নেদারল্যান্ডসের কাছে হেরে বিদায় দ. আফ্রিকার

স্টাফ রিপোর্টার

অ্যাডিলেড ওভালে ঘটলো আরেকটি অঘটন। ইতিহাস গড়লো নেদারল্যান্ডস। নিজেদের শেষ ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার মতো শক্তিশালী দলকে ১৩ রানে হারিয়ে দিয়েছে ডাচরা। সে সঙ্গে প্রোটিয়াদের বিদায় নিশ্চিত করে দিয়েছে তারা এবং সঙ্গে বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের জন্য দারুন সুযোগ তৈরি করে দিলো নেদারল্যান্ডস।

পরের ম্যাচে বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের মধ্যকার বিজয়ী দল‌ই ভারতের সঙ্গে উঠে যাবে সেমিফাইনালে। সাকিব-বাবরদের দুই দলেরই পয়েন্ট সমান ৪ করে।

অ্যাডিলেড ওভালে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে অসাধারণ খেলেছিলো নেদারল্যান্ডস। মাত্র ৪ উইকেট হারিয়ে সংগ্রহ করে ১৫৮ রান। ১৫৯ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ১৪৫ রানেই থেমে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা।

পুরো ম্যাচে ব্যাটিং এবং বোলিং এমনকি ফিল্ডিংয়ে ডাচরা যেভাবে খেলেছে, দেখে মনে হয়েছে তারাই বুঝি দক্ষিণ আফ্রিকা। সবুজ জার্সিটা পরিবর্তন করে কমলা জার্সি পরে খেলতে নেমেছে। আর ডাচরা বুঝি সবুজ জার্সি পরে খেলতে নেমেছে। ম্যাচের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত কী দারুণ নিয়ন্ত্রন, কী অসাধারণ ব্যাটিং, বোলিং আর ফিল্ডিং- পুরো ম্যাচে কোনো মুহূর্তেই মনে হয়নি নেদারল্যান্ডস হেরে যেতে পারে।

অথচ, ডাচ বোলিংয়ের সামনে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটারদের কী ম্রিয়মান দেখা গেলো। কুইন্টন ডি কক বাউন্ডারি মেরে শুরু করেছিলেন সত্য; কিন্তু টেম্বা বাভুমার আড়স্থতা মোটেও কাটেনি তাতে। বরং, তার সেই আড়স্থতা পরবর্তীতে ভর করেছে পুরো দক্ষিণ আফ্রিকা ব্যাটিং লাইনআপের ওপর।

ডি’কক, রাইলি রুশো, এইডেন মারক্রাম, হেনরিক ক্লাসেন, ডেভিড মিলার, ওয়েইন পারনেল, কিংবা কেশভ মাহারাজ- কেউ কারো চেয়ে কম নয় টি-টোয়েন্টিতে। একাই ম্যাচ বের করে আনার ক্ষমতা রাখেন। এই বিশ্বকাপেই তো ১০৯ রানের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ইনিংস খেলেছেন রাইলি রুশো।

সেই তারাই কি না ডাচ বোলার ফ্রেড ক্লাসেন, পল ফন মিকেরেন, ব্র্যান্ডন গ্লোভার কিংবা বাস ডি লিডিদের সামনে নিদারুণ অসহায়। ব্যাট করাই যেন ভুলে গিয়েছিলেন। হঠাৎ লাফিয়ে ওঠা বল সামলাতে পারেন না, ক্যাচ তুলে দেন। মূলতঃ দুর্ভাগ ভর করলে সব দিক থেকে ভর করে, এটা আবারও প্রমাণ হলো।

১৫৯ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামার পর ডি ককের আত্মবিশ্বাসী শুরুর পাশে বড্ড বেমানান লাগছিল টেম্বা বাভুমার টেস্ট স্টাইলে টুকটুক করে ব্যাট করা। শেষে ১৩ বলে ১৩ রান করে ক্লাসেনের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান ডি কক। এ সময় দলের রান ২১।

এরপর বাভুমা নিজের খোলস ছেড়ে বের হওয়ার। কিন্তু ২টি বাউন্ডারি মারার পর পল ফন মিকেরেনের ইয়র্কারে বোল্ড হয়ে গেলেন তিনি। ২০ বলে ২০ রান করেন বাভুমা।

রাইলি রুশো ছিলেন অনেক বড় ভরসা। টি-টোয়েন্টিতে নির্দয় ব্যাটিং করে থাকেন তিনি। কিন্তু ডাচদের বিপক্ষে নিজেকে মেলে ধরতে পারলেন না। ১৯ বলে ২৫ রান করার পর ব্র্যান্ডন গ্লোভারের বলে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে ম্যাক্স ও’দাউদের হাতে ধরা পড়েন তিনি।

নিয়মিত বিরতিতে উইকেট পড়া শুরু হয় তখন। এইডেন মারক্রাম এবং ডেভিড মিলাররা নামের প্রতি মোটেও সুবিচার করতে পারলেন না। দু’জনই করেছেন সমান ১৭ রান করে। হেনরিক্স ক্লাসেন করেন ২১ রান। ওয়েইন পার্নেল তো মাত্র ২ বল খেলে কোনো রান না করেই বিদায় নেন।

কেশভ মাহারাজ ১২ বলে করেন ১৩ রান। কাগিসো রাবাদা ৮ বলে ৯ এবং অ্যানরিখ নরকিয়া মাত্র এক বল মোকাবেলা করে একটি বাউন্ডারি মেরেও পারেননি দলকে জেতাতে। শেষ পর্যন্ত ৮ উইকেট হারিয়ে ১৪৫ রানে থেমে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা।

প্রোটিয়াদের চেপে ধরতে ৭ জন বোলার ব্যবহার করেন নেদারল্যান্ডস অধিনায়ক। ফ্রেড ক্লাসেন সর্বোচ্চ ৪ ওভার বোলিং করেন এবং ২০ রান দিয়ে নেন ২ উইকেট। ব্র্যান্ডন গ্লোভার সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন। ২ উইকেট নেন বাস ডি লিডি। পল ফন মিকেরেন নেন ১ উইকেট।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *