অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি, অবশেষে তদন্তের নির্দেশ ওরিয়ন ইনফিউশনের
মাত্র চার মাসে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ওষুধ ও রসায়ন খাতের কোম্পানি ওরিয়ন ইনফিউশন লিমিটেডের শেয়ার দাম ৮০ টাকা থেকে বেড়ে ৯১৯ টাকা হয়ে গেছে। অর্থাৎ চার মাসে শেয়ারের দাম বেড়ে প্রায় সাড়ে ১১ গুণ হয়েছে। এমন অস্বাভাবিক দাম বাড়ার প্রেক্ষিতে বিষয়টি তদন্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
এ বিষয়ে গতকাল বুধবার (১২ অক্টোবর) বিএসইসি থেকে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে (ডিএসই) তদন্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্ত শেষ করে ২০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন কমিশনে জমা দিতে বলা হয়েছে।
সে সময় শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করেছিলেন কারসাজির মাধ্যমে কোনো বিশেষ চক্র কোম্পানিটির শেয়ার দাম বাড়াতে ভূমিকা রাখছে। আর বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, ওরিয়ন ইনফিউশনের বিষয়টি আমরা নজরে রেখেছি। আমরা তথ্য খতিয়ে দেখছি। অস্বাভাবিক কিছু পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেবো।
বিএসইসি থেকে ডিএসইকে যে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সেখানে চারটি বিষয় দেখতে বলা হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে- কোম্পানির নিরীক্ষিত ও অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য বিশ্লেষণ, শেয়ার লেনদেনের ক্ষেত্রে ইনসাইডার ট্রেডিং হয়েছে কি না, শেয়ার লেনদেন কারসাজির ঘটনা ঘটেছে কি না এবং অন্যান্য অনিয়ম বা আইন লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে কি না, তা খতিয়ে দেখা।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত ২০ জুন কোম্পানিটির শেয়ার দাম ছিল ৮০ টাকা ৪০ পয়সা। সেখান থেকে টানা বেড়ে ১২ অক্টোবর লেনদেন শেষে দাঁড়ায় ৯১৯ টাকা ৬০ পয়সা। অর্থাৎ চার মাসের কম সময়ে প্রতিষ্ঠানটির প্রতিটি শেয়ারের দাম বেড়েছে ৮৩৯ টাকা ২০ পয়সা বা ১ হাজার ৪৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ। অন্যভাবে বললে চার মাসে কোম্পানিটির শেয়ার দাম বেড়ে ১১ দশমিক ৪৯ গুণ হয়েছে।
কোম্পানিটির শেয়ারের এই দাম বাড়ার প্রবণতা দেখে ডিএসই থেকে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করে একাধিকবার বার্তা প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু সতর্ক বার্তা প্রকাশের পর দাম কমার বদলে যেন দাম বাড়ার পালে আরও হাওয়া লেগেছে। শেয়ার দাম পাগলা ঘোড়ার মতো ছুটতে থাকায় কোম্পানিটির শেয়ার দাম এমন জায়গায় পৌঁছেছে যা আগে কখনো দেখা যায়নি।
১৯৯৪ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন ২০ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। আর শেয়ার সংখা ২ কোটি ৩ লাখ ৫৯ হাজার ৭৬০টি। এরমধ্যে ৪০ দশমিক ৬১ শতাংশ শেয়ারই আছে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে। অর্থাৎ বাজারে এক কোটির বেশি শেয়ার আছে।
কোম্পানিটি সর্বশেষ ২০২১ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত নয় মাসের আর্থিক তথ্য প্রকাশ করেছে। ওই আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, নয় মাসের ব্যবসায় শেয়ারপ্রতি মুনাফা করেছে ১ টাকা ৪৩ পয়সা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয় ১ টাকা ১২ পয়সা।
এদিকে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদ সর্বশেষ ২০২১ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত বছরে বিনিয়োগকারীদের ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। তার আগে ২০২০ সালে ১০ শতাংশ, ২০১৯ সালে ১৪ শতাংশ এবং ২০১৮ সাল, ২০১৭ ও ২০১৬ সালে ১৪ শতাংশ করে নগদ লভ্যাংশ দেয়। অর্থাৎ গত কয়েক বছরের মধ্যে কোম্পানিটি সর্বোচ্চ ১৪ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে।
এ ধরনের একটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের এমন দাম বৃদ্ধিকে অস্বাভাবিক বলছেন বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী। তিনি সম্প্রতি বলেন, ওরিয়ন ইনফিউশনের শেয়ার দাম যেভাবে বেড়েছে তা কিছুতেই স্বাভাবিক হতে পারে না। এর পেছনে কারসাজি থাকতে পারে।