আইফোন উৎপাদন ৩০ শতাংশ কমার শঙ্কা

স্টাফ রিপোর্টার

চীনে কভিড-১৯-এর সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে যে বিধিনিষেধ আরোপ করা হচ্ছে তার কারণে আগামী মাসে সেখানে অ্যাপলের আইফোন উৎপাদন অন্তত ৩০ শতাংশ কমে যাবে। এ বিষয়ে অবগত ও সরাসরি সম্পৃক্ত একটি সূত্রে তথ্যটি নিশ্চিত হওয়া গেছে। খবর রয়টার্স ও বিবিসি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই ব্যক্তি জানান, সাবেক হন হাই প্রিসিশন ইন্ডাস্ট্রি ও বর্তমান ফক্সকন শেনজেন শহরের আরেকটি কারখানায় উৎপাদন বাড়াতে কাজ করছে। চীনের মূল অংশে অবস্থিত ঝেংঝু কারখানায় প্রতিষ্ঠানটির দুই লাখের বেশি শ্রমিক রয়েছে। নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে যে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে সেটি কারখানায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। অনেক শ্রমিক সেখান থেকে পালাচ্ছে বলে জানা গেছে।

চীনের স্থানীয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে কারখানার একাধিক শ্রমিককে বেড়া টপকে পালাতে দেখা গেছে বলে প্রকাশিত প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে।

চীনের স্থানীয় সামাজিক মাধ্যম প্লাটফর্মে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও এবং চীনে নিজস্ব প্রতিনিধির বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, কারখানার সীমানা থেকে পালিয়ে হেঁটেই বাড়ি ফেরার চেষ্টা করছেন ফক্সকন শ্রমিকরা। গন্তব্য দূরের হলেও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে আটক হওয়া এড়াতে তারা গণপরিবহন ব্যবহার করছেন না।

বছর শেষে ছুটির মৌসুমে যেখানে বৈদ্যুতিক পণ্যের বড় ধরনের চাহিদা ও বাজারজাতের সম্ভাবনা রয়েছে সে সময় উৎপাদনে এ অবনমনের আশঙ্কা করা হচ্ছে। সময়টি কুপারটিনোর প্রযুক্তি জায়ান্ট অ্যাপলের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। সম্প্রতি দেয়া এক বিবৃতিতে ফক্সকন জানায়, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রতিষ্ঠানটি কাজ করছে এবং সম্ভাব্য ক্ষতি কমানোর জন্য অন্য কারখানায় উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। তবে এ বিষয়ে অ্যাপলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

আইফোন উৎপাদনের দিক থেকে ফক্সকন অ্যাপলের অন্যতম শীর্ষ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। বৈশ্বিকভাবে প্রতিষ্ঠানটি ৭০ শতাংশ আইফোন বাজারজাত করে। তাইপেভিত্তিক বাজার বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান ফুবন রিসার্চ চলতি মাসে জানায়, আইফোন বাজারজাতে সহায়তার মাধ্যমে তাইওয়ানের সংস্থাটি ৪৫ শতাংশ মুনাফা অর্জন করে। ভারতেও প্রতিষ্ঠানটি আইফোন উৎপাদন করে। তবে ঝেংঝুর কারখানা থেকে অধিকাংশ বৈশ্বিক সরবরাহ পূরণ করা হয়।

বিষয়টি সম্পর্কে অবগত আরেকজন জানান, লকডাউন ও বিধিনিষেধের মধ্যেও অনেক কর্মী ঝেংঝু কারখানায় অবস্থান করছেন। এ কারণে সেখানে এখনো উৎপাদন অব্যাহত আছে। নির্দিষ্ট ক্লোজড লুপ সিস্টেমের মধ্যে থেকে কাজ করতে পারলে কারখানাগুলো খোলা রাখার অনুমতি দিয়েছে চীন সরকার। এ সিস্টেমের অধীনে শ্রমিকরা কারখানার অভ্যন্তরে অবস্থান করবেন ও কাজ করবেন। তবে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো জানায়. এভাবে কার্যক্রম পরিচালনায় বেশকিছু সমস্যা রয়েছে।

গত ১৯ অক্টোবর ঝেংঝুতে অবস্থিত কারখানায় ফক্সকন কর্মীদের ডাইনিংয়ে বসার পরিবর্তে ডরমিটরিতে থেকে খাবার গ্রহণের নির্দেশ দেয়। সে সময় প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছিল যে উৎপাদন স্বাভাবিক পর্যায়ে রয়েছে। এ সিদ্ধান্তের ফলে কারখানায় অবস্থিত শ্রমিকরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেখানে তাদের চিকিৎসা ও সার্বিক ব্যবস্থাপনার বিষয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন।

কারখানার কোনো শ্রমিককে কভিড-১৯-এর চিকিৎসা দেয়ার বিষয়ে ফক্সকনের পক্ষ থেকে এখনো কিছু জানানো হয়নি। মে মাসে সাংহাইয়ে অ্যাপলের সরবরাহকারী হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনাকারী আরেকটি প্রতিষ্ঠান কুয়ান্টা কম্পিউটার শ্রমিক অসন্তোষ ও বিক্ষোভের মুখে পড়েছিল। মূলত কারখানায় ক্লোজড লুপ সিস্টেম থাকার পরেও কভিড-১৯-এর সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় এ বিক্ষোভ শুরু হয়।

সম্প্রতি দেয়া এক বিবৃতিতে ফক্সকন বলেছে, শ্রমিকদের সুবিধা ও সন্তুষ্টি বিবেচনায় ডািইনিংয়ে খাবার সরবরাহের অনুমতি দিতে সম্মত হয়েছে সরকার। শ্রমিকদের যারা বাড়ি ফিরে যেতে চান তাদের জন্য সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে সুশৃঙ্খল পরিবহন ব্যবস্থার আয়োজন করার কথাও বিবৃতিতে দাবি করেছে ফক্সকন। এ বিষয়ে জানতে ফক্সকনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাত্ক্ষণিক কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *