যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদির দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বেড়েছে ২২%
গত বছর সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ২৫০ কোটি সৌদি রিয়াল বা ২ হাজার ৪৭০ কোটি ডলার। ২০২০ সালের তুলনায় যা ২২ শতাংশ বেড়েছে। ইউএস-সৌদি বিজনেস কাউন্সিলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রে সৌদি আরবের জ্বালানি তেলবহির্ভূত পণ্য রফতানি রেকর্ড বেড়েছে। খবর আরব নিউজ।
২০১৫ সালে ঘোষিত ভিশন ২০৩০ অনুযায়ী জ্বালানি তেলের ওপর নির্ভরতা কমানোর পরিকল্পনা করছে দেশটি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে তেলবহির্ভূত অন্যান্য পণ্য রফতানিতে মনোযোগ বাড়িয়েছে দেশটি। ইউএস-সৌদি বিজনেস কাউন্সিলের প্রতিবেদনে বলা হয়, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ বাড়ার মাধ্যমে প্রকাশ পায় দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরো জোরদার হয়েছে। ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে সৌদির মোট রফতানি ছিল ৩ হাজার ৩৭০ কোটি সৌদি রিয়ালের পণ্য। গত বছর তা বেড়ে ৫ হাজার ৭০ কোটি সৌদি রিয়ালে উন্নীত হয়।
গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে জ্বালানি তেলবহির্ভূত সৌদি পণ্যের রফতানি ৭২ শতাংশ বেড়ে ৯১০ কোটি সৌদি রিয়ালে উন্নীত হয়েছে, যা রেকর্ড সর্বোচ্চ। জ্বালানি তেলবহির্ভূত পণ্যের মধ্যে সব থেকে বেশি রফতানি হয়েছে সার। পণ্যটির মোট রফতানির মূল্য ছিল ২৬০ কোটি সৌদি রিয়াল। জ্বালানি তেলবহির্ভূত পণ্যগুলোর মধ্যে ২৯ শতাংশ রফতানিই হয় সার। এর মধ্যে গত এক দশকে ইউরিয়া সারের রফতানি দ্বিগুণ বেড়েছে। এক দশকে পণ্যটির রফতানি ৩৭ কোটি ৫০ লাখ সৌদি রিয়াল থেকে বেড়ে ৭৫ কোটি রিয়ালে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানি তেলবহির্ভূত পণ্যগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় শীর্ষ রফতানীকৃত পণ্য ছিল জৈব রাসায়নিক পণ্য (অর্গানিক কেমিক্যাল)। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের মোট রফতানির ২১ শতাংশ ছিল জৈব রসায়ন। মোট রফতানি মূল্য দাঁড়িয়েছে ১৯০ কোটি সৌদি রিয়াল। ২০২০ সালের তুলনায় গত বছর রফতানি বেড়েছে ১০৮ শতাংশ।
অ্যালুমিনিয়াম রফতানি বৃদ্ধির জেরে সৌদি আরবের ধাতব ও মাইনিং পণ্য রফতানিরও রেকর্ড হয়েছে। পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রে অ্যালুমিনিয়াম রফতানি ২৪ শতাংশ বেড়ে ১৩০ কোটি সৌদি রিয়ালে দাঁড়িয়েছে। এতে গত বছর সৌদি আরবের তেলবহির্ভূত খাতের তৃতীয় সর্বোচ্চ রফতানি পণ্য ছিল অ্যালুমিনিয়াম।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে মার্কিন পণ্যের আমদানিও ঊর্ধ্বমুখী ছিল। সৌদি আরবে ২০২০ সালের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রের রফতানি দশমিক ৩ শতাংশ বেড়ে ৪ হাজার ১৮০ কোটি রিয়ালে উন্নীত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, যন্ত্রাংশ, শিল্পপণ্য, কৃষিপণ্য, ওষুধ ইত্যাদি। গত বছর মোট রফতানীকৃত পণ্যের মধ্যে সব থেকে বেশি রফতানি হয় মোটরচালিত গাড়ি। মধ্যপ্রাচ্যের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটিতে ৭১০ কোটি রিয়ালের মোটর গাড়ি রফতানি করেছে মার্কিন গাড়ি নির্মাতা কোম্পানিগুলো। এর মধ্যে ৭৫ শতাংশই ছিল সাধারণ ভোক্তা পর্যায়ে ব্যবহূত গাড়ি। বাকি ২৫ শতাংশ ছিল সামরিক যানবাহন, ট্রাক্টর, ট্রেইলার ও অন্যান্য যন্ত্রাংশ।
সৌদিতে সর্বাধিক রফতানি পণ্যের মধ্যে দ্বিতীয় ছিল বয়লার, মেশিন ও অন্যান্য যন্ত্রাংশ, যা মোট রফতানির ১২ শতাংশ। গত বছর পণ্যগুলোর মোট রফতানি মূল্য দাঁড়ায় ৫২০ কোটি রিয়াল। গত বছর সৌদিতে তৃতীয় সর্বাধিক যুক্তরাষ্ট্রের রফতানি পণ্য ছিল উড়োজাহাজ ও উড়োজাহাজের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ।
অঞ্চলওয়ারি টেক্সাস ছিল সৌদি আরবের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার। টেক্সাসের সঙ্গে ৭২০ কোটি সৌদি রিয়ালের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য হয়েছে। এছাড়া দ্বিতীয় ও তৃতীয় সর্বোচ্চ বাণিজ্য অংশীদার মেরিল্যান্ড ও ক্যালিফোর্নিয়া, তাদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য হয়েছে যথাক্রমে ৪১০ কোটি ও ২৫০ কোটি সৌদি রিয়াল।