প্রবৃদ্ধিতে ফিরেছে চীনের শিল্পোৎপাদন কার্যক্রম

স্টাফ রিপোর্টার

ঘুরে দাঁড়িয়েছে চীনের শিল্পোৎপাদন কার্যক্রম। টানা দুই মাস সংকোচনের পর গত মাসে এ খাতের কার্যক্রম কিছুটা বেড়েছে। যদিও পরিষেবা খাতের কার্যক্রম মন্থর রয়ে গিয়েছে। পাশাপাশি বেসরকারি উৎপাদন জরিপ আরো সংকোচনের ইঙ্গিত দিয়েছে। সংকোচনের কারণ হিসেবে কভিডজনিত বিধিনিষেধ এবং বিশ্বজুড়ে চাহিদা ধীর হওয়াকে দায়ী করা হয়েছে। খবর রয়টার্স।

সম্প্রতি ন্যাশনাল ব্যুরো অব স্ট্যাটিসটিকস (এনবিএস) জানিয়েছে, চীনের সরকারি ম্যানুফ্যাকচারিং পারচেজিং ম্যানেজারস ইনডেক্স (পিএমআই) সেপ্টেম্বরে বেড়ে ৫০ দশমিক ১ পয়েন্টে পৌঁছেছে। আগস্টে এ সূচক ৪৯ দশমিক ৪ এবং জুলাইয়ে ৪৯ পয়েন্টে ছিল। গত মাসের এ সূচক প্রত্যাশার চেয়ে বেশি ছিল। বড় শহরগুলোয় কভিডজনিত বিধিনিষেধ শিথিল করায় শিল্প খাতের কার্যক্রম প্রবৃদ্ধিতে ফিরেছে। যদিও পরিষেবা খাতের কার্যক্রম শ্লথ হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে বেসরকারি কাইশিন জরিপ বলছে, সেপ্টেম্বরে কারখানা কার্যক্রম আরো বেশি সংকুচিত হয়েছে।

এ পরিসংখ্যান বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটিকে দ্বিতীয় প্রান্তিকে দেখা মন্থর প্রবৃদ্ধি থেকে বেরিয়ে আসতে হিমশিম খাওয়ার চিত্র তুলে ধরেছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ইউক্রেন যুদ্ধ ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো সুদের হার বাড়ানোর কারণে বৈশ্বিক চাহিদায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। অর্থনীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের অর্থনীতিবিদ জিচুন হুয়াং একটি নোটে বলেছেন, জরিপগুলো পরামর্শ দেয় যে চীনের অর্থনীতি সেপ্টেম্বরেও গতি হারিয়েছে। বিশ্বব্যাপী রফতানিতে মন্দা এবং কভিডজনিত বিধিনিষেধের কারণে পরিষেবা কার্যক্রমে নতুন করে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

চীনের বাইরে দক্ষিণ কোরিয়ায় শিল্পোৎপাদন আগস্টে দ্বিতীয় মাসের মতো সংকুচিত হয়েছে। তবে এ সময়ে জাপানের কারখানাগুলোয় উৎপাদন বেড়েছে। গত মাসে চীনের শিল্পোৎপাদন কার্যক্রম সামান্য বেড়েছে। যদিও রয়টার্সের জরিপে অর্থনীতিবিদরা ৪৯ দশমিক ৬ পয়েন্টের পূর্বাভাস দিয়েছিলেন। ৫০ পয়েন্টের নিচে পিএমআই ওই খাতের সংকোচন এবং এর ওপরে প্রসারিত হওয়ার চিত্র তুলে ধরে।

এনবিএসের একজন জ্যেষ্ঠ পরিসংখ্যানবিদ জাও কিংহে এক বিবৃতিতে বলেন, অর্থনৈতিক নীতিগুলো কার্যকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উৎপাদন খাতের কার্যক্রম বেড়েছে। দাবদাহের প্রভাব কমে যাওয়ার বিষয়টি এক্ষেত্রে সহায়তা করেছে। নতুন করে কভিডজনিত প্রাদুর্ভাব খুচরা বিক্রি, উড়োজাহাজ চলাচল, বাসস্থান ও ক্যাটারিং ব্যবসাগুলোকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। তবে এ সময়ে সরকারি নেতৃত্বাধীন অবকাঠামো নির্মাণ কার্যক্রম ত্বরান্বিত হয়েছে।

সরকারি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, উৎপাদন খাতের বাইরের পিএমআই আগস্টে ৫২ দশমিক ৬ পয়েন্ট থেকে সেপ্টেম্বরে ৫০ দশমিক ৬ পয়েন্টে নেমেছে। উৎপাদন ও পরিষেবা একসঙ্গে হিসাব করা কম্পোজিট পিএমআইও কমে ৫০ দশমিক ৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আগস্টে এ সূচক ৫১ দশমিক ৭ পয়েন্টে ছিল।

সম্প্রতি প্রকাশিত বেসরকারি কাইশিন জরিপ অনুসারে, গত মাসে কারখানা কার্যক্রম আরো দ্রুত সংকুচিত হয়েছে। দুর্বল চাহিদার কারণে উৎপাদন, নতুন ক্রয়াদেশ এবং কর্মসংস্থানের সূচকগুলো কমে গিয়েছে। কাইশিন জরিপে সাধারণত ছোট ও রফতানিভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলো অন্তর্ভুক্ত থাকে।

সরকারি ম্যানুফ্যাকচারিং পিএমআই জরিপ অনুসারে, নতুন রফতানি ক্রয়াদেশ সূচক আগস্টের ৪৮ দশমিক ১ থেকে কমে ৪৭ পয়েন্টে নেমেছে। বেসরকারি কাইশিন জরিপেও এমন সংকোচনের চিত্র উঠে এসেছে। ক্রমবর্ধমান সুদের হার, উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে চাহিদা ধীর হয়ে পড়েছে।

সিকিউরিটিজ কোম্পানি গুইতাই জুনান ইন্টারন্যাশনালের প্রধান অর্থনীতিবিদ জো হাও বলেন, রফতানি ক্রয়াদেশ সূচক আরো সংকুচিত হয়েছে। এটি উন্নত অর্থনীতিতে দুর্বল চাহিদার দিকে ইঙ্গিত করে। আর্থিক নীতি কঠোর করার কারণে প্রধান অর্থনীতিগুলোয় মন্দার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এতে ভোক্তারা ব্যয়ের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করছেন। এ অবস্থায় বাহ্যিক চাহিদা আরো দুর্বল হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। ফলে চীনা অর্থনীতিকে অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়াতে মনোযোগ দিতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *