যুদ্ধবিরতির পরও ইয়েমেনে হামলা
যুদ্ধ বন্ধ রাখার সমঝোতার পরও ইয়েমেনের হুদাইদা শহরে সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট এবং হুথি বিদ্রোহীদের মধ্যে সংঘাত শুরু হয়েছে। ইয়েমেনের সরকার সমর্থিত বাহিনী ও হুথি বিদ্রোহীদের সাম্প্রতিক সংঘাতের পর সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের যুদ্ধ বিমান থেকে আবারও বোমা হামলা করা হয়েছে বিদ্রোহীদের ঘাঁটি লক্ষ্য করে।
এখন পর্যন্ত এই যুদ্ধে কয়েক হাজার মানুষ মারা গেছে এবং লক্ষাধিক ইয়েমেনিকে দুর্ভিক্ষের মুখে ঠেলে দিয়েছে।
তিন বছর ধরে চলতে থাকা এই যুদ্ধ থামানোর উদ্দেশ্যে আবারো দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা শুরু করার চেষ্টা করছে জাতিসংঘ।
হুথি বিদ্রোহীদের সুপ্রিম রেভোলুশনারি কমিটির প্রধান মোহাম্মদ আলি আল-হুথি সম্প্রতি তার এক বিবৃতিতে বলেছেন যে, জাতিসংঘের অনুরোধে হুথি বিদ্রোহীরা জোটের সেনাদের বিরুদ্ধে ড্রোন এবং মিসাইল আক্রমণ সাময়িকভাবে বন্ধ রেখেছে।
ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়, হুথি বিদ্রোহীরা আরও দীর্ঘ সময় হামলা বন্ধ রাখতে পারে যদি সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট শান্তি চায়।
লোহিত সাগরের বন্দর নগর হুদাইদায় হুথি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় সৌদি আরব ও আরব আমিরাতের নেতৃত্বে তৈরি সামরিক জোট। জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় হওয়া আলোচনার প্রচেষ্টাকে তারা সাধুবাদও জানায়।
ইয়েমেনে জাতিসংঘের বিশেষ দূত মার্টিন গ্রিফিথস আশা প্রকাশ করেন, এ বছরের শেষ দিকে আবারও দুই পক্ষের মধ্যে শান্তি আলোচনা শুরু হবে।
তবে গত সেপ্টেম্বরে প্রথম দফা শান্তি আলোচনায় উপস্থিত থাকতে সক্ষম হয়নি হুথি বিদ্রোহীরা।
হুদাইদায় চলতে থাকা সাম্প্রতিক সংঘাতের কারণে চলমান এই সংঘর্ষ বন্ধের আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা ব্যাহত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইয়েমেনের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ তাদের জীবন ধারণের প্রয়োজনীয় খাদ্য, জ্বালানি ও ওষুধের আমাদানির জন্য হুদাইদা বন্দরের ওপর নির্ভরশীল।
জাতিসংঘ এর আগে সতর্ক করেছে যে, এই সংঘাতে আড়াই লাখ মানুষের প্রাণহানি হতে পারে। পাশাপাশি লক্ষাধিক দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষের কাছে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছানোর কাজ বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
২০১৪ সালে শিয়া মতাবলম্বী হুথি বিদ্রোহীরা ইয়েমেনের সেসময়কার নতুন প্রেসিডেন্ট আব্দরাব্বু মনসুর হাদির দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে উত্তরাঞ্চলের প্রদেশ সাদা এবং আশেপাশের কয়েকটি এলাকার দখল নেয়। পরবর্তীতে বিদ্রোহীরা রাজধানী সানার নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং প্রেসিডেন্ট হাদিকে দেশ ত্যাগে বাধ্য করে।
২০১৫ সালের মার্চ মাসে হুথি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সৌদি আরব সহ আটটি সুন্নি মুসলিম আরব দেশের সাথে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের সেনাবাহিনী জোট গঠন করে আক্রমণ শুরু করলে যুদ্ধের তীব্রতা নাটকীয়ভাবে বেড়ে যায়।
গত তিন বছরে ৯ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে এবং প্রায় ৫৩ হাজার মানুষ আহত হয়েছে। এদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক।
দেশটিতে স্বাস্থ্য সেবা ভেঙে পড়েছে, কলেরা আর ডিপথেরিয়া ছড়িয়ে পড়েছে। পাঁচ বছরের কম বয়সী প্রায় ৪ লাখ শিশু চরম অপুষ্টিতে ভুগছে, যা তাদের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলছে।
মানবাধিকার সংস্থাগুলোর তথ্য মতে, দেশটির ৭৫ শতাংশ মানুষের জরুরি মানবিক সহায়তা প্রয়োজন। অন্তত সোয়া কোটি মানুষের বেঁচে থাকার জন্য জরুরি খাদ্য সহায়তা দরকার। প্রায় পৌনে দুই কোটি মানুষের জানা নেই, তাদের পরবর্তী বেলার খাবার জুটবে কিনা। শিশুরা চরম অপুষ্টিতে ভুগছে, যা তাদের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলছে।