ঊর্ধ্বমুখী জাপানের বাণিজ্য ঘাটতি
কভিডের বিপর্যস্ত অবস্থা কাটিয়ে পুনরুদ্ধার হচ্ছে জাপানের অর্থনীতি। কভিডজনিত বিধিনিষেধ শিথিলে বেড়ে গিয়েছে ভোক্তা চাহিদা। সে অনুযায়ী বাড়াতে হয়েছে আমদানি। পাশাপাশি বিশ্ববাজারে জ্বালানি পণ্যের উচ্চমূল্য বাড়িয়ে দিয়েছে আমদানি ব্যয়। ফলে গত মাসে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ার হার প্রত্যাশাকেও ছাড়িয়ে গিয়েছে। সরবরাহ ব্যবস্থার বাধা এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ক্রমবর্ধমান অনিশ্চয়তার মধ্যে এ পরিসংখ্যানকে উদ্বেগজনক বলছেন অর্থনীতিবিদরা।
কিয়োদো নিউজের খবরে বলা হয়েছে, জ্বালানির উচ্চ দাম ফেব্রুয়ারিতে জাপানের আমদানি ব্যয় বাড়িয়ে দিয়েছে। যদিও চীনগামী চালান পুনরুদ্ধার সত্ত্বেও প্রত্যাশার তুলনায় পিছিয়ে রয়েছে রফতানি। ফলে গত মাসে দেশটির পণ্য বাণিজ্য ঘাটতি ৬৬ হাজার ৮৩০ কোটি ইয়েনে (৫৬০ কোটি ডলার) পৌঁছেছে। এ নিয়ে টানা সপ্তম মাসের মতো দেশটির বাণিজ্য ঘাটতি ঊর্ধ্বমুখী।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুসারে, ফেব্রুয়ারিতে জাপানের আমদানি ব্যয় ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি ইয়েনে পৌঁছেছে। আমদানি ব্যয়ের এ পরিমাণ আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৪ শতাংশ বেশি। এ নিয়ে টানা ১৩তম মাসের মতো আমদানি ব্যয় ঊর্ধ্বমুখী। এ সময়ে বিশেষ করে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল এবং অস্ট্রেলিয়া থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস কেনা আরো ব্যয়বহুল ছিল।
গত মাসে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি ব্যয় ৯৩ দশমিক ২ শতাংশ বেড়ে ৮০ হাজার ৮৬০ কোটি ইয়েনে পৌঁছেছে। ডলারের বিপরীতে ইয়েনের অবমূল্যায়ন ও ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধ এ ব্যয় বাড়িয়ে তুলতে সহায়তা করেছে। তবে মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন শুরু হওয়ায় এটি আমদানি ব্যয়ের ওপর ঠিক কতটা প্রভাব ফেলে তা বলা কঠিন। জাপানের অর্থনীতিতে ইউক্রেন সংকটের প্রভাব আমরা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করব।
এদিকে এ সময়ে দেশটির রফতানি আয় ৭ লাখ ২০ হাজার কোটি ইয়েনে পৌঁছেছে। এ আয়ের পরিমাণ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৯ দশমিক ১ শতাংশ বেশি। অস্ট্রেলিয়ায় হালকা অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের জোরালো চাহিদার কারণে টানা ১২তম মাসের মতো রফতানি আয় ঊর্ধ্বমুখী। দক্ষিণ কোরিয়ায় লোহা ও ইস্পাত পণ্যের চালান এবং যুক্তরাষ্ট্রে গাড়ি রফতানিও রফতানি বাড়াতে অবদান রেখেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, গত মাসে ঋতুগতভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ রফতানি আয় আগের মাসের তুলনায় দশমিক ৫ শতাংশ কমেছে এবং আমদানি ব্যয় বেড়েছে ২ দশমিক ৭ শতাংশ।
মিজুহো রিসার্চ অ্যান্ড টেকনোলজিস লিমিটেডের অর্থনীতিবিদ দাইচি কাওয়াবাতা বলেন, বছরের পর বছর জাপানির রফতানি প্রসারিত হয়েছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বাড়ার এ গতি শ্লথ হয়েছে। চিপ ঘাটতির কারণে গাড়ি রফতানিও ধীর রয়ে গিয়েছে। পাশাপাশি উচ্চ কাঁচামাল ব্যয় বাণিজ্য ভারসাম্যে আরো আঘাত নিয়ে এসেছে। ইউক্রেন সংকটের কারণে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম আরো বাড়তে পারে কিংবা উচ্চ পর্যায়ে থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে। ফলে আগামীতে বাণিজ্য ঘাটতি আরো বাড়ার আশঙ্কা।
ফেব্রুয়ারিতে জাপানের অটোমোবাইল রফতানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৮ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়েছে। যেখানে ১ শতাংশ হ্রাস এবং ডিসেম্বরে ১৭ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়েছিল।
অঞ্চল অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রে জাপানি পণ্যের রফতানি ১৬ শতাংশ বেড়ে ১ লাখ ৩০ হাজার কোটি ইয়েনে পৌঁছেছে। গাড়ি ও কোরোসিন রফতানি এ বৃদ্ধিতে অবদান রেখেছে। অন্যদিকে ভুট্টা ও অন্যান্য শস্যের দাম বাড়ায় বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি থেকে আমদানি ৪৮ দশমিক ৯ শতাংশ বেড়ে ৮৬ হাজার ৪৭০ কোটি ইয়েনে পৌঁছেছে। এছাড়া বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার চীনে গত মাসে ১ লাখ ৫০ হাজার কোটি ইয়েন মূল্যের পণ্য রফতানি করেছে জাপান। এটি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৫ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে চীন থেকে আমদানি ৫ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়ে ১ লাখ ৫০ হাজার কোটি ইয়েনে দাঁড়িয়েছে।