যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানি বেড়েছে ৬৫ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ

স্টাফ রিপোর্টার

একক বাজার হিসেবে বাংলাদেশে তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র। চলমান ২০২২ সালের প্রথম চার মাস জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক পণ্য আমদানি বেড়েছে ৬৫ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ।

গত ৭ জুন প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিভাগের অধীন অফিস অব টেক্সটাইলস অ্যান্ড অ্যাপারেলসের (ওটিইএক্সএ) পরিসংখ্যানে এ চিত্র প্রকাশ পেয়েছে।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল-এ চার মাসে বাংলাদেশ থেকে ৩২৯ কোটি ৮০ লাখ ১৭ হাজার ডলারের পোশাক আমদানি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত বছরের একই সময়ে আমদানির অর্থমূল্য ছিল ১৯৯ কোটি ৭৮ লাখ ৩৪ হাজার ডলার। এ হিসাবে জানুয়ারি-মার্চে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানি বেড়েছে ৬৫ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ।

২০১৯ সালে বাংলাদেশ থেকে ৫৯২ কোটি ডলারের পোশাক আমদানি করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। ২০২০ সালে কভিডের প্রভাবে আমদানি কমে যায়। গত বছর মার্কিন বাজারে পোশাকের আমদানি হয় ৫২২ কোটি ডলারের। ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাকের আমদানি কমেছিল ১১ দশমিক ৮২ শতাংশ। ২০২১ সালে আমদানি হয় ৭১৪ কোটি ৬০ লাখ ৭৯ হাজার ডলারের। ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে আমদানি বেড়েছে ৩৬ দশমিক ৬৮ শতাংশ।

গত বছর জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পোশাক ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানের ক্রয় পূর্বাভাসসংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ পায়। ‘২০২১ ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি বেঞ্চমার্কিং স্টাডি’ শীর্ষক ওই জরিপ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ থেকে পোশাক আমদানি বাণিজ্যের গতি এখনো দুর্বল। পাশাপাশি শিল্পের সামাজিক ও শ্রম কমপ্লায়েন্স ব্যবস্থাপনায় এখনো ঝুঁকি দেখছেন তারা। তবে সোর্সিং কস্ট বা পণ্য ক্রয় বাবদ ব্যয় বিবেচনায় বাংলাদেশ এখনো আকর্ষণীয়। মূলত মূল্য সুবিধায় পণ্য কিনতেই ঝুঁকি সত্ত্বেও বাংলাদেশমুখী যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক পণ্যের ক্রেতারা।

পোশাক শিল্পসংশ্লিষ্টরা বলছেন, চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতাদের ক্রয়াদেশ স্থানান্তর হয়ে বাংলাদেশে আসার গতি সাম্প্রতিক সময়ে বেড়েছে। শুধু চীন নয়, ক্রয়াদেশ সরে আসছে এমন দেশগুলোর তালিকায় রয়েছে ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়াও। পোশাক শিল্প মালিকদের দাবির সঙ্গে মিলছে বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্যালোচনার তথ্যও। নিয়মিতভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গবেষণা বিভাগের এক্সটারনাল ইকোনমিকস শাখা থেকে প্রকাশ পায় তৈরি পোশাকের প্রান্তিক পর্যালোচনা শীর্ষক প্রতিবেদন। মার্চে প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদনে ক্রয়াদেশ স্থানান্তরের এ ধারা উঠে এসেছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১ সালের জুনে রফতানি বৃদ্ধি পেলেও গতি ছিল মন্থর। সেই গতি বাড়তে শুরু করে সেপ্টেম্বরে। চলমান কভিড মহামারীতেও ২০২১ সালের ডিসেম্বরে রফতানি ছিল অনেক বেশি উৎসাহব্যঞ্জক। বৈশ্বিক লকডাউন শিথিল হওয়ার পর ক্রেতারা ক্রমেই ক্রয়াদেশ স্থানান্তর করছেন বাংলাদেশে। বর্তমানে পোশাক রফতানি প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রাখতে তুলা ও সুতার মতো কাঁচামালের দাম, অস্বাভাবিক পরিবহন খরচ, ক্রয়াদেশ বাতিলের মতো সমস্যাগুলো তাত্ক্ষণিকভাবে বিবেচনায় নেয়া প্রয়োজন বলেও মনে করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

পোশাক শিল্প মালিকরা বলছেন, সামগ্রিকভাবে ক্রয়াদেশ বৃদ্ধির একটা প্রবণতা আছে। এ বৃদ্ধির পুরোটাই স্থানান্তর নয়। অর্থাৎ ক্রয়াদেশ যে বাড়ছে তার মধ্যে চাহিদা বৃদ্ধি ও স্থানান্তর দুটোই আছে। স্থানান্তর হচ্ছে মূলত যে ক্রয়াদেশ চীনারা পেত সেটা। এছাড়া কিছুটা ভিয়েতনাম থেকেও হয়েছে। দেশটিতে কভিডের প্রভাবে লকডাউন কার্যকর হওয়ার ফলে তখন ক্রয়াদেশগুলো বাংলাদেশে সরে এসেছে। সামগ্রিকভাবে ক্রয়াদেশ বৃদ্ধির যে গতি, তা কভিড-পরবর্তী অতিরিক্ত চাহিদার কারণে। ক্রেতাদের মজুদ শেষ হয়ে গিয়েছিল। ফলে ক্রয়াদেশ হঠাৎ করেই বেড়েছে। একটা পর্যায়ে উপচে পড়েছে।

তবে বর্তমান প্রবৃদ্ধি নিয়ে উচ্ছ্বসিত হওয়ার সুযোগ নেই বলে মনে করছেন পোশাক রফতানি খাতসংশ্লিষ্টরা। তাদের বক্তব্য, বাংলাদেশে তৈরি পণ্যগুলোর রফতানির প্রধান গন্তব্য পশ্চিমা দেশগুলো। কভিড-১৯ মহামারীর অভিঘাত কাটিয়ে দেশগুলোর বাজার চাঙ্গা হতে শুরু করেছিল। অনেক দিন নিষ্ক্রিয় থাকা বিক্রয়কেন্দ্রগুলো সক্রিয় হওয়ার পর চাহিদার উল্লম্ফনও দেখা গিয়েছিল, যার প্রতিফলন হিসেবে মোট রফতানিতে বড় প্রবৃদ্ধি দেখতে পেয়েছে বাংলাদেশ। তবে এ প্রবৃদ্ধি টেকসই হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। কারণ করোনার ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে পশ্চিমা বাজারগুলোর চাহিদায় ভাটার শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।

পোশাক পণ্য রফতানি ও প্রস্তুতকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ও রফতানিকারকদের সংগঠন এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএবি) সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী এমপি বণিক বার্তাকে বলেন, পশ্চিমা বাজারগুলোর চাহিদা বৃদ্ধির প্রতিফলন হিসেবে বিপুল পরিমাণ ক্রয়াদেশ বাংলাদেশে এসেছে। এছাড়া করোনা মহামারীর মধ্যে সরকার রফতানি খাতে বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা করায় উদ্যোক্তারা সে ক্রয়াদেশ গ্রহণ করে সঠিক সময়ে পণ্য সরবরাহ করতে পেরেছেন। তাই সার্বিকভাবে রফতানি বেড়েছে। বর্তমানে পণ্য পরিবহনে খরচ অনেক বেড়ে গিয়েছে। যার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে আমদানি-রফতানি পরিসংখ্যানে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *