দুর্নীতির শিকার ৭১ শতাংশ পরিবার: টিআইবি
দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সেবা খাতে গত বছর দুর্নীতির শিকার হয়েছে প্রায় ৭১ শতাংশ খানা বা পরিবার। বিভিন্ন ধরনের সেবা নেয়ার ক্ষেত্রে ২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে গত বছরের নভেম্বর পর্যন্ত ১২ মাসে দেশে ঘুস লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১০ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা। সেই হিসাবে প্রতিটি পরিবারকে গড়ে ৬ হাজার ৬৩৬ টাকা ঘুস দিতে হয়েছে। মোট ১৭টি সেবা খাতে এ অবৈধ লেনদেন হয়েছে। আর এ সময় দেশে সর্বাধিক দুর্নীতিগ্রস্ত খাত ছিল পাসপোর্ট অধিদপ্তর ও আইন-শৃঙ্খলা সংস্থা।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) ‘সেবা খাতে দুর্নীতি: জাতীয় খানা জরিপ ২০২১’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। রাজধানীর ধানমন্ডিতে টিআইবি কার্যালয়ে গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে এ প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দেশে মাথাপিছু ঘুস দেয়ার পরিমাণ ৬৭১ টাকা।
প্রতিবেদনে মোট ১৭ ধরনের সেবা খাতের দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরা হয়। সেবাগ্রহীতাদের অভিজ্ঞতামূলক জরিপে ১৫ হাজার ৪৫৪টি খানা অংশগ্রহণ করে। দুর্নীতির মধ্যে রয়েছে ঘুস, জোরপূর্বক অর্থ আদায়, প্রতারণা, দায়িত্বে অবহেলা, স্বজনপ্রীতি, সময়ক্ষেপণসহ বিভিন্ন হয়রানি। টিআইবির প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, সবচেয়ে বেশি ৭৪ দশমিক ৪ শতাংশ খানা দুর্নীতির শিকার হয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার মাধ্যমে। দ্বিতীয় সাড়ে ৭০ শতাংশ খানা দুর্নীতির শিকার হয়েছে পাসপোর্ট খাতে। এরপর রয়েছে বিআরটিএ, বিচারিক সেবা, স্বাস্থ্য, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান ও ভূমিসেবা।
জরিপে অংশগ্রহণকারী ৭২ দশমিক ১ শতাংশই মনে করেন, ঘুস না দিলে সেবা পাওয়া যায় না। হয়রানি বা ঝামেলা এড়াতেই মূলত তারা ঘুস দেন। খানাপ্রধানের প্রতিবন্ধিতা থাকলে দুর্নীতি ও ঘুসের শিকার হওয়ার প্রবণতা বেশি। ১৮-৩৫ বছর বয়সীরা কম দুর্নীতির শিকার হয়েছেন। বেশি দুর্নীতির শিকার হয়েছেন ৫৬-৬৫ বছর বয়সীরা। তবে দুর্নীতির শিকার হলেও অভিযোগ করেননি ৭৯ দশমিক ২২ শতাংশ অংশগ্রহণকারী। এর মধ্যে ৫৫ শতাংশ অভিযোগ করেননি ঝামেলা বা হয়রানির ভয়ে। সবখানেই দুর্নীতি—তাই অভিযোগ করার প্রয়োজন বোধ করেননি ৪৯ শতাংশ অংশগ্রহণকারী। অবশ্য সবকিছু উপক্ষো করেই সাড়ে ১৯ শতাংশ অংশগ্রহণকারী দুর্নীতির অভিযোগ করেছেন। যদিও ৭২ শতাংশ অভিযোগের ক্ষেত্রেই প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থাই নেয়া হয়নি।
এর আগে ২০১৭ সালে সেবা খাতের দুর্নীতি নিয়ে খানা জরিপ করেছিল টিআইবি। সার্বিকভাবে ২০১৭ সালের তুলনায় ২০২১ সালে দুর্নীতির শিকার খানা বেড়েছে। ২০১৭ সালে যা ছিল সাড়ে ৬৬ শতাংশ, নতুন জরিপে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭০ দশমিক ৮ শতাংশে। ২০১৭ সালে প্রতিটি খানাকে গড়ে ঘুস দিতে হয়েছিল ৫ হাজার ৯৩০ টাকা। ২০২১ সালে তা দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৬৩৬ টাকায়।
সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সার্বিকভাবে সেবা খাতে দুর্নীতি বেড়েছে। সেবা খাতের দুর্নীতির এ চিত্র উদ্বেগজনক। শুধু সেবা খাতের ‘পেটি করাপশনের (ছোট দুর্নীতি)’ মাত্রাই এত ব্যাপক। বড় প্রকল্প, বড় কেনাকাটায় দুর্নীতির মাত্রা আরো বেশি বলেই ধারণা করা যায়।