৫ হাজার কোটি ডলারের সেমিকন্ডাক্টর বিল অনুমোদন মার্কিন সিনেটে

স্টাফ রিপোর্টার

সেমিকন্ডাক্টর খাত সম্প্রসারণ ও ভর্তুকিতে ৫ হাজার ২০০ কোটি ডলারের বিল অনুমোদন করেছে মার্কিন সিনেট। কয়েক মাস ধরে আলোচনা-সমালোচনা ও বিতর্কের পর বিলটি অনুমোদন দিল উচ্চকক্ষ। উভয় কক্ষে আরেক দফা আপসরফা শেষে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের টেবিলে পাঠানো হবে। প্রেসিডেন্ট এতে স্বাক্ষর দিলে বিলটি আইনে পরিণত হবে। খবর রয়টার্স।

সোমবার সিনেটে ৬৮-২৮ ভোটে বিলটি পাস হয়। এখন বিলটি ফের প্রতিনিধি পরিষদে পাঠানো হবে এবং কনফারেন্স হিসেবে পরিচিত এক ধরনের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়ায় বিতর্ক করবেন আইনপ্রণেতারা। দুই দলের আইনপ্রণেতারা নিজেদের মধ্যে আপসরফার চেষ্টা করবেন এবং বিলটি ফের সিনেটে ভোটাভুটির জন্য পাঠানো হবে।

সিনেটে সেমিকন্ডাক্টর বিলটি পাস হওয়া নিয়ে হোয়াইট হাউজ মুখপাত্র জেন সাকি বলেন, আমাদের সরবরাহ চেইনকে শক্তিশালী করা, আমেরিকায় নিজস্ব পণ্য তৈরি, সামনের দশকগুলোয় চীন ও অন্যান্য দেশকে টেক্কা দিতে বিলটি ভূমিকা রাখবে। আমরা আশা করছি প্রতিনিধি পরিষদ শিগগিরই বিলটি নিয়ে আনুষ্ঠানিক কনফারেন্স শুরু করবে।

ডেমোক্র্যাট এক আইনপ্রণেতার সহকারী জানান, শিগগিরই প্রতিনিধি পরিষদে কনফারেন্স হবে এবং চলতি সপ্তাহের শেষের দিকেই সিনেটে ফের পাঠানো হবে বিলটি। গ্রীষ্মের মধ্যেই বিলটি চূড়ান্ত অনুমোদন পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সিনেটে বিলটি নিয়ে ভোটাভুটির আগে গত ফেব্রুয়ারিতে প্রতিনিধি পরিষদেও ভোটাভুটি হয়েছে। কংগ্রেস সেশনে ২২২-২১০ ভোটে অনুমোদন পেয়েছিল কমপিটস অ্যাক্টটি। চায়না কম্পিটিশন বিল হিসেবে পরিচিত বিলটি আইনে পরিণত হলে নতুন ভর্তুকি পাবে যুক্তরাষ্ট্রের সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্প।

যুক্তরাষ্ট্রের সেমিকন্ডাক্টর খাত শক্তিশালী করতে ৫ হাজার ২০০ কোটি ডলার সরবরাহের প্রস্তাব রয়েছে দ্য কমপিটস অ্যাক্টে। এর মধ্যে ৩ হাজার ৯০০ কোটি ডলার ভর্তুকি যাবে সরাসরি নতুন ফ্যাব্রিকেশন ফ্যাসিলিটিতে। যেসব কোম্পানি এ ভর্তুকি পেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে, তারা এরই মধ্যে কারখানা কার্যক্রম চালাচ্ছে। অ্যারিজোনায় ১ হাজার ২০০ কোটি ডলার ব্যয়ে ফাউন্ড্রি নির্মাণ করছে টিএসএমসি। এ কারখানায় চিপ নির্মাণ শুরু হবে ২০২৪ সালে। এদিকে ওহাইওতে ২ হাজার কোটি ডলার ব্যয়ে ফাউন্ড্রি কারখানা নির্মাণ শুরু করেছে ইন্টেল।

১৯৯০-এর দশকের শুরুতে বৈশ্বিক চিপ বাজারে যুক্তরাষ্ট্রের বাজার হিস্যা ছিল ৩৭ শতাংশ। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় তা ১২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। বৈশ্বিক চিপ উৎপাদনের ৭৫ শতাংশ হিস্যা এখন পূর্ব এশিয়ার। সবচেয়ে অগ্রসর চিপের ৯০ শতাংশ তৈরি হচ্ছে তাইওয়ানে। করোনা পরিস্থিতিতে সরবরাহ চেইন সংকট ও তাইওয়ান নিয়ে চীনের পলিসি যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই চিপ নির্মাণে সক্ষমতা বৃদ্ধির ওপর জোর দিচ্ছেন।

সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্সের মতো কিছু রাজনীতিবিদ অবশ্য চিপ নির্মাতা কোম্পানিকে ভর্তুকির বিরোধিতা করছেন। তাদের যুক্তি সেমিকন্ডাক্টর শিল্প এমনিতেই বেশ লাভজনক। সেখানে রাষ্ট্রীয় সহায়তার প্রয়োজন নেই।

এদিকে বাণিজ্যমন্ত্রী জিনা রাইমন্ডো বলেন, এশিয়ার তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রে সেমিকন্ডাক্টর কারখানা স্থাপন অনেক ব্যয়বহুল। যুক্তরাষ্ট্রে কারখানা স্থাপনে চিপ নির্মাতাদের আকর্ষণ করতে চাইলে তাদের ভর্তুকি দিতে হবে। চিপ সংকট এখন শুধু অর্থনৈতিক ইস্যু নয়, বরং এটা জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যু। সামরিক উপকরণ, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) অ্যাপ্লিকেশনের জন্য হাই-টেক চিপ প্রয়োজনীয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *