পর্যটকদের পছন্দের তালিকা থেকে বাদ পড়ছে থাইল্যান্ড
কভিড-১৯ মহামারীর প্রাদুর্ভাব হলে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পর্যটন স্থবির হয়ে পড়ে। সম্প্রতি কোয়ারেন্টিন বিধিনিষেধ শিথিল হতে শুরু করায় পর্যটন খাত আবারো পুনরুদ্ধার হতে শুরু করেছে। ভিড় বেড়েছে যাত্রীদের। তবে পর্যটন খাত সম্পূর্ণ পুনরুদ্ধার হতে আরো সময় লাগবে। এছাড়া কভিডজনিত বিধিনিষেধের কারণে যাত্রীদের পছন্দের গন্তব্যের তালিকা থেকে পিছিয়ে পড়েছে থাইল্যান্ড। খবর ব্যাংকক পোস্ট।
ভ্রমণ সংস্থা ফরোয়ার্ডকিজের তথ্য বলছে, গত মাসে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াগামী আন্তর্জাতিক উড়োজাহাজ সংস্থাগুলোর বুকিং মহামারীপূর্ব সময়ের মাত্র ৩৮ শতাংশে এসে পৌঁছেছে। ২০১৯ সালের প্রারম্ভে ১০ শতাংশেরও কম ছিল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার গন্তব্য। তবে বুকিং বেড়েছে সিঙ্গাপুর ও ফিলিপাইনের।
এ বিষয়ে ফিলিপাইনের পর্যটনমন্ত্রী বার্নাডেট রোমুলো-পুয়াট বলেন, আমরাই সর্বপ্রথম বিধিনিষেধ তুলে নিয়েছি। পর্যটকরা খুশি, কারণ দেশে আসা মাত্রই তারা নিঃসংকোচে ঘুরতে পারছেন।
সিঙ্গাপুর ও ফিলিপাইনে ভ্রমণকারী টিকাপ্রাপ্ত যাত্রীদের দেশে আসার আগে একটি কভিড র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করা বাধ্যতামূলক। সে তুলনায় থাইল্যান্ডে কভিডজনিত বিধিনিষেধ বেশ কড়া। তাই যাত্রীদের পছন্দের তালিকা থেকে বাদ পড়ে যাচ্ছে থাইল্যান্ডের নাম।
ফরোয়ার্ডকিজের তথ্য বলছে, সিঙ্গাপুরের বুকিং ২০১৯ সালের ৭২ শতাংশে পৌঁছেছে। ফিলিপাইনসের ক্ষেত্রে এ হার ৬৫ শতাংশ। তবে থাইল্যান্ডগামী যাত্রী সংখ্যা কমায় দেশটিতে বুকিং দাঁড়িয়েছে ২০১৯ সালের ২৪ শতাংশে।
এ বিষয়ে থাই হোটেলস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মারিসা সুকোসোল নানভাকডি বলেন, দেশে এসে পিসিআর পরীক্ষার ব্যয় পড়ে দুই-আড়াই হাজার থাই বাত। বিশেষ করে গ্রুপের জন্য এ ব্যয়ের পরিমাণ আরো বেশি। ফলে থাইল্যান্ডে ভ্রমণ করতে দ্বিধায় পড়েছেন পর্যটকরা। যদি অন্য কোনো দেশে কভিডজনিত বিধিনিষেধ না থাকে, তবে তারা সে দেশগুলোতেই যেতে বেশি আগ্রহী হবেন। উড়োজাহাজ পরিবহন বিশ্লেষক ব্রেনডান সোবি বলেন, ভ্রমণের জন্য থাইল্যান্ডের তুলনায় সিঙ্গাপুর ও ফিলিপাইনের বাজার বৃহত্তর।
এদিকে আরো কয়েক মাস আগে কভিডজনিত বিধিনিষেধ শিথিল করেছে ইউরোপ। তাই ইউরোপের তুলনায় এশিয়ার পর্যটন ব্যবসার পুনরুদ্ধার হতে আরো সময় লাগবে।
ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য বলছে, চলতি বছর এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে যাত্রী সংখ্যা ২০১৯ সালের ৬৮ শতাংশে পৌঁছবে। যাত্রী সংখ্যা মহামারীপূর্ব সময়ে পৌঁছতে ২০২৫ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। অথচ অন্যান্য অঞ্চলে এর থেকে এক বছর কম সময়েই যাত্রী সংখ্যা মহামারীপূর্ব সময়ে পৌঁছবে। ফেব্রুয়ারিতে সিঙ্গাপুরগামী যাত্রী সংখ্যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় চার গুণ বেড়েছে।
এদিকে পর্যটন খাতের সম্পূর্ণ পুনরুদ্ধার হতে থাইল্যান্ডের ২০২৬ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলে জানান দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর। ২০১৯ সালে থাইল্যান্ডের দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১২ শতাংশ আসে দেশের পর্যটন খাত থেকে। মূলত সাদা বালুুর সমুদ্রসৈকত, ঐতিহাসিক স্থাপত্য কর্ম ও উষ্ণ আবহাওয়ার কারণে পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া। ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজমের তথ্য বলছে, ২০১৯ সালে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জিডিপির ৩৮ হাজার ৬০ কোটি ডলার এসেছে অঞ্চলটির পর্যটন খাত থেকে, যা মোট জিডিপির ১১ দশমিক ৮ শতাংশ।
একসময় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ভ্রমণকারী আন্তর্জাতিক যাত্রীদের মধ্যে সর্বাধিক সংখ্যা ছিল চীনাদের। ২০১৯ সালে থাইল্যান্ডগামী চার কোটি আন্তর্জাতিক যাত্রীর এক-চতুর্থাংশই ছিলেন চীনা পর্যটক। তবে বর্তমানে চীনে নতুন করে লকডাউন আরোপ করায় দেশ ছাড়তে অপারগ চীনারা।