সিএন্ডএফ এজেন্টসদের সৃষ্ট সমস্যা সমাধানে এনবিআরের চেয়ারম্যান, অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা : সিএন্ডএফ নেতৃবৃন্দের
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কিছু কর্মকর্তা সিএন্ডএফ এজেন্টসদের নানাভাবে হয়রানি করছে। ক্রমাগত কাজের পরিবেশ নষ্ট করছে। আইন পরিবর্তনের নামে এজেন্টসদের কাজ বন্ধ করার ষড়যন্ত্র করছে। এমনকি শিক্ষা সনদের নামে লাইসেন্স বাতিল করার পায়তারা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন বাংলাদেশ কাস্টমস ক্লিয়ারিং এন্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্টস এসোসিয়েশন (সিএন্ডএফ এজেন্টস) নেতৃবৃন্দ।
বুধবার (০৮ জুন, ২০২২) রাজধানীর নিউ বেইলী রোডে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ কাস্টমস ক্লিয়ারিং এন্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্টস এসোসিয়েশনের উদ্যোগে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ এসব অফিযোগ করেন। তারা বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর পর এনবিআর এর কিছু কর্মকর্তা আমাদের সাথে কলোনীর বাসিন্দাদের মতো ব্যবহার করছেন। তাদের এই ব্যবহারের প্রতিবাদে মঙ্গলবার (০৭ জুন, ২০২২) বাংলাদেশ কাস্টমস ক্লিয়ারিং এন্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্টস এসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দের আহ্বানে সারাদেশে পূর্ণ দিবস কর্মবিরতি পালন করা হয়েছে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, সিএন্ডএফ এজেন্টসরা হচ্ছেন মধ্যস্থতাকারী। আমদানিকারক পণ্য আমদানি করেন, সিএন্ডএফ এজেন্টসরা আমদানিকারকের কাছ থেকে পণ্য আমদানির কাগজ নিয়ে কাস্টমস কর্মকর্তাদের কাছে যান। কাস্টমস কর্মকর্তারা পণ্যের ভ্যাট ও ট্যাক্স নির্ধারণ করে দেন। কর্মকর্তাদের নির্ধারিত ভ্যাট ও ট্যাক্স আমদানিকারক প্রদান করে পণ্য খালাস করেন। মধ্যস্থতাকারী হিসেবে সরকার নির্ধারিত ২৫ পয়সা হারে কমিশন সিএন্ডএফ এজেন্টসরা পেয়ে থাকেন। এই কমিশনের উপর থেকে ৮ পয়সা ভ্যাট ও আয়কর হিসেবে সরকারকে প্রদান করতে হয়। ফলে প্রকৃত পক্ষে সিএন্ডএফ এজেন্টসরা কমিশন পান ১৭ পয়সা।
সংগঠনের মহাসচিব মোঃ সুলতান হোসেন খান বলেন, বাংলাদেশের অধিকাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান প্রথম প্রজন্মের মধ্যে সীমাবন্ধ। এখনোও দ্বিতীয় প্রজন্মে যেতে পারেনি। সাম্প্রতিক সময়ে কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দ্বিতীয় প্রজন্মে যাচ্ছে। তাই সিএন্ডএফ এজেন্টসের মালিক যারা দীর্ঘদিন কাজ করে সুনাম অর্জন করেছেন, তাদের ক্ষেত্রে শিক্ষার মান এইচএসসির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা এবং যারা নতুন ব্যবসা শুরু করবেন, তাদের জন্য স্নাতক পর্যন্ত শিক্ষা সনদ প্রদান করা যেতে পারে। কিন্তু পুরাতনদের ক্ষেত্রে শিক্ষা সনদ শিতিল করে এইচএসসি করতে হবে; তা না হলে অনেক সিএন্ডএফ এজেন্টস মালিক এবং তার পরিবার মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন- যা আমাদের কাম্য নয়।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এনবিআর এর কিছু কর্মকর্তা সরকারকে ভুল বুঝায়ে এক প্রজ্ঞাপন জারি করেছে- তাতে বলা হয়েছে আমদানিকারকের ভ্যাট বা ট্যাক্স বাকি থাকলে সিএন্ডএফ এজেন্টসদের লাইসেন্স নবায়ন করা হবে না। তিনি বলেন, ১৭ পয়সার মালিককে হাজার কোটি টাকার পণ্য আমদানির বিপরীতে ট্যাক্স বা ভ্যাট বাকির জন্য লাইসেন্স নবায়ন করা হবে না; এর কোনো যুক্তি খুঁজে পাই না। একজন সিএন্ডএফ এজেন্টসের পক্ষে শত কোটি টাকা ভ্যাট বা ট্যাক্স পরিশোধ করা কী করে সম্ভব? ওই ভ্যাট বা ট্যাক্স বাকির জন্য লাইসেন্স নবায়ন করা না হলে সিএন্ডএফ এজেন্টদের কিছু করার নেই। কারণ আমদানির বিপরীতে বকেয়া ট্যাক্স বা ভ্যাট সিএন্ডএফ এজেন্টসদের পক্ষে আদায় করা যেমন সম্ভব নয়; তেমনি নিজেদের পক্ষে পরিশোধ করাও সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তথা সরকারকে ভুল বুঝায়ে এনবিআরের কিছু কর্মকর্তা সিএন্ডএফ এজেন্টদের বিপদে ফেলে দিচ্ছেন। ইতোমধ্যে আমরা একদিন সফলভাবে কর্মবিরতি পালন করেছি। বাজেট ঘোষণার পর সিএন্ডএফ এজেন্টসদের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে শনিবার (১১ জুন, ২০২২) লাগাতার কর্মবিরতি পালন করার ঘোষণা দিতে বাধ্য হবো। কারণ যাদের ১৭ পয়সা কমিশনের অর্থ বকেয়া থাকে; সেই অর্থ আদায় করতে গিয়ে অনেকে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, তার মধ্যে মারা গেছেন ৭০ জন সিএন্ডএফ এজেন্টস। এ অবস্থায় কী করে আমদানিকারকের পণ্যের বিপরীতে বকেয়া ট্যাক্স ও ভ্যাট আদায় করবে সিএন্ডএফ এজেন্টসরা। যা সরকার আদায় করতে হীমশিম খায়, সেখানে সিএন্ডএফ এজেন্টসরা আদায় করবে কী করে! ওই বকেয়ার জন্য লাইসেন্স নবায়ন করা না হলে সিএন্ডএফ এজেন্টসদের কিছু করার নেই। তাই এ ধরনের সিদ্ধান্ত এনবিআরকে প্রত্যাহার করতে হবে।
অন্যএক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ১০ হাজার সিএন্ডএফ এজেন্টস মালিকের সাথে প্রত্যক্ষভাবে ১ লাখ লোক কর্মরত। সিএন্ডএফ এজেন্টসদের মাধ্যমে ৫ থেকে ৭ লাখ লোকের জীবন-জীবিকা নির্ভর করছে। করোনা পরবর্তী সময়ে ঘুরে দাঁড়ানো এমনিতেই কঠিন হয়ে পরেছে। এ অবস্থায় এতোগুলো লোকের পেটে আঘাত করার কোনো মানেই হয় না। বেঁচে থাকার তাগিদে আমরা কঠিন থেকে কঠিন কর্মসূচী গ্রহণ করতে বাধ্য হবো। যার দায়ভার এনবিআরের কিছু কর্মকর্তার উপর বর্তাবে।
তিনি সিএন্ডএফ এজেন্টসদের সৃষ্ট সমস্যা সমাধানে এনবিআরের চেয়ারম্যান, অর্থমন্ত্রী এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সভাপতি আলহাজ শামসুর রহমান, খায়রুল বাশার, দেলোয়ার হোসেন দিলু, শেখ মোঃ আসলাম সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।