুন সৃষ্ট এ রাস্তার জন্যই রাশিয়ার পক্ষে প্রাচ্যের দিকে ঝুঁকে পড়া সহজ হয়েছে। সমুদ্রপথে বাণিজ্যিক চলাচলের ওপর অবরোধ আরোপ করা যায়। কিন্তু স্থলপথে নজরদারিতে রাখা কঠিন। সবকিছুকে নজরদারির মধ্যে রাখা তো রীতিমতো অসম্ভব।’

রাশিয়ার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রধান সের্গেই কাতিরিনের দাবি, ইরানের সঙ্গে বাণিজ্যকে মৌলিকভাবেই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হয়। রাশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের মধ্যে সম্পর্কের সেতুবন্ধ হিসেবে কাজ করে এটি। নিয়ামক হিসেবে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গেও বাণিজ্যিক যোগাযোগ বজায় রাখছে। এ কারণেই গত সেপ্টেম্বরে ইকোনমিক ফোরামের বৈঠকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন জাহাজ, রেল ও রাস্তার নির্মাণ ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

তিনি বলেন, রাশিয়ার কোম্পানিগুলোর জন্য এ করিডোর দ্রুত ইরান, ভারত, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার বাজারে প্রবেশের সুযোগ সৃষ্টি করবে। পাশাপাশি সেসব দেশ থেকেও পণ্য আমদানি সুবিধাজনক হয়ে উঠবে।

ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের বিশেষজ্ঞ মারিয়া শাগিনা মনে করেন, নতুন এ পথ মূলত এমন একটি সরবরাহ ব্যবস্থাকে প্রতিষ্ঠা করার প্রয়াস যেখানে সব ধরনের নিষেধাজ্ঞা অকার্যকর। তিনি দাবি করেন, রাশিয়া ও ইরান আড়াই হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করছে কেবল বাণিজ্যপথের উন্নয়ন ও বিস্তৃতির জন্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *