গৌরীপুরের দুই বীরাঙ্গনা নারী মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি চায়

স্টাফ রিপোর্টার

১৯ ৭১ এর রণাঙ্গনে যুদ্ধ চলকালীন সময়ে ময়মনসিংহের গৌরীপুরের দুই মহিলা পাক হানাদার বাহিনীর হাতে ধর্ষিত হয়। এদের একজন হলেন গৌরীপুর উপজেলার অচিন্তপুর ইউনিয়নের শাহগঞ্জ বাজারে তহসীল অফিসের সন্নিকটে পেকুলাল রবিদাসের স্ত্রী মালতী রবি দাস। ১৯৭১ এ মালতীর বয়স ১৯ বছর সদ্য বিবাহিত; এ সময় তার একমাত্র সন্তান সুশীলের আনুমানিক বয়স ১০/১১ মাস হবে। অনেকদিন হল মালতি রবি দাসের স্বামী পেকুলাল রবিদাস মারা গেছেন। বর্তমানে ছেলে শুশীল স্থানীয়ভাবে একটি দোকানে কাপর ইস্ত্রী করে যা আয় করে তা দিয়ে কোনো রকমে সংসার চালায়; ওই আয়ে সংসার চলতে চায় না।

মালতী রবি দাস জানান, দিন তারিখ মনে নেই। তবে বর্ষা সময় আনুমানিক সকাল ১০ টা থেকে ১১টা হবে। আমি আমার শিশু বাচ্চাকে ও বৃদ্ধা শাশুড়ীকে নিয়ে ঘরে ছিলাম। হঠাৎ দু তিন জন পাক সৈন্য আমার ঘরে প্রবেশ করে এবং টেনে হ্যাচরে ঘরের বাহিরে নিয়ে আসে। আমার পরনের কাপর টেনে খুলে ফেলে আমার দেহটার উপর অত্যাচার শুরু করে। আমি অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলাম। তারপর আর কিছু বলতে পারবো না। আমি আমার ইজ্জত হারিয়েছি। যা শাহগঞ্জ বাজারের সবাই জানে। আমি আজ পর্যন্ত ইজ্জত হানির সম্মান হিসেবে বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাইনি।

৫১ বছর দেশ স্বাধীন হয়েছে; কিন্ত প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি। আমি এখন বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি চাই।

আরেকজন গৌরীপুর উপজেলা রামগোপাল পুর ইউনিয়নের বলুহা গ্রামের ললিত মোহন দেব রায়ের কন্যা ‘জয়ন্তী রানী’ হানাদার বাহিনীর হাতে ধর্ষিত হয়। ১৯৭১ সালে এই পরিবারটি রামগোপাল পুর জমিদার বাড়ীতে বসবাস করতেন। দেশে যুদ্ধ শুরু হলে পাকসেনাদের ভয়ে পাশ্ববর্তী সবোধ মাষ্টারের বাড়ীতে যুবতি কন্যা জয়ন্তী রানী আশ্রয় নেয়। ১৯৭১ সালের জুলাই মাসে রাজাকার খালেক ও পসু মিয়ার সহযোগিতা নিয়ে মাইজকা রেলওয়ে ব্রীজে পাহারারত পাকবাহিনীর তিন সদস্য জয়ন্তী রাণীকে সবোধ মাস্টারের বাড়িতে ধর্ষন করে। দেশ স্বাধীনের পর জয়ন্তি রানীকে ময়মনসিংহে জৈনিক পোদ্দার ভোলা তালুকদার (জগদিশ) এর সাথে বিয়ে হয় । পরে তাদের ঘরে এক পুত্র সন্তান জন্ম হয়। বর্তমানে স্বামী পরিত্যাক্তা জয়ন্তী রানীর (৬৫) ছেলে স্বপন ও ছোট ভাই গৌরাঙ্গকে নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এই বৃদ্ধাবয়সে জয়ন্তী রাণী ছেলেকে নিয়ে সেলাইয়ের কাজ করে অতি কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। এখন তার কাজ করার অবস্থা নেই। অসুখ তার দেহে বাসা বেধেছে।

ভূমিহীন জয়ন্তী রানী বলেন, আমি আমার সম্ভমহানীর সন্মান চাই, আসছে ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে স্বীকৃতি চাই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *