কোণঠাসা করতে মিত্রদের চাপ দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র
চীনের বাজারে অগ্রসর সেমিকন্ডাক্টর পণ্য ও সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তি রফতানিতে জাপানের ওপর চাপ দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। আরেক ঘনিষ্ঠ মিত্র দক্ষিণ কোরিয়ার ওপরও দীর্ঘদিন ধরে চিপ ফোর নামে সেমিকন্ডাক্টর শিল্প সংশ্লিষ্ট জোটে যোগ দিতে চাপ দিয়ে আসছিল। বেইজিংয়ের সঙ্গে ওয়াশিংটনের টানাপড়েনের চাপ পড়ছে মিত্র দেশগুলোর ওপর। নিক্কেই এশিয়ার সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে এমনটা দাবি করা হচ্ছে।
জাপান সরকারের একটি সূত্র নিক্কেই এশিয়াকে জানায়, ওয়াশিংটনের অনুরোধ নিয়ে অভ্যন্তরীণ আলোচনা শুরু করেছে টোকিও। বেইজিংয়ের পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় টোকিওর ওপর কেমনতর বিধিনিষেধ আরোপ হতে পারে তার হিসাব কষছেন কর্মকর্তারা। এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো মার্কিন মিত্ররা কীভাবে সাড়া দিচ্ছে সেদিকেও নজর রাখছে টোকিও।
সম্প্রতি জাপানের বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী ইয়াসুটুশি নিশিমুরা এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা এগিয়ে নেয়ার পাশাপাশি দেশীয় কোম্পানিগুলোর কথা শুনছি।
চীনের সেমিকন্ডাক্টর শিল্পকে সহায়তা করে এ ধরনের যন্ত্রাংশ, ডিজাইন সফটওয়্যার ও প্রকৌশলগত যেকোনো সহায়তায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে গত ৭ অক্টোবর বিশেষ নীতিমালা ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। গত বৃহস্পতিবার একটি মার্কিন থিংকট্যাংক আয়োজিত অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি অ্যালান এস্তেভেজ বলেন, আমরা আমাদের মিত্রদের সঙ্গে কথা বলছি। আমাদের এ নীতিতে কেউ অবাক হয়নি এবং তারা এটা অনুভব করছে যে একই নীতি তাদের কাছেও কাঙ্ক্ষিত।
বৈশ্বিক সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের মাত্র ১২ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে। অন্যদিকে তাইওয়ান ও দক্ষিণ কোরিয়া উভয়েরই রয়েছে ২০ শতাংশ হিস্যা। এশিয়ার আরেক শিল্প জায়ান্ট জাপানের হিস্যা ১৫ শতাংশ। মিত্রদের দিয়ে যদি বেইজিংয়ের ওপর আরো চাপ প্রয়োগ করা যায় তাহলে সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে চীনের সক্ষমতার প্রয়াস আরো প্রলম্বিত করা যাবে বলে মনে করে ওয়াশিংটন। ইলেকট্রনিকস খাত থেকে শুরু করে অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র নির্মাণে সেমিকন্ডাক্টর বা চিপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শিল্প উপকরণ। চীনের দ্রুত সম্প্রসারমান সামরিক বাহিনীর হাতে অত্যাধুনিক চিপ পৌঁছলে তা মার্কিন স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর হবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
চীনে চিপ ও চিপ নির্মাণপ্রযুক্তি রফতানির পাশাপাশি চীনা কোম্পানিতে মার্কিন নাগরিকদের কাজে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে ওয়াশিংটন। চীনের চিপ ফ্যাবে কর্মরত মার্কিন প্রকৌশলীরা এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরতে শুরু করেছেন। অনেকে ইউএস ডাচ কোম্পানি এএসএমএল হোল্ডিংসে যোগ দিয়েছেন। জাপানের সেমিকন্ডাক্টর শিল্পও এ ধরনের পদক্ষেপের আশঙ্কা করছে।
এদিকে চীনের সেমিকন্ডাক্টর শিল্পও যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের কঠোর নীতিতে টিকে থাকার যাবতীয় প্রস্তুতি নিচ্ছে। নিক্কেই এশিয়ার আরেক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিদেশী কোম্পানি থেকে দক্ষ প্রকৌশলী আকৃষ্টের চেষ্টা চালাচ্ছে চীনের প্রযুক্তি খাত। চীনে বিভিন্ন বহুজাতিক সেমিকন্ডাক্টর নির্মাতা কোম্পানিতে সম্প্রতি বড় আকারে কর্মী ছাঁটাই হয়। সেসব বিদেশী কর্মী আকৃষ্টে কোনো ধরনের রাখঢাক রাখেনি অনেক নিয়োগদাতা।
বিশ্বের শীর্ষ ড্রোন নির্মাতা ডিজেআইয়ের এক মানবসম্পদ কর্মকর্তা চীনভিত্তিক পেশাজীবী নেটওয়ার্কিং সাইট মাইমাইয়ে লেখেন, যেসব মার্ভেল কর্মী আমাদের সঙ্গে কাজ করতে চান তাদের স্বাগতম। উল্লেখ্য, সম্প্রতি বড় আকারে কর্মী ছাঁটাইয়ে গিয়েছিল মার্কিন চিপ ডেভেলপার কোম্পানি মার্ভেল।
এদিকে বিদেশী কোম্পানিগুলোর কর্মী ছাঁটাইকে সুবর্ণ সুযোগ হিসেবে দেখছে স্থানীয় চিপ নির্মাতা কোম্পানিগুলো। সাংহাইভিত্তিক চিপ শিল্প বিশেষজ্ঞ হু ইউনওয়াং নিক্কেই এশিয়াকে বলেন, যদি বিদেশী চিপ নির্মাতা কোম্পানিগুলো তাদের কর্মী ছাঁটাই করতে থাকে তাহলে স্থানীয় কোম্পানিগুলোর জন্য তা সুবর্ণ সুযোগ হিসেবে আবির্ভূত হবে। সোজা কথায় সকালে যে মার্ভেল কর্মী ছাঁটাই হয়েছেন দুপুরেই হয়তো তাদের সামনে বেশ কয়েকটি অফার ঝুলবে।