রুবলে আপত্তি থাকলে গ্যাস বিক্রির চুক্তি স্থগিত

স্টাফ রিপোর্টার

গ্যাসের মূল্য রুবলে পরিশোধ না করলে চুক্তি স্থগিত করে দেয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার টেলিভিশনে প্রচারিত এক ভাষণে শুক্রবার থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে বলে জানান তিনি। অন্যদিকে, রাশিয়ার কাছ থেকে আমদানি করা গ্যাসের মুদ্রা রুবলে পরিশোধ করতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে ইউরোপীয় দেশগুলো। খবর রয়টার্স।

রয়টার্স জানায়, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) তাদের গ্যাসের চাহিদার ৪০ শতাংশ ও জ্বালানি তেলের চাহিদার ৩০ শতাংশ রাশিয়ার কাছ থেকে আমদানি করে। সরবরাহ যদি বিঘ্নিত হয় তাহলে সহজে বিকল্প উৎস থেকে জ্বালানির ঘাটতি মোকাবিলার সহজ কোনো পথ তাদের সামনে নেই। এমন পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার পাল্টাপাল্টি এ অবস্থানের কারণে ইউরোপে জ্বালানি গ্যাসের সরবরাহ নিয়ে নতুন সংকটের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

ইউক্রেনে হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাদের ব্যাপক নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েছে রাশিয়া। ডলার ও ইউরোতে লেনদেন কঠিন হয়ে পড়েছে তাদের জন্য। এমন পরিস্থিতিতে রাশিয়া দাবি করেছে, ‘বন্ধু সুলভ নয়’ এমন দেশগুলোকে ইউরো নয়, অবশ্যই রুবলে গ্যাসের মূল্য পরিশোধ করতে হবে।

ভাষণে পুতিন বলেছেন, বন্ধুসুলভ নয় এমন দেশগুলোকে রাশিয়ার কাছ থেকে কেনা গ্যাসের মূল্য রুশ মুদ্রা রুবলে পরিশোধ করতে হবে। শুক্রবার থেকে ইউরো বা ডলারের বদলে রুবলে গ্যাসের মূল্য পরিশোধ না করলে সরবরাহ বন্ধের বিষয়টি বিবেচনা করবে রাশিয়া।

টেলিভিশনে ভাষণ প্রচার হওয়ার আগে পুতিন একটি ডিক্রিতে স্বাক্ষর করেছেন। এ ডিক্রিতে শুক্রবার থেকে বিদেশী ক্রেতাদের রুশ গ্যাসের মূল্য রুবলে পরিশোধের কথা বলা হয়েছে।

পুতিন বলেন, রাশিয়ার গ্যাস কিনতে হলে রুশ ব্যাংকে রুবলে অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। ১ এপ্রিল থেকে এ অ্যাকাউন্টগুলো দিয়েই গ্যাসের মূল্য পরিশোধ করতে হবে। যদি এভাবে মূল্য পরিশোধ করা না হয় তাহলে ক্রেতারা তাদের বাধ্যবাধকতা মানছে বলে আমরা বিবেচনা করব।

তিনি হুমকি দিয়ে বলেছেন, যদি রুবলে মূল্য পরিশোধ করা না হয় তাহলে চুক্তি স্থগিত করা হতে পারে।

রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, কেউ কোনো কিছু আমাদের বিনামূল্যে দেয় না। আমরাও বিনামূল্যে কিছু দিতে যাব না। এমনটি না হলে চলমান চুক্তি স্থগিত করা হবে। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাকে রাশিয়ার ‘মুক্তি ও স্বাধীনতা’র মূল্য হিসেবে উল্লেখ করেছেন তিনি।

এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস বলেছেন, চুক্তি অনুসারে ডলার ও ইউরোতে গ্যাস পরিশোধের বিষয়ে পুতিনকে শ্রদ্ধা দেখাতে হবে। চুক্তি অনুসারে বেশিরভাগ সময় মূল্য ইউরোতে পরিশোধের কথা বলা হয়েছে। মাঝে মধ্যে ডলারেও পরিশোধ করা যাবে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনায় আমি জানিয়েছি, এ ব্যবস্থাতেই আমরা থাকতে চাই।

এক সংবাদ সম্মেলনে জার্মান অর্থমন্ত্রী রবার্ট হাবেক জানান, পুতিনের জারি করা ডিক্রি এখনও তিনি দেখতে পাননি। রুশ গ্যাসের সরবরাহ বন্ধ হওয়াসহ সবকিছুর জন্য জার্মানি প্রস্তুত রয়েছে। কাল হয়ত এমন পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে যেখানে আমাদের কাছে কোনও রুশ গ্যাস নেই।

ফরাসি অর্থমন্ত্রী ব্রুনো লি মায়রি বলেছেন, রাশিয়ার দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে ফ্রান্স ও জার্মানি। গ্যাসের মূল্য পরিশোধকে হাতিয়ার বানিয়ে পশ্চিমা মিত্রদের বিভক্ত করার চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। রাশিয়ার কাছে ব্ল্যাকমেইলে শিকার হবে না বলে পশ্চিমারা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।

এর আগে গত ২৩ মার্চ এক ঘোষণায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, রাশিয়া তার ব্যবসায়িক অংশীদারদের আগের মতোই গ্যাস সরবরাহ করে যাবে। আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাসের যে দাম, সেই দামেই গ্যাস বিক্রি করবে রাশিয়া। তবে যেসব বিদেশী ক্রেতা রাশিয়ার গ্যাস কিনতে আগ্রহী, তাদেরকে গ্যাসের বিনিময়মূল্য পরিশোধ করতে হবে রুশ মুদ্রা রুবলে। এক্ষেত্রে গ্যাস কেনার আগে বিদেশী ক্রেতাদের রাশিয়ার মুদ্রাবাজার থেকে প্রথমে রুবল কিনতে হবে। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবারের ভাষণে এ বিষয়ে রাশিয়ার অবস্থান ফের স্পষ্ট করলেন পুতিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *