চার সেলফোন অপারেটরকে ৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকা জরিমানা
নির্দেশনা অমান্য ও লাইসেন্সিংয়ের শর্ত ভঙ্গ করায় চার সেলফোন অপারেটরকে ৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকা জরিমানা করেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত সেলফোন অপারেটর টেলিটককে ৫ কোটি টাকা, রবিকে ২ কোটি, গ্রামীণফোনকে ৫০ লাখ ও বাংলালিংককে ১৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ৩০ জুনের মধ্যে জরিমানার এ অর্থ পরিশোধে অপারেটরদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে বিটিআরসির সচিব মো. নূরুল হাফিজ স্বাক্ষরিত এ-সংক্রান্ত চিঠি সংশ্লিষ্ট অপারেটরদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
অবৈধ ভিওআইপির (ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রটোকল) অভিযোগে ২০১৮ সালের মার্চ থেকে ২০১৯ সালের আগস্ট পর্যন্ত চার অপারেটরের ৫২ হাজারের বেশি সিম জব্দ করা হয়। অবৈধ ভিওআইপি বন্ধে কমিশনের নিয়মিত তদারকি কার্যক্রমের বাইরেও অপারেটরদের সুনির্দিষ্ট কার্যক্রম পরিচালনার নির্দেশনা রয়েছে। এ নির্দেশনা অমান্য ও অবৈধ ভিওআইপিতে সংশ্লিষ্ট অপারেটরের ব্যবহূত সিমের বিপরীতে প্রশাসনিক জরিমানা আরোপের সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন। চার সেলফোন অপারেটরই কমিশনের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আবেদন করে। তাদের আবেদনের ওপর শুনানি শেষে চার অপারেটরকে ৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকা জরিমানার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
কমিশনের নির্দেশনা অমান্য ও লাইসেন্সিং শর্ত ভঙ্গের অপরাধে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইনের ৪৬ ও ৬৫ ধারার বিধান অনুযায়ী ও কমিশনের সিদ্ধান্ত মোতাবেক এ জরিমানা করা হয়। চলতি বছরের ৬ এপ্রিল এ শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। ৭ জুন বিটিআরসির সচিব মো. নূরুল হাফিজ স্বাক্ষরিত এ-সংক্রান্ত চিঠি সংশ্লিষ্ট অপারেটরদের পাঠানো হয়েছে। ৩০ জুনের মধ্যে অপারেটরদের জরিমানা পরিশোধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
শুনানিতে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালে ৩ মার্চ থেকে ২০১৯ সালের ১৩ এপ্রিল এবং একই বছরের ১৪ জুলাই থেকে ১ আগস্ট পর্যন্ত রাজধানীসহ সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে অবৈধ ভিওআইপি যন্ত্রপাতি জব্দের জন্য বিটিআরসি ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে অবৈধ ভিওআইপি যন্ত্রপাতিসহ চারটি মোবাইল অপারেটর কোম্পানির ৫২ হাজার ৩৪৪টি সিম জব্দ করা হয়। জব্দকৃত সিমের মধ্যে টেলিটকের ছিল ৩২ হাজার ৮৪৫টি। এছাড়া রবির ১৬ হাজার ৩৯০টি, গ্রামীণফোনের ২ হাজার ৩৫৬ ও বাংলালিংকের ৭৫৩টি।
বিটিআরসি বলছে, শুনানি শেষে কমিশনের নির্দেশনা ও লাইসেন্সিং শর্ত ভঙ্গ করার অপরাধে কমিশনের সিদ্ধান্ত মোতাবেক টেলিটকের প্রথম ধাপে জব্দকৃত ২৮ হাজার ৪৮৭টি সিমের বিপরীতে ১৩ কোটি ৩৮ লাখ ৩ হাজার টাকা এবং দ্বিতীয় ধাপে ৪ হাজার ৩৫৮টি সিমের বিপরীতে ৪ কোটি ৩৫ লাখ ৮০ হাজার টাকাসহ দুই ধাপে টেলিটককে ১৭ কোটি ৭৩ লাখ ৮৩ হাজার টাকা জরিমানা আরোপ করা হয়। পরে টেলিটকের আবেদন বিবেচনা করে প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে একত্রে ৫ কোটি টাকা জরিমানা ধার্য করা হয়। এছাড়া গ্রামীণফোনের প্রথম ধাপে জব্দকৃত ২ হাজার ৩৫০টি সিমের বিপরীতে ৯৮ লাখ ৪০ হাজার ৬২৫ এবং দ্বিতীয় ধাপে ছয়টি সিমের বিপরীতে ৬০ হাজার টাকাসহ দুই ধাপে গ্রামীণফোনকে ৯৯ লাখ ৬২৫ টাকা জরিমানা করা হয়। পরে কোম্পানিটির আবেদন বিবেচনা করে প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে একত্রে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
একই আইনে রবি অজিয়াটা লিমিটেডকে প্রথম ধাপে জব্দকৃত ১৬ হাজার ৬৯টি সিমের বিপরীতে ৭ কোটি ২৩ লাখ ৬ হাজার ৯৩৭ দশমিক ৫০ এবং দ্বিতীয় ধাপে ৩২১টি সিমের বিপরীতে ৩২ লাখ ১০ হাজার টাকাসহ দুই ধাপে রবিকে ৭ কোটি ৫৫ লাখ ১৬ হাজার ৯৩৭ দশমিক ৫০ টাকা জরিমানা করা হয়। পরে কোম্পানিটির আবেদন বিবেচনা করে প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে একত্রে ২ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়।
একই আইনে বাংলালিংক ডিজিটাল কমিউনিকেশন্স লিমিটেডকে প্রাথমিকভাবে প্রথম ধাপে জব্দকৃত ৭৩১টি সিমের বিপরীতে ৩১ লাখ ৪২ হাজার ৩১২ দশমিক ৫০ এবং দ্বিতীয় ধাপে ২২টি সিমের বিপরীতে ২ লাখ ২০ হাজার টাকাসহ দুই ধাপে বাংলালিংককে ৩৩ লাখ ৬২ হাজার ৩১২ দশমিক ৫০ টাকা জরিমানা করা হয়। বাংলালিংকের পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন বিবেচনা করে প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে জরিমানা একত্রে কমিয়ে ১৫ লাখ টাকা করা হয়।