ফ্রান্স-রোমানিয়া থেকে গম কিনবে এশিয়ান ক্রেতারা

স্টাফ রিপোর্টার

নতুন উৎপাদন মৌসুমে ফ্রান্স ও রোমানিয়া থেকে এশিয়ান ময়দা মিল মালিকরা গম ক্রয় বাড়াতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ রুশ সামরিক বাহিনীর আক্রমণের পর থেকে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ রফতানিকারক দেশ ইউক্রেনের সরবরাহ বন্ধ। অন্যদিকে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ার গম বাণিজ্যও হোঁচট খেয়েছে। এ পরিস্থিতিতে বিকল্প উৎস থেকে গম সরবরাহ নিশ্চিত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন এশিয়ার ব্যবসায়ীরা। খবর রয়টার্স।

২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালালে লাফিয়ে বাড়ে গমের বৈশ্বিক বাজারদর। মার্চে কৃষিপণ্যটির দাম অতীতের যেকোনো সময়ের রেকর্ডকে ছাড়িয়ে যায়। এদিকে গত মাসে ভারতের গম রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা এবং যুক্তরাষ্ট্রে বৈরী আবহাওয়ার কারণে উৎপাদন ব্যাহত হওয়া খাদ্যশস্য সরবরাহ চেইনকে আরো জটিল করে তুলছে।

একটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক কোম্পানির সিঙ্গাপুরভিত্তিক ব্যবসায়ী বলেন, অন্তত আগামী কয়েক বছর ইউক্রেন থেকে গম কেনার কথা ভুলে যেতে হবে। চাহিদা পূরণে এ সময় ক্রেতাদের বিকল্প উৎস খোঁজা উচিত। দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার মিল মালিকদের কাছে গম সরবরাহকারী এ ব্যবসায়ী বলেন, নতুন মৌসুমে এশিয়ার বাজারের জন্য ফ্রান্স ও রোমানিয়ার গম প্রস্তাব করা হয়েছে।

তথ্য বলছে, মে মাসে শিকাগো বোর্ড অব ট্রেডে প্রতি বুশেল গমের দাম রেকর্ড ১৩ ডলার ৬৪ সেন্টে উঠে আসে। চলতি বছরের এখন পর্যন্ত শস্যটির দাম বেড়েছে ৩৫ শতাংশ। গতকাল প্রতি বুশেল গম লেনদেন হয়েছে ১০ ডলার ৩৯ সেন্টে, যা আগের কার্যদিবসের তুলনায় ১ শতাংশ কম।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ইন্দোনেশিয়ায় আগস্টে সরবরাহের জন্য প্রতি টন ফ্রেন্স গম ৪৯৫ ডলারে বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে কস্ট অ্যান্ড ফ্রেইটও (সিঅ্যান্ডএফ) অন্তর্ভুক্ত। অন্যদিকে রোমানিয়ান গম বিক্রি হয়েছে প্রতি টন ৪৭০-৪৮০ ডলারে।

অস্ট্রেলিয়ান প্রিমিয়াম সাদা গমের দাম টনপ্রতি ৪৭৮ ডলারে দাঁড়িয়েছে। বিশ্লেষকরা জানান, রেকর্ড উৎপাদনের মধ্য দিয়ে চলতি বছর অস্ট্রেলিয়া বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ গম রফতানিকারক দেশে পরিণত হয়েছে। বৈশ্বিক ঘাটতি মেটাতে চলতি বছরের শুরু থেকেই দেশটি গম রফতানি বাড়াচ্ছে।

সিঙ্গাপুরভিত্তিক আরেক খাদ্যশস্য ব্যবসায়ী বলেন, আমরা মনে করছি বিপুল পরিমাণ গম রফতানি অব্যাহত রাখবে অস্ট্রেলিয়া। সাধারণত জুলাইয়ে দেশটি তুলনামূলক কম গম রফতানি করে। কিন্তু চলতি বছরের এ সময়ও রফতানি ঊর্ধ্বমুখী থাকবে।

২০২১-২২ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়ায় রেকর্ড পরিমাণ গম উৎপাদন হয়েছে। উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ৬০ লাখ টনে। দেশটি আরো একবার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখছে। কারণ বর্তমানে গমের ফলন পরিস্থিতি আশাজাগানিয়া।

এশিয়ান গম আমদানিকারকরা বর্তমানে অতিরিক্ত ব্যয়ের কারণে শুধু অপরিহার্য চাহিদামাফিকই আমদানি করছেন। তারা আগাম এক বা দুই মাসের জন্য কার্গো বুক করছেন। কৃষ্ণ সাগরীয় অঞ্চল থেকে যাতে শিগগিরই সরবরাহ চালু হয়, সে প্রত্যাশাও করছেন তারা।

ইউক্রেনের কৃষিমন্ত্রী রয়টার্সকে বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আগামী অন্তত তিন মৌসুম বিশ্ববাজার গমের সংকট অব্যাহত থাকবে। এ সময় বেশির ভাগই ইউক্রেনিয়ান শস্যই বাজারে ঢুকতে পারবে না। ফলে দাম রেকর্ড উচ্চতায় অবস্থান করবে।

ইউক্রেনের ঊর্ধ্বতন এক সরকারি কর্মকর্তা বলেন, চলতি বছর ইউক্রেনের খাদ্যশস্য উৎপাদন কমে প্রায় ৪ কোটি ৮৫ লাখ টনে নামতে পারে। গত বছর উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৮ কোটি ৬০ লাখ টন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *