রেকর্ড ভেঙে চলেছে ভারতের বাণিজ্য ঘাটতি

স্টাফ রিপোর্টার

ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকেই অস্থিতিশীল জ্বালানির বাজার। কয়েক মাস ধরে নিম্নমুখী ডলারের বিপরীতে রুপির বিনিময় হার। স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে গিয়েছে আমদানি ব্যয়। যদিও আমদানির সঙ্গে সংগতি রেখে বাড়েনি রফতানি। বরং সংকোচনের মুখোমুখি হয়েছে। এ অবস্থায় রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে ভারতের বাণিজ্য ঘাটতি। এমনকি নয়াদিল্লির আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের এ ব্যবধান প্রতি মাসে রেকর্ড ভেঙে চলেছে।

দ্য প্রিন্টের খবর অনুসারে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ভারতীয় অর্থনীতি একের পর এক প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ছে। উচ্চ রাজস্ব ঘাটতি দিয়ে শুরু করে রুপির বিনিময় হারে পতন এবং বর্তমানে ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য ঘাটতির অংশ হিসেবে চলতি হিসাবে ঘাটতির মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

বাণিজ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, জুলাইয়ে ভারতের আমদানি ৪৩ শতাংশ বেড়ে ৬ হাজার ৬০০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। যেখানে রফতানি দশমিক ৮ শতাংশ কমে ৩ হাজার ৫০০ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। ফলে গত মাসে বাণিজ্য ঘাটতি ৩ হাজার ১০০ কোটি ডলারের ঐতিহাসিক উচ্চতায় পৌঁছেছে। এর মাধ্যমে ঘাটতির পরিমাণ জুনের সর্বকালের সর্বোচ্চ ২ হাজার ৬১৮ কোটি ডলারের রেকর্ডকেও ছাড়িয়ে গিয়েছে। যেখানে গত বছরের একই সময়ে দেশটির আমদানি ও রফতানির ব্যবধান ছিল ১ হাজার কোটি ডলার। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (এপ্রিল-জুলাই) বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার কোটি ডলারে। গত বছরের একই সময়ে ৪ হাজার ২০০ কোটি ডলার থেকে যা অনেক বেশি।

মহামারীর প্রভাবে যখন বিশ্ববাণিজ্য ভেঙে পড়েছিল, তখন ভারতীয় পণ্যের চালান বাড়ার কারণ বাণিজ্য ঘাটতি ধীর ধীরে কমছিল। ২০২১-২২ অর্থবছরে রফতানি ৪১ হাজার ৮০০ কোটি ডলারের রেকর্ড ছুঁয়েছে। তবে চলতি বছর দেশটির রফতানি খাতের জন্য বেশ চ্যালেঞ্জিং হিসেবে দেখা দিয়েছে।

সাংবাদিকদের ব্রিফিং করার সময় বাণিজ্য সচিব বিভিআর সুব্রমনিয়াম বলেন, পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ও রুপির বিনিময় হারে পতনের কারণে আমদানি ব্যয় বেড়ে গিয়েছে। এতে জুলাইয়ে দেশের বাণিজ্য ঘাটতিও বেড়েছে।

যদিও পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছে, জুনের তুলনায় গত মাসে শীর্ষ ১০টি পণ্যের আমদানি সমতল ছিল। এ কারণে জুলাইয়ে রেকর্ড ঘাটতির পেছনে রফতানির পতনকে দায়ী করেছেন অর্থনীতিবিদরা। এ সময়ে দেশটির পেট্রোলিয়াম রফতানি এক বছর আগের তুলনায় ৭ শতাংশ কমেছে। যদিও জুনের তুলনায় এ কমার হার প্রায় ৩৭ শতাংশ। পাশাপাশি প্রকৌশল সামগ্রীর রফতানি ২ দশমিক ৫ শতাংশ, জ্বালানি তেলবহির্ভূত রফতানি যেমন রত্ন ও গহনা ৫ দশমিক ২ শতাংশ, ওষুধ ১ দশমিক ৪ শতাংশ এবং তাঁতপণ্য ২৮ দশমিক ৩ শতাংশ কমে গিয়েছে। গত মাসে জ্বালানি তেল প্রতিষ্ঠানগুলোর বিপুল পরিমাণ মুনাফার ওপর এককালীন উইন্ডফল করারোপ করে ভারতীয় সরকার। এ পদক্ষেপের কারণে জ্বালানি তেলের রফতানি কমে গিয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

গত মাসে ভারতের রেকর্ড বাণিজ্য ঘাটতির আরেকটি বড় কারণ বিশ্বজুড়ে দুর্বল চাহিদা। শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ চাহিদা ও ক্রমবর্ধমান দামের কারণে আমদানিতে উল্লম্ফন দেখা দিয়েছে। তবে মন্দার ঝুঁকির কারণে বিশ্বজুড়ে চাহিদা কমে গিয়েছে। এর প্রভাব গিয়ে পড়েছে রফতানির ওপর।

অর্থনীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান নোমুরা ভারতের বাণিজ্য তথ্যের ওপর প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন জানিয়েছে, এরই মধ্যে রফতানিতে মন্দা শুরু হয়েছে। চলতি বছরের বাকি অংশে এ পরিস্থিতি আরো ত্বরান্বিত হবে। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরো অঞ্চল, যুক্তরাজ্য, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডা অর্থনৈতিক মন্দার দিকে এগিয়ে যাওয়ায় বিশ্ব অর্থনীতিতে চাহিদা দুর্বল হয়ে পড়েছে।

নোমুরার অর্থনীতিবিদ সোনাল ভার্মা ও অরদিপ নন্দি একটি নোটে বলেন, বিশ্বজুড়ে প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার তীব্র অবনতি আগামী মাসগুলোয় রফতানি বৃদ্ধির ওপর আরো বেশি নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *