কর্মক্ষেত্রে বাড়ছে নারীর অংশগ্রহণ সৌদি আরবে

স্টাফ রিপোর্টার

সৌদি আরবের সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংস্কারের অংশ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে ভিশন ২০৩০। এর মাধ্যমে দেশটির কর্মশক্তিতে প্রতিদিনই যুক্ত হচ্ছেন নারীরা। যে বিষয়টিকে সৌদি আরবের উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে দেখা হচ্ছে। নতুন ভিশন ঘোষণার পর কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বেড়ে হয়েছে ৩৩ শতাংশ। ২০১৬ সালেও যা ছিল মাত্র ১৯ শতাংশ। নিউইয়র্কভিত্তিক বৈশ্বিক মানবসম্পদ-বিষয়ক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান মারসারের করা টোটাল রিমিউনারেশন সার্ভে ২০২১-এ এসব তথ্য উঠে এসেছে। খবর আরব নিউজ।

মারসারের সৌদি আরবের অংশীদার নাজলা নাজম বলেন, এ সমীক্ষার মাধ্যমে সৌদি আরবের কর্মীদের সম্পর্কে বেশ ভালো ধারণা পাওয়া গিয়েছে। পাশাপাশি কোন খাত কেমন সুবিধা দেয়, কী পরিমাণ ক্ষতিপূরণ দেয় তাও পরিষ্কার হয়েছে। এসব তথ্য পরবর্তী সময়ে গ্রাহকসেবা ও সংগঠনের সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

ঐতিহ্যগতভাবে সৌদি আরবের নারী কর্মশক্তির সবচেয়ে বড় অংশ সরকারি, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষা খাতে কর্মরত। তবে সমীক্ষার বরাত দিয়ে নাজলা নাজম বলেন, সেসব দিন বদলাচ্ছে। নারীরা এখন তথ্যপ্রযুক্তি ও আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স সম্পর্কিত পেশাগুলো বেছে নিচ্ছেন। আবার ডাটা সায়েন্টিস্ট, সাইবার সিকিউরিটি, এভিয়েশন, পর্যটন ও বিনোদন খাতেও নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে।

এরই মধ্যে সৌদি আরবে বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ নারী রয়েছেন, যারা নিজ নিজ ক্ষেত্রে দারুণ সুপরিচিত। এদের মধ্যে রয়েছেন সৌদি ব্রিটিশ ব্যাংকের চেয়ারপারসন লুবনা ওলায়ান, সৌদি স্টক এক্সচেঞ্জ তাডাওয়ালের চেয়ারপারসন সারাহ আল সুহাইমি ও সাম্বা ফাইন্যান্সিয়াল গ্রুপের সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রানিয়া নাশার।

দেশটির আফরাহ আল ওথমান নামে এক নারী সম্প্রতি বেশ আলোচনায় এসেছেন। কারণ প্রথম আরব নারী হিসেবে তিনি মনুষ্যবিহীন সাবমেরিন গভীর সমুদ্রে পরিচালনা করেছেন। অন্যদিকে আরো ৩০ নারীকে মক্কা থেকে মদিনার পথে উচ্চগতির ট্রেন চালানোর জন্য প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।

সব মিলিয়ে মারসারের এ সমীক্ষায় সৌদি আরবের মোট কর্মশক্তিতে নারীদের অবস্থানের বিষয়টি বেশ ভালোভাবে উঠে এসেছে। সেখানে দেখা যায়, মানবসম্পদ বিভাগে নারীদের বেশ শক্তিশালী অংশগ্রহণ রয়েছে। এছাড়া প্রশাসনিক ও নির্বাহী পদগুলোয় রয়েছেন ১৭ শতাংশ নারী। আইন, বিপণন ও বিভিন্ন খাতের প্রশাসনিক পদগুলোতেও যুক্ত হচ্ছে নারীদের বড় একটি অংশ। এছাড়া সম্প্রতি কারিগরি খাতগুলোতেও নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। যদিও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে এখনো কেবল ৪ শতাংশ নারী কাজ করছেন। তবে এ সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে।

নাজলা নাজম বলেন, কোন খাতে কত শতাংশ নারী কাজ করছেন সেটি আমাদের জন্য বিবেচ্য নয়। আমরা দেখাতে চেয়েছি যে সৌদি আরবের কর্মক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ কী পরিমাণে বাড়ছে। জরিপে উঠে এসেছে যে দ্রুত সময়ের মধ্যে এ হার বেশ উল্লেখযোগ্য, যার অর্থ হলো নারীর জন্য কর্মক্ষেত্রের দুয়ার উন্মুক্ত হচ্ছে। নারী তার পূর্ণ সক্ষমতা কাজে লাগানোর সুযোগ পাচ্ছেন।

সমীক্ষায় দেখা গেছে, দেশটির অসংখ্য নারী নিজের ব্যবসা শুরু করছেন। ২০১৫ সালের তুলনায় নারী ব্যবসায়ীর নিবন্ধনের হার ১১৫ শতাংশ বেড়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ঘরে বসে খাবার সরবরাহ থেকে শুরু করে কাপড় সেলাইয়ের মতো ব্যবসাও, যার মাধ্যমে কর্মসংস্থান হচ্ছে হাজারো কর্মীর। অবশ্য সৌদি আরবের নারীদের জন্য ব্যবসা নতুন নয়। আগে চাকরির সুযোগ না পেয়েও বহু নারী ব্যবসা করতেন। কিন্তু এখন তাদের সহায়তা করার জন্য, সমর্থন করার জন্য নতুন নতুন প্লাটফর্ম বা সুযোগ তৈরি হয়েছে। ফলে এখন অনেক বেশি নারী নিজের ব্যবসা শুরু করার বিষয়ে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নারীরা যেহেতু মোট জনসংখ্যার অর্ধেক, তাই অর্থনীতিতে তাদের অংশগ্রহণ ভিশন ২০৩০ অর্জনের গতি ত্বরান্বিত করবে, যা দেশের সার্বিক ভবিষ্যতের জন্যও মঙ্গলজনক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *