বাজেট বরাদ্দে প্রয়োজনীয়তার চেয়ে রাজনীতি বেশি গুরুত্ব পায় : পরিকল্পনামন্ত্রী
পুরো আলোচনায় বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ী, অর্থনীতিদ ও হিসাববিদরা রাজস্ব ব্যবস্থার সংস্কার, কর্পোরেট কর কমিয়ে আনা, করোনা প্রভাব মোকাবেলা এবং রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষিতে সৃষ্টি হওয়া নতুন বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে করণীয়, এলডিসি উত্তরণ পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার প্রস্তুতি, এসএমই খাতের বিকাশ, সরকারি ব্যয়ের সুষ্ঠু ব্যবহার, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাজেট বরাদ্দ দেওয়াসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
এসব আলোচনার প্রেক্ষিতে পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সংস্কার খুবই জরুরি। অনুৎপাদনশীল খাতে সরকারি বরাদ্দ দেওয়া অন্যায়। তিনি বলেন, অনেক সমস্যার মধ্যেও বর্তমান সরকার গত ১০ বছরে লক্ষ্যমান, দৃশ্যমান ও প্রত্যাশা অনুযায়ী উন্নয়ন করেছে। দেশে ব্যবসায়, পরিবেশে সমস্যা আছে। তবে বড় সমস্যা হচ্ছে একটি শ্রেণি বলছে- তারা নির্বাচনে যাবে না। নির্বাচনের পরিবেশ নেই। তারা খেলা ভন্ডুল করার প্রয়াশ থেকে এসব বলছে। এ ধরনের মতামতের বিষয়ে দেশের ব্যবসায়ী, সুশীল সমাজকে মতামত জানানোর আহ্বান জানান তিনি।
অনুষ্ঠানের শুরুতে বক্তব্য রাখেন আইসিএবি সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন। তিনি বলেন, দেশ এগোচ্ছে। তবে বৈষম্যও বাড়ছে। এর কারণ হচ্ছে পরোক্ষ কর। তিনি প্রত্যক্ষ কর ও অভ্যন্তরীণ ঋণের পরিবর্তে বৈদেশিক ঋণ সহায়তা ব্যবহার বাড়ানোর পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, স্বয়ংক্রীয় রাজস্ব ব্যবস্থা, করের অর্থের সঠিক ব্যবহার, সামাজিক সুরক্ষায় বরাদ্দ বাড়ানোসহ সুষ্ঠু বিতরণ ব্যবস্থার ওপর জোর দেন।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও ক্যাম্পেইন ফর পপুলার এডুকেশনের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে. চৌধহৃরী বলেন, বাজেট থেকে যে বিনিয়োগ হয় সেখানে সংস্কার দরকার। শিক্ষা খাতের জন্য পূর্নাঙ্গ বাজেট দিতে হবে। তিনি বলেন, জাতির জনক যুদ্ধবিধ্বস্ল দেশে প্রাথমিক শিক্ষাকে জাতীয়করণ করেছিলেন। তখন জিডিপি ছিলো ১৪ বিলিয়ন ডলার। বর্তমানে ৪০০ বিলিয়ন ডলারের জিডিপি নিয়ে মাধ্যমিক শিক্ষা কেন জাতীয়করণ হবে না।
পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, করোনা পরবর্তী পুনরুদ্ধার ভালো হচ্ছে। তবে বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সুচিন্তিত পদক্ষেপ দরকার। আমদানি ব্যয় বেড়েছে। এখন রিজার্ভ খরচের বিষয়ে সতর্ক হতে হবে। এখন সুদহারে সর্বোচ্চ সীমা রাখা ঠিক হবে না। তিনি কর নীতি ও কর প্রশাসনকে আলাদা করা, এসএমই খাতের বিকাশের জন্য গ্যারান্টি স্কিম বাড়ানো, ভ্যাট আইন সংস্কারের প্রস্লাব করেন।
এমসিসিআই সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, করোনার কারণে গত দুই বছর পরিকল্পনা অনুযায়ী অনেক কাজ করা সম্ভব হয়নি। ফলে অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা পুনঃমূল্যায়ন করা দরকার। কারণ এই পরিকল্পনা যখন করা হয়েছিলো তখন করোনা, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ ছিলো না। তিনি কর্পোরেট কর কমানো ও সকল রপ্তানি খাতে সমান সুবিধা দেওয়ার প্রস্লাব করেন।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম বলেন, আগামী অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ৩০ শতাংশের বেশি ধরা ঠিক হবে না।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান বলেন, খাদ্য উৎপাদন যাতে ব্যহত না হয় সে উদ্যোগ দরকার। পাশাপাশি পেট্রোলিয়াম পণ্যের দাম এমনভাবে সমন্বয় করতে হবে যাতে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী সমস্যায় না পড়েন।
ঢাকা ই-ক্যাব সভাপতি শমী কায়সার ই-কমার্স খাতে কর কমানো ও দক্ষতা উন্নোয়নের প্রস্লাব করেন।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন আইসিএবির সাবেক সভাপতি হুমায়ুন কবির। তিনি বলেন, শিল্প খাতের অর্থায়নের অতিমাত্রায় ব্যাংক নির্ভরতা কমাতে পুজিবাজার ও বন্ড বাজারকে উন্নত করতে হবে। এছাড়া আইসিএবির সিইও শুভাশীষ বসু, ইআরএফ সভাপতি শারমীন রিনভী ও সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলাম অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।