এনআরবিসি ব্যাংকে কর্মসংস্থান বেড়েছে ১০ গুণ

স্টাফ রিপোর্টার

নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের মাধ্যমে শুধু এনআরবিসি ব্যাংকের চাকরি করছেন প্রায় ছয় হাজার মানুষ। ২০১৭ সালে যা ছিল মাত্র ৬১৭ জন। চার বছরের ব্যবধানে ব্যাংকটিতে কর্মসংস্থান বেড়েছে ১০ গুণ।

মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) সন্ধ্যায় এনআরবিসি ব্যাংক থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চতুর্থ প্রজন্মের এনআরবিসি ব্যাংক এগিয়ে চলছে সাফল্যের ধারায়। ২০১৭ সালের আগের ক্ষত কাটিয়ে প্রতিবছরই উন্নতির ধারায় রয়েছে। ব্যাংকটির লক্ষ্য ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ গড়া। ঘরে বসেই মানুষের কর্মসংস্থান এ ব্যাংকের কার্যক্রমের মূল লক্ষ্য। এজন্য প্রত্যন্ত অঞ্চলে সেবা নিয়ে যাচ্ছে ব্যাংকটি।

২০১৩ সালে নয়টি ব্যাংক অনুমোদনের পর দুইটি ব্যাংক শুরুতেই নানা অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ে বন্ধের উপক্রম হয় জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ব্যাংকগুলোর মধ্যে একটি নাম পরিবর্তন করেও ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। কিন্তু সেই সংকট মুহূর্তে এনআরবিসি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের পরিবর্তন করা হয়। এস এম পারভেজ তমাল ২০১৭ সালের ১০ ডিসেম্বর ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেন। মাত্র পাঁচ বছরের ব্যবধানে ব্যাংকটি এখন অন্যান্য ব্যাংকগুলোর কাছে সাফল্যের অনুকরণীয় মাইলফলক। এটি সম্ভব হয়েছে পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের ঐকমত ও উন্নয়নমুখী নীতি পরিকল্পনার জন্য। যেটি ম্যানেজমেন্ট কর্তৃপক্ষ যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করছে। এ ব্যাংক পরিবার সরকারের উন্নয়ননীতির সঙ্গে একাত্ব হয়ে দেশের মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করছে। ব্যাংকের সব পরিচালকরা আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এনআরবিসি ব্যাংকের উদ্যোক্তারা সবাই প্রবাসী। উদ্যোক্তাদের স্বপ্ন ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্রমুক্ত সমাজ গঠনে ব্যাংকিং করা। এনআরবিসি ব্যাংকই প্রথম যে ১২ বছর পর পুঁজিবাজারে নিবন্ধিত হয়ে অন্য ব্যাংকগুলোকে পথ দেখিয়েছে। উদ্যোক্তাদের নির্দেশনা অনুসারে ঠিকভাবে ব্যাংকটির পরিচালনা করছেন ব্যাংকটির এমডি গোলাম আউলিয়া।

পরিচালনা পর্ষদ ও ম্যানেজমেন্টের মধ্যে যথাযথ সমন্বয় থাকায় গত কয়েক বছরে প্রতিটি আর্থিক সূচকে ব্যাংকের অভূতপূর্ব অগ্রগতি হয়েছে উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০১৭ সালে ব্যাংকের ব্যালেন্সশিটের আকার ছিল সাত হাজার ৪১২ কোটি। দ্বিগুণ বেড়ে ২০২১ সাল শেষে তা দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৩৮৪.২৬ কোটি টাকা। ব্যাংকটি সরকারের কোষাগারে ২০১৭ সালে রাজস্ব দেয় ১১২ কোটি টাকা, যা ২০২১ দিয়েছে ২০২ কোটি টাকা। বর্তমান চেয়ারম্যান এসএম পারভেজ তমাল দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অর্থনৈতিক নির্দেশ বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন। বর্তমান সরকারের বিভিন্ন মেগাপ্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে এনআরবিসি ব্যাংক। এছাড়া, সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় বয়স্কভাতা, বিধবাভাতাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে এ ব্যাংক। চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের প্রশিক্ষিত বেকার যুবকদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে সহজ শর্তে ঋণ সহায়তা দিচ্ছে এনআরবিসি ব্যাংক। পরিচালনা পর্ষদের নেতৃত্বে সাধারণ মানুষকে ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দিতে নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করেছে। শাখা ও উপশাখা মিলে ব্যাংকের সেবাকেন্দ্রের সংখ্যা এখন ৭৫০টি। এরমধ্যে পূর্ণাঙ্গ শাখার সংখ্যা ৯৩টি। ব্যাংকিং সেক্টরে প্রথম ব্যাংক হিসেবে উপশাখাভিত্তিক ব্যাংকিং ব্যবস্থার প্রবর্তন করেন চেয়ারম্যান পারভেজ তমাল। এছাড়া, সরকারের রাজস্ব আদায়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিতে এনআরবিসি ব্যাংক বিআরটিএর ফি আদায়ের পাশাপাশি জমি রেজিস্ট্রেশনের ফিও আদায় করছে।

এছাড়া, আর্থিক অন্তর্ভুক্তিমূলক (ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন) কার্যক্রমে সাফল্য দেখিয়েছে এনআরবিসি ব্যাংক। ৫৭৬টি এজেন্ট পয়েন্টের মাধ্যমে ব্যাংকিং সুবিধা-বঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে বিভিন্ন ধরনের আধুনিক প্রযুক্তিভিত্তিক ব্যাংকিং সেবা দিয়ে যাচ্ছে। এজেন্ট পয়েন্টের মাধ্যমে প্রান্তিক পর্যায়ে প্রায় এক লাখ ৫৪ হাজার ৭৭৬ জন সেবা নিচ্ছে। দেশের বেকার সমস্যার সমাধানে এনআরবিসি ব্যাংক যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করছে। ব্যাংকের সেবাকেন্দ্রেগুলোতে কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় পাঁচ হাজার ৯২৬ যার মধ্যে স্থায়ী দুই হাজার ১০০ ও চুক্তিভিত্তিক জনবল এক হাজার ৬১৯। সিকিউরিটি গার্ড ও সাপোর্ট স্টাফের সংখ্যা প্রায় দুই হাজার ২০৭ জন। এর মধ্যে প্রায় ৩৬ শতাংশই নারী। ফলে নারীদের অংশগ্রহণমূলক নেতৃত্ব নিশ্চিত করছে ব্যাংকটি।

ব্যাংকের চেয়ারম্যান এসএম পারভেজ তমাল বলেন, আমরা চাই প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ তার ঘরে বসে কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবেন। এজন্য আমরা ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে বিশেষভাবে কাজ করছি। গ্রামের কর্মসংস্থান, নতুন উদ্যোক্তা, নারী উদ্যোক্তা, কৃষি উন্নয়ন ঘটিয়ে সরকারের গ্রামকে শহরায়ন কর্মসূচিকে সফল করতে চেষ্টা করছি। গ্রামের মানুষকে সুদের জালে না আটকিয়ে সর্বনিন্ম সুদে তাদের আর্থিক অবস্থার উন্নয়ন করতে কাজ করছে এ ব্যাংক। এজন্য আমরা চেষ্টা করছি তথ্যপ্রযুক্তিকে কাজ লাগিয়ে স্বল্প ব্যয়ে সব মানুষের কাছে ব্যাংকিং সেবা পৌঁছানোর। এ কাজে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহযোগিতা প্রয়োজন।

ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) গোলাম আউলিয়া বলেন, পরিচালনা পর্ষদের কার্যকরী নীতিমালার আলোকে আমরা ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছি। উপশাখা ব্যাংকিং ও পার্টনারশিপ ব্যাংকিং নতুন ধারণা। এরভিত্তিতে আমরা গ্রাম-বাংলায় মানুষদের সেবা দিচ্ছি। গ্রামীন অর্থনীতির উন্নয়নের যুগোপযোগী বিশেষ ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্প চালু করা হয়েছে। মাত্র নয় শতাংশ সুদে ঋণ পাচ্ছেন গ্রামের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষেরা। গত বছরের ২৮ মার্চ এ প্রকল্প চালু করা হয়। এরইমধ্যে ১১ হাজার গ্রাহককে এ ঋণ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। তারা ঋণ পেয়েছেন ৪০৮ কোটি টাকা। ব্যাংকটি প্রতিদিন গড়ে ২০০ জনকে ক্ষুদ্র ঋণের আওতায় নিয়ে আসছে। ৪৫টি জেলার মানুষ ঋণ সুবিধা পেয়েছেন। এ বছরের মধ্যে সব জেলায় ঋণ কার্যক্রম ছড়িয়ে দেওয়া হবে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের বেকারত্ব দূর করতে নতুন উদ্যোক্তাদের মধ্যে ঋণ বিতরণের বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে কমপক্ষে ৫০ হাজার প্রশিক্ষিত তরুণকে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়ার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এ কর্মসূচির আওতায় যুবকদের চার থেকে নয় শতাংশ সুদে ঋণ দেওয়া হবে।

২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে আমানতের পরিমাণ ২৭ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ১০৫ কোটি টাকা। আগের বছর যা ছিল ৯ হাজার ৫৩২ কোটি টাকা। ঋণ বিতরণ ৭ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১০ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। ঋণ বিতরণ বৃদ্ধির হার ৩৭ শতাংশেরও বেশি। রেমিটেন্স সংগ্রহ ১৮৫ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ১২ কোটি ৪১ লাখ ডলার। আমদানি বেড়েছে ৩৮ শতাংশ। ২০২১ সালে এ ব্যাংকের মাধ্যমে আমদানি হয়েছে ৪৯ কোটি ৭১ লাখ ডলারের পণ্য। আর রপ্তানি আয় সাড়ে ৬ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৩৬ কোটি ৫৮ লাখ ডলার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *