আবারো কমেছে দুগ্ধপণ্যের দাম
গ্লোবাল ডেইরি ট্রেডের (জিডিটি) সর্বশেষ নিলামে টানা দ্বিতীয়বারের মতো কমল দুগ্ধপণ্যের মূল্যসূচক। প্রধান ভোক্তা অঞ্চল এশিয়ায় চাহিদা কমায় এতে প্রধান ভূমিকা রেখেছে। বিশেষ করে চীন লকডাউনের কারণে এসব পণ্যের বাজার স্থবির হয়ে পড়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একটি নির্দিষ্ট সময় ধরে চলা শুষ্ক আবহাওয়ার পর নিউজিল্যান্ডের খামারিরা দুধ দোহন বন্ধ রেখেছেন। এ কারণে নিলামে দুগ্ধপণ্য তোলা হয়েছে স্বল্প পরিমাণে। পণ্যগুলোর চাহিদা কম থাকায় অংশগ্রহণকারীরা কম দাম হেঁকেছেন। এটিও বিশ্ববাজারে দুগ্ধপণ্যের দাম কমে আসার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
সর্বশেষ জিডিটি নিলামে প্রতি টন দুগ্ধপণ্যের গড় মূল্য দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৯৮১ ডলারে। গত নিলামের তুলনায় দাম ১ শতাংশ কমেছে। নিলামে সর্বোচ্চ ২৩ হাজার ৪৬০ টন দুগ্ধপণ্য সরবরাহ করা হয়। এর মধ্যে বিক্রি হয়েছে ২১ হাজার ৫১১ টন। নিলামে ১৫৯ জন ব্যবসায়ী ও প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। এর মধ্যে জয়ী হয়েছেন ১০১ জন।
জিডিটি মূল্যসূচক অনুযায়ী, ননিযুক্ত গুঁড়ো দুধের দাম ১ দশমিক ৫ শতাংশ কমেছে। প্রতি টনের মূল্য দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৫৩২ ডলারে। অন্যদিকে প্রতি টন মাখন বিক্রি হয়েছে ৬ হাজার ৮৯১ ডলারে। আগের নিলামের তুলনায় দাম কমেছে দশমিক ৬ শতাংশ। অ্যানহাইড্রাস মিল্ক ফ্যাটের দাম ২ দশমিক ৫ শতাংশ কমেছে। প্রতি টনের মূল্য স্থির হয়েছে ৬ হাজার ৯০৮ ডলারে। ল্যাকটোজের দামও দশমিক ৬ শতাংশ কমেছে। প্রতি টনের মূল্য স্থির হয়েছে ১ হাজার ৫৯৮ ডলারে।
তবে ননিবিহীন গুঁড়ো দুধের দাম দশমিক ১ শতাংশ বেড়েছে। প্রতি টন বিক্রি হয়েছে ৪ হাজার ৫৯৯ ডলারে। বেড়েছে মাখনযুক্ত গুঁড়ো দুধের দামও। প্রতি টন বিক্রি হয়েছে ৪ হাজার ৪৬১ ডলারে, যা আগের নিলামের তুলনায় ৬ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি। চেডার পনিরের দাম ২ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়েছে। প্রতি টনের মূল্য স্থির হয়েছে ৬ হাজার ৪৭২ ডলার। এবারের নিলামে সুইট হুই পাউডার উত্তোলন করা হয়নি।
এদিকে সর্বশেষ নিলামে দাম কমলেও তা রেকর্ড পর্যায়েই রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্ববাজারে পাল্লা দিয়ে যেমন বাড়ছে দুগ্ধপণ্যের চাহিদা, ঠিক তেমনি কমছে সরবরাহ। কারণ গত বছর থেকেই বিশ্বজুড়ে দুধ উৎপাদন মন্দার মুখে। পশুখাদ্যের দাম অব্যাহতভাবে বাড়ায় খামারিরা বিপাকে পড়েছেন। এছাড়া পশুপালনের জন্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য উপকরণের দামও বেড়েছে। তাছাড়া সরবরাহ চেইনে সংকট বাজারে অস্থিতিশীলতাকে আরো তীব্র করে তুলেছে।
বৈশ্বিক এ নিলামে সবচেয়ে বেশি দুগ্ধপণ্য সরবরাহ করে ওশেনিয়া মহাদেশ। এছাড়া দক্ষিণ গোলার্ধের দেশগুলোর সরবরাহও থাকে ভরপুর। কিন্তু গত ছয় মাসে সরবরাহ আগের বছরগুলোর তুলনায় অনেক কমেছে। ফলে শীর্ষ ভোক্তা দেশগুলোর মাঝে সরবরাহ নিশ্চিতে প্রতিযোগিতা তীব্র হয়ে উঠেছে।
অন্যদিকে বিশ্বজুড়ে দুগ্ধপণ্যের চাহিদা বাড়ায় কমছে মজুদ। সর্বশেষ নিলামে বরাবরের মতোই সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে ডব্লিউএমপি ও এসএমপি। আর এসব পণ্যের শীর্ষ ক্রেতা ছিল চীন। দুই বছর ধরে দেশটি রেকর্ড পরিমাণ দুগ্ধপণ্য আমদানি করেছে। এমন অস্বাভাবিক চাহিদার কারণেই দাম হু হু করে বাড়ছে। বিশ্লেষকদের প্রত্যাশা, বছরের শেষ দিকে চাহিদা কিছুটা কমলেও বার্ষিক চাহিদার হার ঊর্ধ্বমুখীই থাকবে। তবে চলতি বছরও দুগ্ধপণ্যের সরবরাহ থাকবে কমতির দিকে। প্রধান আমদানিকারক দেশগুলো বর্তমানে দুগ্ধপণ্যের মজুদ বাড়ানোর প্রতি জোর দিচ্ছে। উদ্দেশ্য আপত্কালীন ক্রমবর্ধমান চাহিদা মোকাবেলা করা। এছাড়া জাহাজীকরণ বিলম্বের কারণেও আগেভাগে দুগ্ধপণ্য সংগ্রহ করে রাখছে এসব দেশ।