স্যামসাংয়ের ২০০ মেগাপিক্সেল সেন্সরের জনপ্রিয়তা বাড়ছে

স্টাফ রিপোর্টার

গত বছর বিশ্বে প্রথমবারের মতো ২০০ মেগাপিক্সেলের সেন্সর উন্মোচন করে স্যামসাং। বিভিন্ন স্মার্টফোনে জায়গা করে নিতে কিছু সময় নেয়। ধীরে ধীরে হলেও ২০০ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা ফোন জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে। অনর ৮০ সিরিজে সর্বশেষ এ সেন্সর যুক্ত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে।

স্যামমোবাইলের প্রতিবেদনে বলা হয়, অনর ৮০ প্রো প্লাস ফোনে ব্যবহার হচ্ছে আইসোসেল এইচপি১ ২০০ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা সেন্সর। ফোনটিতে আর কোন সেন্সর ব্যবহূত হচ্ছে এ নিয়ে বিস্তারিত তথ্য জানা যায়নি। ৫০ মেগাপিক্সেলের আল্ট্রাওয়াইড ক্যামেরার পাশাপাশি একটি টেলিফটো ক্যামেরা থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এতে ১.৫কের অ্যামোলেড ডিসপ্লে থাকছে। প্রসেসর হিসেবে থাকছে কোয়ালকমের স্ন্যাপড্রাগন ৮ জেন ১। র্যাম থাকতে পারে ১২ জিবি। এছাড়া এতে ফিঙ্গারপ্রিন্ট রিডার, স্টেরিও স্পিকারের পাশাপাশি ১০০ ওয়াটের সুপার-ফাস্ট চার্জার ব্যবহার করা হচ্ছে।

স্যামসাংয়ের আইসোসেল এইচপি১ সেন্সর ব্যবহার করা প্রথম স্মার্টফোন ছিল মটোরোলা এক্স৩০ প্রো। পরবর্তী সময়ে মটো এজ ৩০ আল্ট্রা হিসেবে আন্তর্জাতিক বাজারে নিজেদের নতুন করে ব্র্যান্ডিং করে। শাওমির ১২টি প্রো ফোনেও ব্যবহার করা হয় স্যামসাংয়ের ২০০ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা সেন্সরটি। এমনকি ইনফিনিক্সের ফ্ল্যাগশিপ ফোনেও ব্যবহূত হয় এটি।

সামনের দিনগুলোতে আলট্রা-হাই-রেজল্যুশনের আরো ক্যামেরা সেন্সর আনার পরিকল্পনা করছে স্যামসাং। এমনকি কোম্পানিটি ৬০০ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা সেন্সর নিয়ে আসার উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে বলে জানা গেছে। এ সেন্সর স্মার্টফোনে ব্যবহূত হয়তো হবে না, তবে স্বচালিত গাড়িতে ব্যবহূত হতে পারে।

বিগত প্রান্তিকগুলোয় সরবরাহ সংকট সত্ত্বেও স্মার্টফোনের রিয়ার ক্যামেরার ইমেজ সেন্সর উন্নততর হচ্ছে। এমনকি সাশ্রয়ী স্মার্টফোনগুলোয় হাই-রেজল্যুশনের প্রাইমারি ক্যামেরা যুক্ত হচ্ছে।

হাই-রেজল্যুশনের ফোনের দিকে বাজারের এ ঝোঁক নিয়ে কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চের জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক ইথান কি বলেন, ২০০ থেকে ৪০০ ডলারের ফোনগুলোয় ৪৮ ও ৬৪ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা থাকা স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে ফ্ল্যাগশিপ স্মার্টফোনগুলোয় ডিএসএলআরের মতো পারফরম্যান্স দিতে বৃহৎ সেন্সরের দিকে মনোযোগ দেয়া হচ্ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ৫০ মেগাপিক্সেলের সেন্সর ব্যবহার করা হচ্ছে। দ্বিতীয় প্রান্তিকে ১০৮ মেগাপিক্সেলের স্মার্টফোনের শেয়ার দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ১ শতাংশ। রেডমি ও রিয়েলমির মতো স্মার্টফোন কোম্পানির হাত ধরে মাঝারি দামের ফোনগুলোতেও ১০৮ মেগাপিক্সেলের রিয়ার ক্যামেরা ব্যবহার হচ্ছে।

গত কয়েক বছরে স্যামসাংয়ের বেশ কয়েকটি প্রিমিয়াম স্মার্টফোনে ১০৮ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা সেন্সর ব্যবহার করা হয়েছে। ২০২৩ সালে উন্মোচন হতে যাওয়া গ্যালাক্সি এস২৩ ফোনে আইসোসেল এইচপি১-এর ২০০ মেগাপিক্সেল সেন্সর ব্যবহারের ঘোষণা দিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক প্রযুক্তি জায়ান্টটি। সম্প্রতি ওই ইমেজ সেন্সর ব্যবহার করে একটি বিড়ালের দানবাকৃতির ছবি তুলেছে তারা। ইমেজ সেন্সরের দিক থেকে স্যামসাং যখন অনেক দূর এগিয়ে যাচ্ছে তখন পিছিয়ে থাকতে চাইবে না অ্যাপল ও গুগলের মতো প্রযুক্তি জায়ান্ট। সম্প্রতি ফোনঅ্যারেনার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, তারা তাদের সেন্সর সরবরাহকারীদের ১০০ মেগাপিক্সেলের সেন্সর নিয়ে কাজ করতে অনুরোধ জানিয়েছে।

অ্যাপল ও গুগল ইমেজ সেন্সরের জন্য মূলত সনির ওপর নির্ভর করছে। অ্যাপল ও গুগল ক্যামেরা হার্ডওয়্যারের চেয়ে সফটওয়্যারের দিকে জোর দিয়ে আসছিল। এজন্য অ্যাপলের সবচেয়ে দামি আইফোনেও ১২ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা ব্যবহার করা হচ্ছে। কিন্তু বাজারপ্রবণতার দিকে তাকিয়ে সনির ১২.২ মেগাপিক্সেলের সেন্সরের স্থলে স্যামসাংয়ের ৫০ মেগাপিক্সেলের আইসোসেল জিএন১ সেন্সর ব্যবহার শুরু করেছে গুগল। এছাড়া অ্যাপল তাদের প্রিমিয়াম আইফোনে ৪৮ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা ব্যবহার শুরু করেছে।

এখন সেন্সর সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান সনি যখন ১০০ মেগাপিক্সেলের ইমেজ সেন্সর আনার ঘোষণা দিচ্ছে তখন জাপানি প্রতিষ্ঠানটির এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে অ্যাপল ও গুগলের মতো গ্রাহক। ডিজিটাল চ্যাট স্টেশনের বরাতে জানা গেছে, সনির আইএমএক্স৮ সিরিজের অংশ হতে পারে ১০০ মেগাপিক্সেলের ওই সেন্সর। এছাড়া সনির পাইপলাইনে আইএমএক্স৯ সিরিজের সেন্সর রয়েছে বলে জানা গেছে, যা স্যামসাংয়ের ৫০ মেগাপিক্সেলের আইসোসেল জিএন২ সেন্সরের সঙ্গে টেক্কা দেবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। ধারণা করা হচ্ছে, শাওমি ১২ আল্ট্রা ফোনে সনির আইএমএক্স৯৮৯ সেন্সর ব্যবহার হতে পারে।

সম্প্রতি সনির সিইও এক পূর্বাভাসে জানান, গুণগত মানের দিক থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ডিএসএলআরকে ছাড়িয়ে যাবে অনেক স্মার্টফোন ক্যামেরা। ইমেজ সেন্সর নির্মাতা কোম্পানিগুলোর হাই-রেজল্যুশনের ক্যামেরায় মনোযোগ বৃদ্ধিতে তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *