ইরানের রফতানি ৫ বছরের সর্বনিম্নে

চলতি বছরের ৫ নভেম্বর ইরানের ওপর নতুন করে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়েছে। তবে নিষেধাজ্ঞা শুরুর আগেই দেশটির অপরিশোধিত জ্বালানি তেল রফতানিতে এর প্রভাব পড়েছে।

চলতি বছরের অক্টোবরে ইরান থেকে এশিয়ার দেশগুলোয় জ্বালানি পণ্যটির মাসিভিত্তিক গড় রফতানি পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমে এসেছে।

আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় এসব দেশে ইরান থেকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল রফতানি কমেছে ৫৬ শতাংশের বেশি। মূলত নিষেধাজ্ঞা শুরুর আগেই ওয়াশিংটনের চাপে ইরান থেকে এশিয়ার দেশগুলো জ্বালানি পণ্যটির আমদানি কমিয়ে দেয়ায় এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। খবর রয়টার্স, ব্লুমবার্গ ও অয়েলপ্রাইসডটকম।

ইরান থেকে রফতানি হওয়া অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের অন্যতম ক্রেতা এশিয়ার দেশগুলো। চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, ভারতসহ এ অঞ্চলের দেশগুলো ভৌগোলিক নৈকট্যের কারণে পরিবহন ব্যয় কম লাগায় ইরান থেকে জ্বালানি পণ্যটি আমদানি করে। ইরানের রাজস্ব বিভাগের সূত্রের বরাতে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের অক্টোবরে এশিয়ার দেশগুলোয় প্রতিদিন গড়ে ৭ লাখ ৬২ হাজার ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেল রফতানি করেছে ইরান, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫৬ দশমিক ৪ শতাংশ কম। একই সঙ্গে গত পাঁচ বছরের মধ্যে অক্টোবরে ইরান থেকে এশিয়ার দেশগুলোয় এটাই জ্বালানি পণ্যটির সর্বনিম্ন রফতানির পরিমাণ।

ইরান থেকে রফতানি হওয়া কনডেনসেটের সবচেয়ে বড় ক্রেতা দক্ষিণ কোরিয়া। দেশটির সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালের অক্টোবরে দক্ষিণ কোরীয় আমদানিকারকরা সব মিলিয়ে ১ কোটি ৩০ লাখ ৭৬০ হাজার টন অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করেছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫ দশমিক ১ শতাংশ বেশি।

তবে গত অক্টোবরে ইরান থেকে জ্বালানি তেল আমদানি পুরোপুরি বন্ধ রেখেছে কোরীয় আমদানিকারকরা। এর আগে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে ইরান থেকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল ও কনডেনসেট আমদানি শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনে সিউল। ছয় বছরের মধ্যে গত সেপ্টেম্বরে প্রথমবারের মতো ইরানের জ্বালানি তেল আমদানি থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় দেশটি। এর পেছনে ওয়াশিংটনের চাপকে চিহ্নিত করেছেন বিশ্লেষকরা।

জাপান মার্কিন চাপের মুখে ইরান থেকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি পুরোপুরি বন্ধ না করলেও কমিয়ে দিয়েছে। গত অক্টোবরে ইরান থেকে জাপানে প্রতিদিন গড়ে ৪৮ হাজার ৩৩ ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেল রফতানি হয়েছে। গত ছয় মাসের মধ্যে ইরান থেকে জাপানে জ্বালানি পণ্যটির এটাই সর্বনিম্ন রফতানির পরিমাণ।

এদিকে ইরানে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে বরাবরই সরব ছিল বেইজিং। এর পরও চীনা আমদানিকারকরা ইরান থেকে জ্বালানি পণ্যটির আমদানি কমিয়ে দিয়েছেন। গত অক্টোবরে চীনের বাজারে প্রতিদিন গড়ে ২ লাখ ৪৭ হাজার ১৬০ ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেল রফতানি করেছে ইরান, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬৪ শতাংশ কম।

একই সময়ে ইরান থেকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানিতে এগিয়ে ছিল ভারত। অক্টোবরে ইরান থেকে ভারতে প্রতিদিন গড়ে ৪ লাখ ৬৬ হাজার ৪০০ ব্যারেল জ্বালানি তেল রফতানি হয়েছে, যা আগের মাসের তুলনায় দশমিক ২ শতাংশ কম। চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে (জানুয়ারি-অক্টোবর) ভারতের বাজারে দৈনিক গড়ে ৫ লাখ ৭৯ হাজার ৬০০ ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেল রফতানি করেছে ইরান।

তবে নভেম্বরের শুরুতে নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের পর আটটি দেশকে ইরান থেকে জ্বালানি তেল আমদানিতে বিশেষ ছাড় দিয়েছে ওয়াশিংটন। এ তালিকায় জাপান, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত রয়েছে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে আগামী দিনগুলোয় এশিয়ার দেশগুলো ইরান থেকে জ্বালানি পণ্যটির আমদানি বাড়াতে পারে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। এর ফলে নতুন করে আরোপিত মার্কিন নিষেধাজ্ঞার চাপ মোকাবেলা ইরানের অর্থনীতির জন্য কিছুটা হলেও সহজ হয়ে আসবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *