টেসলার মুনাফা বেড়েছে ৭ গুণেরও বেশি

স্টাফ রিপোর্টার

বিশ্বজুড়েই বাড়ছে বিভিন্ন পণ্যের দাম। লিথিয়াম, নিকেল, কোবাল্টের মতো ধাতুর মূল্যও ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। এ অবস্থায় কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধির কথা জানিয়ে কয়েক ধাপে গাড়ির দাম বাড়িয়েছে টেসলা। ফলে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) রেকর্ড পরিমাণ মুনাফা পেয়েছে মার্কিন বিদ্যুচ্চালিত গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি। খবর এপি।

টেসলা জানিয়েছে, জানুয়ারি-মার্চে সংস্থাটির মুনাফা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় সাত গুণেরও বেশি বেড়েছে। বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থায় জটিলতা ও চীনে কভিডজনিত উৎপাদন হ্রাস সত্ত্বেও এ সময়ে সংস্থাটির গাড়ি বিক্রি শক্তিশালী ছিল।

বিদ্যুচ্চালিত গাড়ি ও সৌর প্যানেল প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানটি বছরের প্রথম তিন মাসে রেকর্ড ৩৩২ কোটি ডলার মুনাফা পেয়েছে। স্টকভিত্তিক কমপেনসেশনের মতো বিষয়গুলো বাদ দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারপ্রতি আয় দাঁড়িয়েছে ২ ডলার ২২ সেন্টে। যেখানে ওয়াল স্ট্রিটের বিশ্লেষকরা শেয়ারপ্রতি ২ ডলার ২৬ সেন্ট আয়ের পূর্বাভাস দিয়েছিলেন।

এ সময়ে টেক্সাসভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটির আয় ১ হাজার ৮৭৬ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। আয়ের দিক থেকেও ১ হাজার ৭৮৫ ডলারের পূর্বাভাসকে ছাড়িয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রথম প্রান্তিকে সংস্থাটি লিথিয়াম, কোবাল্ট ও অন্যান্য কাঁচামালের ক্রমবর্ধমান ব্যয় মোকাবেলায় একাধিকবার গাড়ির দাম বাড়িয়েছে। তবে পুরো বছরে শক্তিশালী আয়ের ঘোষণা দেয়া সংস্থাটির জন্য কঠিন হতে পারে। জার্মানি ও টেক্সাসে নতুন কারখানা তৈরির পাশাপাশি পণ্যের দাম বাড়ার জন্য অতিরিক্ত ব্যয়ের মুখোমুখি হয়েছে টেসলা। আবার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিদ্যুচ্চালিত গাড়ি উৎপাদনে মনোযোগ দেয়ায় এ খাতে প্রতিযোগিতাও বেড়ে গিয়েছে।

এর মধ্যে সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী ইলোন মাস্ক বিশ্লেষকদের সঙ্গে একটি কনফারেন্সে বলেন, ৬-১২ মাসের মধ্যে অতিরিক্ত যে ব্যয় হবে, তা হিসাব করেই দাম বাড়ানো হয়েছে। স্পষ্টতই চাহিদা নয়, আমাদের উৎপাদন সীমিত। দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির কারণে টেসলা অনেক প্রতিবন্ধকতায় এড়িয়ে যেতে পেরেছে। এ কারণে আমাদের ব্যয় এখনো নিয়ন্ত্রণের মধ্যে। তবে সে চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। কিছু সরবরাহকারী চলতি বছরের শেষ পর্যন্ত গত বছরের চেয়ে ২০-৩০ শতাংশ দাম বাড়াতে চাইছেন। যদিও আমরা আশা করছি, আমাদের আর দাম বাড়াতে হবে না।

টেসলার সর্বনিম্ন দামের গাড়ি মডেল থ্রি এখন প্রায় ৪৭ হাজার ডলার দিয়ে শুরু হয়। সংস্থাটি জানিয়েছে, উৎপাদন ক্ষমতা ও একটি নতুন ব্যাটারি রসায়নের মাধ্যমে খরচ নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছে। প্রথম প্রান্তিকে সংস্থাটির উৎপাদনও শক্তিশালী ছিল। তবে সংক্রমণ বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে আরোপিত লকডাউনে সংস্থাটির সাংহাইয়ের কারখানা সাময়িকভাবে বন্ধ করতে হয়েছিল। পাশাপাশি এ লকডাউনে টেসলার সরবরাহ ব্যবস্থাও কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যদিও সংস্থাটি অন্যান্য গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের তুলনায় যন্ত্রাংশ ঘাটতির স্বল্প প্রভাব অনুভব করেছে বলেই মনে হচ্ছে।

ইলোন মাস্ক বলেছেন, সাংহাইয়ের কারখানা আবারো উৎপাদনে ফিরেছে। তবে কয়েক সপ্তাহের গাড়ি উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবু চলতি বছর টেসলা লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ১৫ লাখ গাড়ি উৎপাদন করতে পারবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

মুনাফা বাড়ার খবরে মার্কিন পুঁজিবাজারে টেসলার শেয়ারদরও ঊর্ধ্বমুখী। বুধবার সংস্থাটির শেয়ারদর ৫ শতাংশ বেড়ে ৯৭৭ ডলার ২০ সেন্টে পৌঁছেছে।

প্রথম প্রান্তিকে বিশ্বজুড়ে রেকর্ড ৩ লাখ ১০ হাজার ইউনিট গাড়ি সরবরাহ করেছে টেসলা। এ সংখ্যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৬৮ শতাংশ বেশি। সে সময় সংস্থাটি ১ লাখ ৮৫ হাজার ইউনিট গাড়ি সরবরাহ করেছিল। গত বছর সব মিলিয়ে সংস্থাটি ৯ লাখ ৩৬ হাজার গাড়ি সরবরাহ করেছিল। এ সংখ্যাও ২০২০ সালের তুলনায় ৮৭ শতাংশ বেশি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *