সবুজ প্রবৃদ্ধি অর্জনে প্রয়োজন মিশ্র অর্থায়ন

স্টাফ রিপোর্টার

বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ২০৩০ সালের মধ্যে প্রায় ৯২৮ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। যেখানে দেশীয় উৎস থেকে ৮৫ শতাংশ অর্থায়ন আসবে। আর এতে ব্যক্তিখাতের অবদান থাকবে ৪২ শতাংশ। তবে ব্যক্তিখাত থেকে এত বিশাল অর্থায়ন আনতে নতুন করে মিশ্র অর্থায়ন পদ্ধতি আলোচনায় এসেছে। সবুজ প্রবৃদ্ধি অর্জনে নতুন এ অর্থায়নে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।

বুধবার (২৩ নভেম্বর) পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি ভবনে বাংলাদেশে সবুজ প্রবৃদ্ধি অর্জনে মিশ্র অর্থায়ন শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) আয়োজিত এ সেমিনারে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। সেমিনারে ইউএনডিপি ও ব্রিটিশ হাইকমিশনের সহায়তায় একটি গবেষণাপত্র তুল ধরা হয়।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, সবুজ প্রবৃদ্ধি নিয়ে আমরা কাজ করছি। প্রধানমন্ত্রী এরই মধ্যে পরিবেশের ক্ষতি করে এমন প্রকল্প না করার নির্দেশনা দিয়েছেন। এখন পরিবেশ নিয়ে অর্থায়ন আসছে। আমাদের এখন নিরাপদ পানি ও খাদ্য নিশ্চিত করা এবং দারিদ্র্য দূরীকরণ বেশি গুরুত্বপূর্ণ। নির্দিষ্ট খাতে অর্থায়ন আসতে পারে, তবে শর্তারোপ করে অর্থায়ন সীমিত করা সমীচীন নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, উন্নয়ন অর্থায়ন নিয়ে এখন অনেক আলাপ হচ্ছে। কারণ, উন্নত দেশে হতে আমাদের অনেক অর্থায়ন দরকার হবে। মিশ্র অর্থায়নের ধারণা নতুন এলেও এটা নতুন কোনো ফান্ড নয়। তবে নতুনভাবে সংজ্ঞায়ন করা হচ্ছে। যেখানে এনজিও, সরকারি-বেসরকারি ও শেয়ারবাজার থেকেও অর্থায়ন আসবে।

পরিবেশের বিরূপ প্রতিক্রিয়া সামলে নিয়ে সবুজ প্রবৃদ্ধি অর্জনে যে বিশাল অর্থায়ন প্রয়োজন সেখানে মিশ্র অর্থায়ন একটি নতুন ধারণা। বাংলাদেশে এ পদ্ধতিটি কীভাবে কাজ করতে পারে তা নিয়ে একটি কাঠামো ঠিক করতে সহায়তা করছে ইউএনডিপি। আর এরই অংশ হিসেবে বিষয়টি নিয়ে পরামর্শ করতে বিভিন্ন অর্থনীতিবিদ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গবেষকদের সমন্বয়ে এই পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা হয়।

এটি এমন একটি ধারণা যেখানে ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগ ঝুঁকি বহন করবে সরকার। ফলে বেসরকারি খাত সহজে বিনিয়োগে আগ্রহী হবে। তাছাড়া সবুজ বিনিয়োগে বিভিন্ন সুবিধা ও করছাড়ের ব্যবস্থা মাধ্যমে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা হবে। আর সরকারি বেসরকারি ও সহায়তার অর্থ সমন্বয় করে একসঙ্গে ব্যবহার করা হবে।

সেমিনারে মূল গবেষণা প্রবন্ধ তুলে ধরেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। তিনি বলেন, ব্রাজিল, পেরু ও আফ্রিকান সাহারা অঞ্চলসহ এশিয়ার বেশকিছু দেশে এ মডেল সফলতা পেয়েছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি, কৃষি ও পরিবেশের ওপর বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তাবায়নে এ মডেল কাজ করছে। বিনিয়োগ চাহিদা পূরণেই একটি কার্যকরি প্রক্রিয়া হয়ে উঠছে। বাংলাদেশেও এসডিজি বাস্তবায়নে এমন সব তহবিল গঠন করতে পারে।

‘তবে এলডিসি পরবর্তী সহজ ঋণ আর না পাওয়া গেলেও ব্যাপক বিনিয়োগ দরকার বাংলাদেশের। এজন্য এ মডেল বাস্তবায়ন করতে একটি কাঠামো গঠন করতে হবে। ব্যক্তিখাতের জন্য একটি অ্যাকশন প্ল্যান করতে হবে। যেখানে কৃষি পক্রিয়াকরণ, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, সবুজ অবকাঠামো অগ্রাধিকার পেতে পারে।’ যোগ করেন তিনি। এজন্য চারটি ভাগে বিভক্ত করে একটি কাঠামো গঠনের তাগিদ দিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে এটার একটি সহায়ক পরিবেশ বিবেচনা করে কাজ করতে বলেন এ গবেষক।

সভাপতির বক্তব্যে জিইডি সচিব ড. কাউসার আহমেদ বলেন, সহজ শর্তে ও বাণিজ্যিক ঋণ কমে আসছে। ফলে সামনে এ ধরনের অনেক অর্থায়নের সুযোগ তৈরি করতে হবে।

সেমিনারে মুক্ত আলোচনায় মিশ্র অর্থায়নের বিভিন্ন দিক নিয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষক ও উন্নয়ন সহযোগী বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা আলোচনরা করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *