তাঁবু টাঙিয়ে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখছেন পর্যটকরা

স্টাফ রিপোর্টার

অক্টোবরের শেষের দিক থেকে নভেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত পঞ্চগড়ের বিভিন্ন এলাকা থেকে দেখা মেলে নেপাল এবং ভারতের সিকিম সীমান্তে অবস্থিত বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘার নৈসর্গিক রূপ। পর্বতশৃঙ্গটি দেখতে তাই এই সময়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকরা ভিড় জমান তেঁতুলিয়ায়। তবে এসব পর্যটকরা আবাসিক সংকটে হতাশা ব্যক্ত করেছেন। হোটেলগুলোতে রুম না পেয়ে বিভিন্ন স্থানে তাঁবু গেড়ে রাত্রি যাপন করছেন তারা।

তেঁতুলিয়ায় উপজেলার তিরনইহাট ইউনিয়নের ব্রহ্মতোল গ্রামে স্থানীয় মকসেদুল ইসলামের আম-লিচু বাগানে চাঁদপুর থেকে আসা কয়েকজনকে তাঁবু টাঙিয়ে রাত যাপন করতে দেখা যায়। তারা জানান, কাঞ্চনজঙ্ঘাসহ এ অঞ্চলের দর্শনীয়স্থান সমূহ আমাদের খুব মুগ্ধ করেছে। তবে দুঃখের বিষয় এখানে এসে হোটেলগুলোতে রুম পাইনি। আর তাই বাধ্য হয়ে গ্রামের এক নিবির এলাকায় তাঁবু রাত কাটাতে হয়েছে।

পর্যটকরা এসে যে শুধু কাঞ্চনজঙ্ঘাই দেখছেন তা কিন্তু নয়, তারা তেঁতুলিয়ার বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান যেমন- সমতলের চা বাগান, বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট, স্থলবন্দর-ইমিগ্রেশন, ভারত বাংলাদেশ সীমান্ত প্রবাহিত মহানন্দা নদীতে দল বেঁধে শ্রমিকদের পাথর উত্তোলন, পড়ন্ত বিকেলে সূর্যাস্ত, নদীর কিনারে ডাক বাংলোয় দাঁড়িয়ে বা বসে উত্তর প্রান্তের পাহাড়ের ঢালের ঘর-বাড়ি, সাপের মতো আঁকাবাঁকা সড়কে গাড়ি চলাচল, পুরার্কীতিসহ নানা দর্শনীয় স্থান উপভোগ করছেন। কিন্তু সন্ধ্যার পর হোটেলগুলোতে রুম না পেয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে দূর দূরান্ত থেকে আসা পর্যটকদের।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তেঁতুলিয়ায় বেশ কয়েকটি আবাসিক হোটেল রয়েছে। তাদের মধ্যে ইএসডিওর মহানন্দা কটেজ, দোয়েল আবাসিক, কাজী ব্রাদার্স, কাঞ্চনজঙ্ঘা, হোটেল সীমান্তের পাড়, স্বপ্ন গেস্ট হাউ উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও জেলা পরিষদ ডাক বাংলোর বেরং কমপ্লেক্স, আরডিআরএস, জনস্বাস্থ্য ও অফিসার্স ক্লাবে পর্যটকদের আবাসন ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে পর্যটন সময়ে এসব হোটেলে রুম পাওয়া যায় না। ফলে আশেপাশের বাসা বাড়িতে এবং খোলা আকাশের নিচে তাবু টাঙিয়ে রাত কাটাতে হয়েছে ভ্রমণ পিপাসুদের।

আবাসিক হোটেল মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অক্টোবর মাস থেকেই আবাসিক হোটেলগুলো বুকিং দিচ্ছেন পর্যটকরা। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে আসার খবর দিয়ে ট্যুরিস্টরা হোটেল বুকিং দিয়ে রাখছেন। বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোতে প্রচুর পর্যটক সমাগম হয়। যার কারণে কেউ কেউ বুকিং দিতে পারছেন না। যারা হোটেল বুকিং ছাড়া আসছেন, তাদের রাত্রি যাপনে অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে।

চাঁদপুর থেকে আসা ছানোয়ার হোসেন সাগর, সুমন বিশ্বাস, কাদের খান বলেন, বাংলাদেশের উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায় এমন খবরে আমরা এখানে ছুটে এসেছি। আমরা আবাসিক কোনো হোটেলেই রুম পাইনি। এই জেলাটি এতো সুন্দর হয়তো না আসলে বুঝতামই না। এখানে টি পর্যটনের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। চা বাগান মালিকরা যদি চা বাগানেই পর্যটকদের থাকার পরিবেশ তৈরি করতে পারেন এ অঞ্চল আরও পর্যটক বৃদ্ধি পাবে।

ঢাকা থেকে আসা পর্যটক সেলিনা পারভীন, নারগিস জাহান, ইমরুল কাওসারসহ কয়েকজন বলেন, কাছ থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায় ফেসবুকে খবর শুনে তেঁতুলিয়ায় এসেছি। ভালেই লাগছে আমাদের। অনেক আনন্দ করেছি। কিন্তু এখানে আবাসনের খুবই সংকট। রুমের রেটও খুব বেশি। হোটেলের সংখ্যা বৃদ্ধি করলে পর্যটকদের সুবিধা হবে। পর্যটকরা বেশি দিন থাকতে পারবেন এবং পঞ্চগড় জেলার বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখতে পারবেন।

পর্যটক সেবা প্রতিষ্ঠানগুলো জানায়, প্রচুর পরিমাণে পর্যটক আসছে। আমাদের এখানে এখনো আবাসন সংকট রয়েছে। করোনার দুই বছরের মধ্যে বেশ কয়েকটি উন্নতমানের আবাসিক হোটেল গড়ে উঠেছে। তবে তা পর্যটকের তুলনায় অতুল। পর্যটকরা যোগাযোগ করছেন, আমরা চেষ্টা করছি তাদের সেবা দিতে।

পঞ্চগড় ট্যুরিস্ট পুলিশ জোনের অফিসার ইনচার্জ সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘এখন পঞ্চগড়ে পর্যটনের সময়। হিমালয়ের কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে প্রচুর পর্যটকের সমাগম ঘটছে। আমরা পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য সার্বক্ষণিক নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছি। পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে আমাদের টহল জোরদার করেছি।’

তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোহাগ চন্দ্র সাহা বলেন, ‘হেমন্ত ঋতুতে কাছ থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার মনোমুগ্ধকর রূপ উপভোগ করতে পর্যটকরা আসেন। আগতদের কথা চিন্তা করে আমরা ডাকবাংলোয় থাকার ব্যবস্থা করেছি। ওয়াচটাওয়ার, ওয়াকওয়েসহ বিভিন্ন দৃষ্টিনন্দিত স্থাপনা নির্মাণ করেছি। আবাসন সংকট রয়েছে এটি সত্যি। তবে দিন দিন আবাসন ব্যবস্থা গড়ে উঠছে। ইতোমধ্যে জেলা পরিষদ,  সড়ক ও জনপথ বিভাগ কর্তৃক নতুন দুইটি রেস্টহাউজ নির্মাণ করা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বেসরকারি উদ্যোগেও নতুন হোটেল ও রেস্ট হাউজ নির্মাণের কাজ চলমান আছে। আমরা পর্যটন শিল্প নিয়ে কাজ করছি। পর্যটকদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশাসন তৎপর রয়েছে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *