৪৫ কোটি ডলার ছাড়ানোর সম্ভাবনা চিংড়ি রফতানি

স্টাফ রিপোর্টার

সর্বশেষ অর্থবছরে হিমায়িত চিংড়ি রফতানি থেকে আয় হয়েছিল ৩২ কোটি ডলার। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্ব্বর) রফতানি থেকে আয় হয়েছে ২৬ কোটি ৮৯ লাখ ৫০ হাজার ডলার, যা ২০২০-২১ অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১৯ কোটি ৪৫ লাখ ৬০ হাজার ডলার। তবে অর্থবছর শেষে চিংড়ি রফতানি ৪৫ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে বলে আশা করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) ও বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফিশ এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএফইএ) তথ্যমতে, বাংলাদেশ থেকে রফতানি হওয়া হিমায়িত চিংড়ির ৮৫ ভাগ যায় ইউরোপে। আর ১৫ ভাগ আমেরিকাসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসেই চিংড়ি রফতানির মাধ্যমে আয় বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৩৯ শতাংশ। চলতি অর্থবছর শেষে ৪৫ কোটি ডলার ছাড়ালে রফতানি আয় ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। এক অর্থবছরের মধ্যে এ ধরনের প্রবৃদ্ধি সাম্প্রতিক সময়ে খুব কম হয়েছে।

গত মঙ্গলবার রাতে রাজধানীতে অনুষ্ঠিত একটি সেমিনারে দেশের চিংড়ি রফতানির সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ বিষয়ে তথ্য উঠে আসে। বাংলাদেশ শ্রিম্প অ্যান্ড ফিশ ফাউন্ডেশনের (বিএসএফএফ) আয়োজনে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত।

‘পজিশনিং বাংলাদেশ ব্ল্যাক টাইগার শ্রিম্প অ্যাজ প্রিমিয়াম ন্যাচারাল টাইগার শ্রিম্প ইন দ্য ইন্টারন্যাশনাল মার্কেট’ শীর্ষক এ সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী। এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান এএইচএম আহসান। আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গ্লোবাল সিফুড অ্যালায়েন্সের সভাপতি জর্জ চেম্বারলিন। সভাপতিত্ব করেন বিএসএফএফের চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহমুদুল হক।

সেমিনারে ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান এএইচএম আহসান বলেন, চিংড়ি রফতানির ধারা বেশ উন্নতি দেখা যাচ্ছে। চলতি অর্থবছরে এ রফতানি ৪৫ কোটি ডলারের বেশি হতে পারে। বৈশ্বিক চাহিদা ও দেশের জোগান পরিস্থিতি ভালো হলে ৫০ কোটি ডলার হতে পারে। গত কয়েক বছর ধরেই এ খাতে চলমান অস্থিরতার মধ্যে চলতি অর্থবছরে আশার আলো দেখাচ্ছে।

আলোচনায় অংশ নিয়ে এসিআই এগ্রিবিজনেসের প্রেসিডেন্ট ড. ফা হ আনসারী বলেন, সামনের দিনে চিংড়ি রফতানির মাধ্যমে এক বিলিয়ন ডলার আয় করা সম্ভব। এটি করতে হলে কৃষি খাতের পণ্য হিসেবে রফতানি প্রণোদনার বৈষম্য দূর করতে হবে। পাট কিংবা প্রক্রিয়াজাত পণ্যের রফতানিতে ভর্তুকি ২০ শতাংশ পর্যন্ত দেয়া হচ্ছে। কিন্তু চিংড়ি রফতানিতে ভর্তুকি মাত্র ১০ শতাংশ। ফলে এ খাতের উন্নয়ন ও মৎস্যচাষীদের উন্নয়নে ভর্তুকির পরিমাণ বাড়াতে হবে।

সৈয়দ মাহমুদুল হক বলেন, বিশ্ববাজারে এখন ৯৫ শতাংশই ভেনামি চিংড়ি। অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে রফতানি হচ্ছে ৯৫ শতাংশই বাগদা চিংড়ি। ভেনামি চাষে উৎপাদন খরচ ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ কম হয়। ভেনামি চিংড়ি বাংলাদেশে এখনো উৎপাদন হয় না। তাই কম উৎপাদনশীল গলদা ও বাগদা চিংড়ি দিয়ে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন। এ অবস্থায় বিশ্ববাজারে ভেনামি চিংড়ি সরবরাহ বৃদ্ধি করতে উদ্যোগ প্রয়োজন। এছাড়া বাগদা চিংড়ির স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যকে বিবেচনায় নিয়ে এটিকে নতুনভাবে ব্র্যান্ডিং প্রয়োজন। যাতে প্রিমিয়াম দামে আমরা রফতানি করতে পারি। তাহলে দেশের স্বার্থ রক্ষা ছাড়াও খামারিদের বাড়তি দাম দেয়া সম্ভব হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *