করোনা পরীক্ষায় পাশ করেছে মোবাইল আর্থিক সেবা : ড. আতিউর রহমান
“এক দশক আগে যখন বাংলাদেশে মোবাইল আর্থিক সেবা তথা এমএফএস-এর যাত্রা শুরু করেছিলাম তখন প্রান্তে বসবাসকারি নিম্ন আয়শ্রেণীর মানুষের কাছে সুলভে সহজ ডিজিটাল আর্থিক সেবা পৌঁছানোই প্রধানতম লক্ষ্য ছিল। কিন্তু করোনাকালে দেখেছি, মহানগরি থেকে প্রত্যন্ত চরাঞ্চলে সর্বত্রই নিম্ন আয়শ্রেণীর মানুষ এমএফএস-এর সুবিধা ভোগ করেছেন। সে বিবেচনায় বলা যায় যে এমএফএস ‘করোনার পরীক্ষায় পাশ’ করেছে।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান শনিবার (১২ মার্চ ২০২২) ঢাকায় উন্নয়ন সমন্বয় এবং নলেজ অ্যালায়েন্সের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘এমএফএস-এর ১০ বছর: করোনা-পরবর্তি মাঠ-বাস্তবতা’ শিরোনামে সেমিনারে এ কথা বলেন।
বাংলাদেশে এমএফএস-এর দশ বছর পূর্তি উপলক্ষে চরাঞ্চলে প্রান্তিক মানুষের এমএফএস-এর ব্যবহার বিষয়ে পরিচালিত মাঠ-জরিপের ফলাফল তুলে ধরার জন্য এই সেমিনার আয়োজিত হয় উন্নয়ন সমন্বয় কার্যালয়ের খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ মিলনায়তনে।
আর্থিক সেবাদানকারি পেশাজীবী, এ খাতের গবেষক, শিক্ষার্থী, গণমাধ্যম কর্মীসহ অন্যান্য অংশীজনদের অংশগ্রহণে এই সেমিনারে প্যানেল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ও পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ. মনসুর, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক অসীম কুমার দাশগুপ্ত, এবং সমাজতাত্ত্বিক ও নলেজ অ্যালায়েন্সের প্রতিষ্ঠাতা খন্দকার সাখাওয়াত আলী।
মাঠজরিপ থেকে প্রাপ্ত ফলাফলে দেখা গেছে চরাঞ্চলের নিম্ন আয়শ্রেণীর মানুষের মাঝে করোনাকালে এমএফএস অ্যাকাউন্ট খোলার সংখ্যা ব্যাপক হারে বেড়েছে। সরকারি ভাতা/সহায়তা মোবাইল অ্যাকাউন্টে দেয়ার কারণেই এমনটি ঘটেছে। এর ফলে করোনাকালে এমএফএস-এর ওপর চরের মানুষের আস্থা উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বেড়েছে। এছাড়াও চরবাসী এমএফএস-এর খুটিনাটি বোঝার জন্য প্রধানত এমএফএস এজেন্টদের ওপর নির্ভরশীল। তবে মহানগর এবং জেলা-উপজেলা পর্যায়ে এজেন্ট নির্ভরতা ধারাবাহিকভাবে কমছে, কারণ গ্রাহকরা নিজেরাই অ্যাপ ব্যবহার করে মোবাইল আর্থিক সেবা নিচ্ছেন।
খন্দকার সাখাওয়াত আলী বলেন, অনেক দরিদ্র মানুষ কেবল সরকারি ভাতার জন্যই এমএফএস একাউন্ট খুলেছিলেন বলে বর্তমান মোট এমএফএস অ্যাকাউন্টের অর্ধকই অচল। তবে তাঁর মতে এটিকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখা উচিৎ এবং কিভাবে এই গ্রাহকদের অন্যান্য লেনদেনেও এমএফএস ব্যবহারে উৎসাহিত করা যায় তা নিয়ে ভাবা উচিৎ।
ড. আহসান এইচ. মনসুর তাঁর বক্তব্যে টাকা পাঠানো এবং উত্তোলনের পাশাপাশি অন্যান্য আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রেও এমএফএস-এর ব্যবহার উৎসাহিত করার ওপর জোর দেন। তাঁর মতে এমএফএস-এর যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে ‘ক্যাশলেস সোসাইটি’ প্রতিষ্ঠার দিকে এগিয়ে যাওয়া খুবই সম্ভব।
এ প্রসঙ্গে ড. আতিউর রহমান বলেন, ডিজিটাল ন্যানো লোন এবং ক্ষুদ্র সঞ্চয়ের মতো নতুন নতুন উদ্যোগ মোবাইল আর্থিক সেবায় যুক্ত হচ্ছে। এগুলো চরাঞ্চলের মতো প্রান্তিক এলাকাগুলোতে কার্যকরভাবে নিয়ে যাওয়াকে অগ্রাধিকার দেয়া দরকার।