ব্যবস্থাপনায় শীর্ষ পাঁচ বন্দরের চারটিই মধ্যপ্রাচ্যের

স্টাফ রিপোর্টার

ব্যবস্থাপনার দিক থেকে বিশ্বের সেরা পাঁচ সমুদ্রবন্দরের চারটিই মধ্যপ্রাচ্যের। বিশ্বব্যাংক ও এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল মার্কেট ইন্টেলিজেন্সের সাম্প্রতিক সূচকে এ তথ্য উঠে এসেছে। খবর অ্যারাবিয়ান বিজনেস।

সম্প্রতি ৩৭০টি বন্দরের সূচক প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংক ও এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল মার্কেট ইন্টেলিজেন্স। কনটেইনার পোর্ট পারফরম্যান্স ইনডেক্সের (সিপিপিআই) শীর্ষ পাঁচে দেখা যায় মধ্যপ্রাচ্যের বন্দরের আধিপত্য। শীর্ষ পাঁচে জায়গা করে নেয়া মধ্যপ্রাচ্যের বন্দরগুলো হচ্ছে সৌদি আরবের কিং আবদুল্লাহ পোর্ট (প্রথম), ওমানের পোর্ট সালালাহ (দ্বিতীয়), কাতারের হামাদ পোর্ট (তৃতীয়) ও ইউএইর খলিফা পোর্ট (পঞ্চম)।

২০২১ সালের পারফরম্যান্স বিবেচনায় বিশ্বের সবচেয়ে সেরা সমুদ্রবন্দর হচ্ছে সৌদি আরবের কিং আবদুল্লাহ পোর্ট। বন্দরটিতে প্রতি ঘণ্টায় ৯৭ কনটেইনার মাল খালাস হয়। তার তুলনায় উত্তর আমেরিকার ওয়েস্ট কোস্ট বন্দরে ঘণ্টায় ২৬ কনটেইনার মাল খালাস হয়। শীর্ষ পাঁচে জায়গা করতে না পারলেও শীর্ষ ১০-এ জায়গা করে নিয়েছে সৌদি আরবের অন্য একটি কনটেইনার পোর্ট। সিপিপিআই সূচকে অষ্টম স্থান সৌদি আরবের জেদ্দাহ ইসলামিক পোর্ট।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) খলিফা পোর্টের নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান এড পোর্টস গ্রুপ জানায়, সিপিপিআই সূচকে তাদের ফ্ল্যাগশিপ ডিপ-ওয়াটার পোর্টের সাফল্যের পেছনে ভূমিকা রেখেছে ডিজিটাল প্রযুক্তি গ্রহণ ও জীবাশ্ম জ্বালানির বিকল্পে জোর দেয়া।

বন্দরে মাল নামানো থেকে শুরু করে সার্বিক কার্যক্রম সম্পন্নের সময়সীমা ও জটিলতা বিবেচনায় নিয়ে সুদক্ষ বন্দরের তালিকা প্রস্তুত করেছে বিশ্বব্যাংক ও এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল। কভিড-১৯ মহামারীর প্রভাবে ২০২১ সালে বৈশ্বিক সরবরাহ চেইনে বিঘ্ন ঘটেছে এবং অভূতপূর্ব জট দেখা গেছে।

বৈশ্বিক পণ্য পরিবহনের পাঁচ ভাগের চার ভাগই হয় সমুদ্রপথে। এর মধ্যে প্রায় ৩৫ শতাংশ কনটেইনারের মাধ্যমে পরিবহন।

বিশ্বব্যাংকের লিড ট্রান্সপোর্ট ইকোনমিস্ট মার্টিন হামফ্রিস বলেন, ডিজিটাল প্রযুক্তি গ্রহণ ও নবায়নযোগ্য বিকল্প জ্বালানি ব্যবহারের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশ তাদের বন্দরের আধুনিকায়ন করতে পারে। এতে সমুদ্রপথে বাণিজ্যের সরবরাহ চেইন আরো শক্তিশালী হবে।

সূচক তৈরিতে যুক্ত থাকা এ গবেষক আরো বলেন, অনেক উন্নয়নশীল দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে অদক্ষ বন্দর ব্যবস্থাপনা। এতে আমদানি ও রফতানি ব্যয় বাড়ে এবং কর্মসংস্থান ব্যাহত হয়। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো কনটেইনার পোর্ট অবকাঠামো ও প্রযুক্তিতে বড় অংকের বিনিয়োগ করেছে। যার ফল ভোগ করতে শুরু করেছে তারা।

এড পোর্টস গ্রুপের সিইও মোহাম্মদ জুমা আল শামিসি বলেন, বৈশ্বিক সরবরাহ চেইনের ওপর যে চাপ সৃষ্টি হয়েছে সে বিষয়টি নিয়ে আমরা অবহিত। এজন্য বন্দরের প্রতিটি স্তরে আমরা সমন্বয় ও সুদক্ষ ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দিয়েছি। খলিফা পোর্টে সুদক্ষ কর্মীর পাশাপাশি অটোমেটিক স্ট্যাকিং ক্রেন, ড্রোন, স্বচালিত টার্মিনাল অপারেশন সিস্টেমসহ উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে।

চলতি বছরজুড়েই উদ্ভাবনী প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে এড পোর্ট গ্রুপ। বর্তমানে খলিফা পোর্টে স্টেকহোল্ডার ও গ্রাহকের জন্য ১৬০টির মতো ডিজিটাল পরিষেবা দেয়া হচ্ছে। এতে বন্দর ব্যবস্থাপনা অনেক সুশৃঙ্খল হয়েছে এবং দ্রুততর সময়ের মধ্যে পণ্য আনানেয়া করা যাচ্ছে।

মধ্যপ্রাচ্যের বন্দরগুলোর পাশাপাশি সূচকে পূর্ব এশিয়ার বন্দরগুলোও ভালো অবস্থানে রয়েছে। মহামারীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বিশেষ সফলতার পরিচয় দিয়েছে চীনা বন্দরগুলো। শীর্ষ ১০-এ জায়গা করে নিয়েছে চীনের সাংহাই, নিংবো ও দক্ষিণাঞ্চলীয় গুয়াংজু বন্দর। এর আগের সূচকে শীর্ষ স্থানে থাকা জাপানের ইয়োকোহামা বন্দর এবার দশম স্থানে নেমে এসেছে। উত্তর আমেরিকা থেকে সূচকে শীর্ষস্থান যুক্তরাষ্ট্রের পোর্ট অব ভার্জিনিয়ার (২৩তম)। তার পরই রয়েছে মিয়ামি (২৯) ও কানাডার পোর্ট অব হ্যালিফ্যাক্স (৪৬)।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *