বিকেএমইএ ও স্টিচ কনসোর্টিয়ামের মাঝে সমঝোতা স্মারক সই

স্টাফ রিপোর্টার

তৈরি পোশাক কারখানায় জেন্ডারবান্ধব কর্মপরিবেশের উন্নয়ন ও পণ্যের যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণে ফেয়ার প্রাইস অ্যাপ ব্যাবহার করা নিয়ে বিকেএমইএ ও স্টিচ কনসোর্টিয়ামের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) রাজধানীর একটি হোটেলে এ সমঝোতা সই হয়।

টুগেদার ফর চেঞ্জ (স্টিচ) হচ্ছে বৈশ্বিক বস্ত্র ও তৈরিপোশাক খাতে কাজ করা কয়েকটি সংগঠনের একটি অশীদারত্বমূলক উদ্যোগ। যার লক্ষ্য হলো, কাজের ক্ষেত্রে মাধবাধিকার সমুন্নত রেখে একটি সমতাভিত্তিক ও ন্যায়ানুগ সমাজ গঠন। নেদারল্যান্ডসের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ উদ্যোগে অর্থায়ন করছে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ নিটওয়ার ম্যানুফাকচারার অ্যান্ড এক্সপোর্টার অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সহ-সভাপতি ফজলে শামীম এহসান, আকতার হোসেন অপূর্ব, নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের অর্থনীতি বিষয়ক ফার্স্ট সেক্রেটারি বাস ব্লাউ, ফেয়ার ওয়্যার ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক আলেকজান্ডার কন্সটাম, স্টিচের কনসোর্টিয়াম কো-অর্ডিনেটর মুই কালান্দার, ইটিআই বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার আবিল বিন আমিন, ফেয়ার ওয়্যার ফাউন্ডেশনের কান্ট্রি ম্যানেজার বাবলুর রহমান, দাতা সংস্থা মনডিয়াল এফএনভির কনসালট্যান্ট মো. শাহিনুর রহমান।

বিকেএমইএ ও স্টিচ কনসোর্টিয়াম পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে জেন্ডার সংবেদনশীল কর্মপরিবেশ উন্নয়নে কাজ করছে। নারীর জন্য নিরাপদ ও সম্মানজনক কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে যৌন হয়রানিসহ সব ধরনের জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা দূর করা জরুরি।
এ বিষয়টি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে বিকেএমইএ ও স্টিচ কনসোর্টিয়াম বিকেএমইএ’র সদস্য কারখানাগুলোতে ‘যৌন হয়রানির অভিযোগ গ্রহণকারী কমিট ’ গঠন ও সেগুলোকে কার্যকর করার জন্য একসঙ্গে কাজ করতে একমত হয়েছে। কমিটিগুলো গঠিত হবে হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুয়ায়ী।

২০০৮ সালের ৫ হাজার ৯১৬ নম্বর রিট পিটিশনে হাইকোর্ট কর্মক্ষেত্রে জেন্ডার বৈষম্য, যৌন নিপীড়ন ও হয়রানি বন্ধ করার নির্দেশনা দিয়েছেন। নির্দেশনায় সব কর্মক্ষেত্রে ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি বিষয়ক অভিযোগ নেওয়া, তদন্ত করা ও করণীয় সম্পর্কে সুপারিশ করার জন্য কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছে।

স্টিচ কনসোর্টিয়ামের এ কাজের জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান-দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও উৎস রয়েছে। তারা এ কাজে কারিগরি সহায়তা দিতে সম্মত হয়েছে। দুই পক্ষই একমত হয়েছে যে, বিকেএমইএ’র সদস্য কারখানাগুলোতে হাইকোর্টের নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য পারস্পরিক বোঝাপড়া ও আলোচনার মাধ্যমে কাজ করবে।

এর অভিযোগ গ্রহণকারী কমিটি গঠন ও কার্যকর করাকে এগিয়ে নিতে বিকেএমইএর সঙ্গে কাজ করবে ফেয়ার ওয়্যার ফাউন্ডেশন, মনডিয়াল এফএনভি ও ইটিআই বাংলাদেশ।

এ বিষয়ক সুনির্দিষ্ট কাজের মধ্যে রয়েছে, দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণের ধারণা দেওয়া, প্রশিক্ষণ উন্নয়ন, প্রশিক্ষণ দেওয়া ও মূল্যায়ন। তাছাড়া বিকেএমইএ’র ইন-হাউজ মাস্টার ট্রেইনারদের দক্ষতা উন্নয়ন, কমিটি গঠন ও কার্যকরকরণে কারখানাগুলোকে সহায়তা করা।

সময়ের চাহিদা অনুসারে শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি করা হলে আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের কাছ থেকে যেন তার স্বীকৃতি ও পণ্যের মূল্যে তার প্রতিফলন পাওয়া যায়, সেজন্য ন্যায্যমূল্য নির্ধারণে একটি অ্যাপ চালু করতে আরেকটি সমঝোতা স্মারকে সই করেছে দুই পক্ষ।

বিকেএমইএ নেতা ফজলে শামীম বলেন, প্রতিবছরই আমরা পাঁচ শতাংশ হারে মজুরি বাড়িয়ে যাচ্ছি। কিন্তু ক্রেতাদের কাছ থেকে সে অনুযায়ী পণ্যের মূল্য পাচ্ছি না। মূলত ক্রেতাদের কাছ থেকে পোশাক বিক্রির টাকা থেকেই কারখানাগুলোতে শ্রমিকের মজুরিসহ অন্যান্য খরচ করা হয়। তাই শ্রমিকের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করতে পোশাকের ন্যায্য দামও জরুরি।

‘দেশি-বিদেশি উদ্যোগে তৈরি করা এ অ্যাপের মাধ্যমে দেখা যাবে, শ্রমিকের প্রয়োজনীয় মজুরি বাড়ানোর ফলে পোশাকের মূল্যে কী প্রভাব পড়ে। পরে সে অনুযায়ী পোশাকের দাম ঠিক করা হবে।’

ফজলে শামীম আরও বলেন, তারপর ক্রেতারা যদি এ দাম দিতে গড়িমসি করেন, তাহলে তারা আন্তর্জাতিকভাবে চাপে পড়বেন। তাই ফেয়ার প্রাইস অ্যাপও পোশাকখাতের সুশাসনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।

স্টিচ কনসোর্টিয়াম ফেয়ার প্রাইস অ্যাপটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিকেএমইকে কারিগরি সেবা দেবে। বিকেএমইএ ও এর সদস্যরা কারখানাগুলোর মতামত নিয়ে সে অনুসারে অ্যাপটির প্রয়োজনীয় উন্নয়ন করতে সব পক্ষ একমত হয়েছে বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়।

অ্যাপটির কর্মদক্ষতা নিয়ে সন্তুষ্ট হলে অ্যাপটির ভবিষ্যৎ ব্যবহার ও মালিকানা নিয়ে স্টিচ কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে ‘সহযোগিতার ভিত্তিতে’ কাজ করবে বিকেএমইএ। তারপর বিকেএমইএ’র সদস্য কারখানাগুলো অ্যাপটি ব্যবহার শুরু করবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *